বয়সের ভারে ন্যুব্জ ৬৮ বছরের বৃদ্ধ আব্দুল জলিল আজ অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মুখোমুখি। ভোটার আইডি কার্ডে ভুলবশত বয়স ৩৮ বছর লেখা থাকায় তিনি সরকারি বয়স্ক ভাতা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার সাবেক ছিটমহল দাসিয়ারছড়া মধ্য সমন্বয়টারী গ্রামের এই বৃদ্ধ এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
নিঃস্ব ও অসহায় আব্দুল জলিল ক্ষণে ক্ষণে নিজের জাতীয় পরিচয়পত্র হাতে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে আকুতি জানান, “মোর আইডি কার্ড ঠিক করে দ্যাও বাহে! আইডি কার্ড ঠিক হলে মুই মোর বয়স্ক ভাতা পাইম, সেই টাকা দিয়া আমরা দুই স্বামী-স্ত্রী ভালোভাবে চলতে পারমো।”
শারীরিকভাবে দুর্বল আব্দুল জলিল সামান্য হাঁটাচলা করলেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অনেক সময় স্ত্রীর সহায়তা ছাড়া চলাফেরা করা তার পক্ষে সম্ভব হয় না। তার দুই ছেলে থাকলেও তারা নিজেদের সংসার নিয়ে ব্যস্ত, ফলে বৃদ্ধ দম্পতিকে বড় ছেলের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুল খালেক ও মকবুল মিয়া জানান, “আব্দুল জলিলের কোনো জমিজমা নেই। একসময় তিনি বয়স্ক ভাতা পেতেন, কিন্তু ভোটার আইডির ভুলের কারণে এখন আর পান না। দ্রুত আইডি সংশোধন করে তার বয়স্ক ভাতা পুনরায় চালু করা দরকার, যাতে তিনি স্ত্রীসহ ভালোভাবে বেঁচে থাকতে পারেন।”
আব্দুল জলিল বলেন, “আমার প্রকৃত বয়স ৬৮ বছরের বেশি, কিন্তু আইডি কার্ডে ৩৮ বছর লেখা হয়েছে। এই ভুলের কারণে আমার বয়স্ক ভাতা বন্ধ করে দিয়েছে । আমার কোনো সম্পদ নেই, কষ্টে বড় ছেলের বাড়িতে থাকছি। সরকার যদি আমার আইডি কার্ড ঠিক করে দিত, তাহলে ভাতা পেয়ে অন্তত শান্তিতে বাঁচতে পারতাম।”
তার স্ত্রীও একই রকম দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “বৃদ্ধ স্বামীকে নিয়ে খুব কষ্টে আছি। বয়স হয়েছে, কাজ করতে পারি না। স্বামীর বয়স্ক ভাতা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমাদের দুর্ভোগ আরও বেড়ে গেছে।”
বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন এ বিষয়ে বলেন, “আব্দুল জলিল খুবই দরিদ্র মানুষ। তার প্রকৃত বয়স ৬৮ বছরের বেশি হলেও আইডি কার্ডে ৩৮ বছর লেখা হয়েছে। আমি সরকার ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে অনুরোধ করবো, দ্রুত তার বয়স সংশোধন করে বয়স্ক ভাতা পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক।”
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে শুধুমাত্র জাতীয় পরিচয়পত্রের একটি ভুলের কারণে বৃদ্ধ আব্দুল জলিল আজ চরম দুঃখ-কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর যদি দ্রুত তার বয়স সংশোধনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়, তাহলে তিনি পুনরায় বয়স্ক ভাতা পেয়ে কিছুটা স্বস্তি পাবেন।
এ বিষয়ে ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মাহবুবা রহমান জানান, “ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্তির সময় তিনি ১৯৮৭ সালের একটি জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দিয়েছিলেন, যার ভিত্তিতেই তার বয়স ৩৮ বছর হয়েছে। এখন যদি তিনি তার প্রকৃত বয়স সংশোধন করে সঠিক জন্ম নিবন্ধন সনদ জমা দেন, তাহলে বিষয়টি যথাযথভাবে দেখা হবে।”