Homeজেলারাণীনগরে রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখিপল্লী উদ্বোধনের অপেক্ষায়

রাণীনগরে রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখিপল্লী উদ্বোধনের অপেক্ষায়

নওগাঁর রাণীনগরে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখি পল্লী। উপজেলার ইতিহাস-ঐতিহ্য বহণকৃত দুইশত বছরের প্রাচীন হাতিরপুল সহ রক্তদহ বিল ঘিরে গড়ে তোলা হয়েছে পর্যটন কেন্দ্র, পাখি পল্লী ও মৎস্য অভয়াশ্রম। উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাইমেনা শারমীনের পরিকল্পনায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

গ্রামীণ প্রাকৃতিক- পরিবেশ ও সুস্থ্য বিনোদন যোগাতে গড়ে তোলা হয়েছে এই পর্যটন কেন্দ্র। কিছুদিন আগে রক্তদহ বিল ও তার সংযোগখাল রতনডারি সহ আশেপাশের এলাকাকে মৎস্য অভয়াশ্রম হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এ উপজেলায় সরকারিভাবে এটিই প্রথম পর্যটন এলাকা হিসেবে উদ্বোধন করা হবে কয়েক দিনের মধ্যে। শেষ সময়ে ওই এলাকাজুড়ে চলছে সাজ-সজ্জার কাজ ও শিল্পীর হাতের হরেক রঙের কারুকার্য।

উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে, আগামী মঙ্গলবার বিকালে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আউয়াল প্রধান অতিথি হিসেবে পর্যটন এলাকা আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন করবেন। উদ্বোধন উপলক্ষ্যে এদিন নানা কর্মসূচিও গ্রহণ করা হয়েছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে উপজেলা শিল্পকলা একাডেমীর পক্ষ থেকে এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।

রোববার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঐতিহাসিক রক্তদহ বিল থেকে সবুজ মাঠের বুক চিরে বয়ে গেছে একটি খাল যার নাম রতনডারি। খালের দুইপাড় দিয়ে রয়েছে ফলদ ও বনজ বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। রতনডারি ব্রিজের সঙ্গে নির্মাণ করা হয়েছে নামফলক যুক্ত একটি নান্দনিক গেইট। গেইটের মুখেই শোভা পাচ্ছে শিল্পীর আঁকা পুরো খালের রঙ্গিন ছবি। নিচেই পর্যটকদের বরণ করতে ইট, সিমেন্ট আর বালি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে একটি বিশাল আকৃতির মাছ। সেই মাছের শরীরে হরেক রঙে লেখা শোভা পাচ্ছে মৎস্য অভয়াশ্রম। খালের পশ্চিমপাড় দিয়ে গাছের ফাঁকে ফাঁকে নির্মাণ করা হয়েছে পর্যটকদের বসার জায়গা। পর্যটকরা যেন নিরাপদে সহজেই চলাচল করতে পারেন সেই জন্য পুরো রাস্তায় ইট বিছানো রাস্তা। এছাড়া সুন্দর সময় উপভোগ করতে তৈরি করা হয়েছে নানা রকমের স্থাপনা।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোহাইমেনা শারমীন বলেন, রাণীনগর একটি ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরা উপজেলা। কিন্তু উপজেলায় পর্যটনমুখী কোন খাত গড়ে তোলা হয়নি। উপজেলার রক্তদহ বিলে সারা বছরই হরেক রকমের পাখির আসা-যাওয়া রয়েছে। কিন্তু উপযুক্ত পরিবেশ না থাকার কারণে পাখিরা এখানে আবাসস্থল গড়ে তুলতে পারে না। রাণীনগর সদর হয়ে কালীগঞ্জ মহাসড়কটি নতুন করে নির্মাণ হওয়ায় ঐতিহ্যবাহী হাতিরপুল এলাকাটি পর্যটকদের আকর্ষন করে। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে রক্তদহ বিলের এই অঞ্চলটি পানিতে থৈ-থৈ করে তখন এলাকাটি আরও আকর্ষনীয় দেখায়। এ সময় নৌকা নিয়ে ঘুরতে হাজারো মানুষ ভীড় করে। আর পাখিদের কলকাকলীতে মুখর হয়ে ওঠে পুরো রক্তদহ বিল।

তাই হাতিরপুল থেকে রতনডারি খালের পাশ দিয়ে রক্তদহ বিলের মধ্যে চলাচলের মেঠো সড়কটি আধুনিকায়ন, সড়কের দুই পাশে পর্যটকদের জন্য বসার ব্রেঞ্চ নির্মাণ সহ আকর্ষনীয় স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে। সারা বছর রক্তদহ বিলে আশ্রয় নেওয়া দেশীয় ও অতিথী পাখিদের অভয়ারন্য গড়ে তোলার লক্ষ্যে পাখি পল্লী হিসেবে এলাকাটিকে গড়ে তোলার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। পুরো প্রকল্পের কথা জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানালে ওনার সার্বিক সহযোগিতায় রক্তদহ বিল পর্যটন এলাকা ও পাখিপল্লী শীর্ষক প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়নের কাজ করা হয়। শেষ পর্যন্ত সবার সার্বিক সহযোগিতা নিয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পেরে আমি অনেক খুশি ও আনন্দিত। সরকারের পাশাপাশি এলাকাটির সৌন্দর্য ও অবকাঠামোগত উন্নয়নকে ধরে রাখার দায়িত্ব স্থানীয় সহ পুরো উপজেলাবাসীর। আমি আশাবাদী এক সময় এলাকাটির নাম দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।

সর্বশেষ খবর