কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ফকিরপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠসংলগ্ন অবৈধ ইটভাটা (জে এম এস ব্রিকস) স্থানীয় পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করেছে। আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি এবং সাবেক জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও এমপি জাফর আলীর ভগ্নিপতি ওয়াহেদ আলীর মালিকানাধীন এই ইটভাটা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে পরিচালিত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা ইট পোড়ানোর ধোঁয়া ও ধুলার কারণে শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা এবং নানা স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে। বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী জানায়, “ধোঁয়ার কারণে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। চারপাশে এত ধুলাবালি যে পড়াশোনা তো দূরের কথা, গাছের ফলও ঠিকমতো ধরে না।”
একজন শিক্ষক জানান, “ইটভাটার কারণে শিক্ষার পরিবেশ ধ্বংস হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির কারণে তারা পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারছে না।”
২০১৯ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল বা গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন বাধ্যতামূলক। অথচ এই আইন লঙ্ঘন করে বিদ্যালয়ের পাশেই ভাটাটি চালু রাখা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্র জানায়, উপজেলায় ছয়টি ইটভাটার মধ্যে চারটির মালিকদের জরিমানা করা হয়েছে এবং একটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবে ওয়াহেদ আলীর ইটভাটাটি রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে এখনো অবাধে চালু রয়েছে।
ভাটায় উৎপাদিত নিম্নমানের ইট ওয়াহেদ আলীর নিজস্ব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সড়ক ও ব্রিজ নির্মাণে ব্যবহৃত হচ্ছে, যা নির্মাণকাজের স্থায়িত্ব কমিয়ে জননিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।
স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে প্রশাসন ওয়াহেদ আলীর অবৈধ কার্যক্রমের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
ইটভাটার ধোঁয়া ও দূষণের কারণে আশপাশের ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে এবং স্থানীয়রা শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। স্থানীয় চিকিৎসকদের মতে, ধোঁয়া ও দূষণের ফলে শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে।
ফুলবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেহেনুমা তারান্নুম বলেন, “আইন লঙ্ঘন করে স্থাপিত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে অভিযান চলছে। ইতোমধ্যে চারটি ইটভাটার মালিককে ছয় লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে এবং একটি বন্ধ করা হয়েছে। পরিবেশ সুরক্ষায় এ ধরনের অভিযান অব্যাহত থাকবে।”
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন, প্রশাসন কেন ওয়াহেদ আলীর ইটভাটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না?
জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষায় অবিলম্বে এই অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা মনে করেন, প্রশাসন যদি দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেয়, তাহলে এই সংকট সমাধান করা সম্ভব।