মিজানুর রহমান মজনু ছিলেন সাবেক রেলপথ মন্ত্রী ও রাজবাড়ী-২ আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মো: জিল্লুল হাকিমের বাড়ির কেয়ারটেকার। মন্ত্রীর বদৌলতে প্রথমে রাজবাড়ী জেলা পরিষদ সদস্য ও পরে কালুখালী উপজেলার মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হন।
পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে শুরু করেন টেন্ডার বাণিজ্য, বদলি বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, মনোনয়ন বাণিজ্য, প্রতিপক্ষের উপর হামলা, জবরদখল ও সরকারি সম্পত্তি লুটপাট। এভাবেই কোটিপতি বনে গেছেন। নামে-বেনামে রয়েছে তার অঢেল সম্পদ। ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর তিনি এলাকা থেকে পলাতক রয়েছেন।
জানা যায়, মজনুর হয়রানির শিকার হতে হয়েছে আওয়ামী লীগ নেতা, বিএনপি নেতা, সাংবাদিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের। এক গৃহবধূকে শ্লীলতাহানির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে মামলাও হয়। তার নেতৃত্বে ‘হাতুড়ি বাহিনী’র দাপটে এলাকা ছাড়াসহ পঙ্গুত্ব বরণ করতে হয়েছে অনেককে। দুই হাতে অর্থ কামিয়ে এখন তিনি শত কোটি টাকার মালিক।
নিজের বহুতল ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে জেলা পরিষদের যাত্রীছাউনি রাতের অন্ধকারে গুড়িয়ে দেওয়ার মতো অভিযোগ আছে মজনুর বিরুদ্ধে। এ ছাড়া জেলা পরিষদের জায়গায় নিজস্ব অফিসও নির্মাণ করেন তিনি। তার এতটাই ক্ষমতা ছিল যে, কেউ তার অপকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। তার হাতে নারী নির্যাতন, মদাপুরের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, নারী সদস্য বিউটি বেগম, সাংবাদিক আবুল কালাম আজাদ, ফাতেমা বেগমসহ অনেকেই চরম হয়রানি ও মারধরের শিকার হন।
কালুখালীর স্থানীয় বাসিন্দা হাজী শহিদ বলেন, মজনুর বাবার তেমন কোনো সম্পদ ছিল না। সামান্য মেম্বার ছিলেন। সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিমের বাড়ির কাজের লোকের মতো থাকতেন মজনু। মন্ত্রীপুত্র মিতুল হাকিমের ক্যাডার বাহিনীর মাধ্যমে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। পরে তাকে জেলা পরিষদ সদস্য ও মদাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বানানো হয়। চাঁদপুর বাসস্ট্যান্ডের যাত্রীছাউনি ভেঙে পেছনে থাকা আমার জমি দখল করেন। প্রতিবাদ করায় পুলিশের মাধ্যমে আমাকে ধরে নিয়ে আটকে রাখেন এবং ক্রসফায়ারের হুমকি দিয়ে ১০ লাখ টাকা আদায় করাসহ জমি দখল করে আলিশান মার্কেট নির্মাণ করেছেন।
তিনি বলেন,আমার মতো অনেককে তিনি ধরে নিয়ে চাঁদা আদায় করেছেন। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি এখন শত কোটি টাকার মালিক। এতো টাকা তার কিভাবে হলো! মার্কেট নির্মাণের স্বার্থেই ২০১৯ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাতের অন্ধকারে দৌলতদিয়া-কুষ্টিয়া মহাসড়কের চাঁদপুরে যাত্রীছাউনি ভাঙা হয়। এ ঘটনায় মামলা হলেও ক্ষমতার দাপটে মজনু বেঁচে যান। আমরা দ্রুত যাত্রীছাউনি নির্মাণসহ মজনুর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে কথা বলতে মিজানুর রহমান মজনুর গ্রামের বাড়িতে গেলে তার ছোট ভাই আব্দুর রহমান সোহাগ জানান তার ভাইসহ পরিবারের কেউ বাড়িতে নাই।তাদের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না।