Homeজাতীয়সংবিধান সংস্কার: ক্ষমতার ভারসাম্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব

সংবিধান সংস্কার: ক্ষমতার ভারসাম্যে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর প্রস্তাব

প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে সংবিধান সংস্কার কমিশন একটি সুপারিশ দিয়েছে। ক্ষমতার ভারসাম্য আনার ক্ষেত্রে বিএনপিসহ সক্রিয় রাজনৈতিক দল ও অংশীজনদের মধ্যে কোনো দ্বিমত নেই। তবে কীভাবে এই ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করা যাবে, সে বিষয়ে এখনো আলোচনা শুরু হয়নি। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারিতে অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ করতে চায়, সেখানে এই বিষয়ে আলোচনা করে সমাধানের পথ খোঁজা হবে।

বিএনপির দেওয়া ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাবে ক্ষমতার ভারসাম্য আনার কথা উল্লেখ থাকলেও তা কীভাবে বাস্তবায়ন করা যাবে, সে বিষয়ে তারা এখনো বিস্তারিত কিছু জানায়নি। এদিকে সংবিধান সংস্কার কমিশন প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতা কমিয়ে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বেশ কিছু সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব উপস্থাপন করেছে।

সংবিধান সংস্কারের সুপারিশ
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতিকে প্রধান বিচারপতি, উচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারক এবং মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের (সিএজি) মতো সাংবিধানিক পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া উচিত। এসব ক্ষেত্রে নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসরণ করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করবেন, তবে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ নিতে হবে না।

১৫ জানুয়ারি সংবিধান সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশের একটি সারসংক্ষেপ প্রকাশ করে। সেখানে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বাড়ানোর বিষয়টি বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করা হয়নি। তবে সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, সংবিধানের কিছু জায়গায় পরিবর্তনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির নির্দিষ্ট কিছু দায়িত্ব নির্ধারণের সুপারিশ করা হয়েছে। এই পরিবর্তন বাস্তবায়িত হলে রাষ্ট্রপতি নির্দিষ্ট কিছু পদক্ষেপ নিতে পারবেন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ ছাড়া।

সংবিধানের বিদ্যমান কাঠামো অনুসারে, বর্তমানে রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করতে হয়। তবে কমিশন প্রধানমন্ত্রীর একচ্ছত্র ক্ষমতা হ্রাস এবং কিছু সাংবিধানিক পদে রাষ্ট্রপতির স্বতন্ত্র ক্ষমতা প্রদানের কথা বলেছে। এতে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং বিচার বিভাগ আরও স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ পাবে।

জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব
ক্ষমতার ভারসাম্য আনার লক্ষ্যে কমিশন একটি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিল গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে। এই কাউন্সিলে নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। প্রস্তাব অনুসারে, এই কাউন্সিলের সুপারিশের ভিত্তিতে রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার, অ্যাটর্নি জেনারেল, সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দিতে পারবেন। এসব ক্ষেত্রেও রাষ্ট্রপতিকে প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের প্রয়োজন হবে না।

জরুরি অবস্থা ঘোষণায় ক্ষমতার পরিবর্তন
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতি জাতীয় সাংবিধানিক কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন না। এটি বর্তমান কাঠামোর একটি বড় ধরনের পরিবর্তন, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তের প্রয়োজন হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতিক্রিয়া
বিএনপি, গণতন্ত্র মঞ্চ, জামায়াতে ইসলামী এবং সিপিবি কমিশনের সুপারিশকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে। তবে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ না হওয়ায় দলগুলো তাদের চূড়ান্ত প্রতিক্রিয়া জানায়নি। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, কমিশনের সারসংক্ষেপ নিয়ে তারা নিজ দলে আলোচনা করছেন এবং সংলাপের অপেক্ষায় আছেন।

সংলাপের অপেক্ষায়
অন্তর্বর্তী সরকার ফেব্রুয়ারি মাসে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনা করেছে। সংলাপে ক্ষমতার ভারসাম্যসহ অন্যান্য প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে এবং একটি কার্যকর সমাধানের দিকে এগোনো হবে। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠিত হবে। তবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হওয়ার পদ্ধতি ও রাজনৈতিক সংস্কৃতি এর কার্যকারিতা নির্ধারণ করবে।

সর্বশেষ খবর