ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র। ৫ আগস্টের পর অচল অবস্থায় তৈরি হয় এ প্রতিষ্ঠানটিতে। সেখানে তিন মাস ধরে কর্মচারি-কর্মকর্তাদের বেতন, বিভিন্ন ধরনের বকেয়া বিলসহ নিয়মিত কার্যক্রমের চালাতে সংকট তৈরি হয়। এ দূর অবস্থা থেকে প্রতিষ্ঠানটি সচল করতে উদ্যোগে নেন সেখানকার সিয়িনর কয়েকজন প্রকৌশলী। নতুন কমিটি গঠন করতে প্রস্তুতি নিলে ভাড়া করা লোকজন দিয়ে চালায় হামলা। সম্প্রতি নতুন কমিটি গঠন করা হলে দ্বিতীয় দফা হামলা চালায় সেখানে। নেতাদের অনিয়ম ও দুর্নীতি ঢাকতে পরিকল্পিতভাবে হামলার ছক আঁকেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত নেতারা।
অভিযোগ রয়েছে, আইইবি এসব অচল অবস্থার তৈরিতে মূল ভুমিকায় রয়েছেন— প্রকৌশলী আতিকুজ্জামান বিল্লাহ। বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী মো. হারুনের নিকট আত্মীয় হন এই আতিকুজ্জামান বিল্লাহ, প্রকৌশলী সোহান আহমেদ টিটু, প্রকৌশলী মুনতাসীর মামুন ও প্রকৌশলী শহিদুজ্জামান কিরণ।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র কমিটি গঠন না হওয়ায় অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। ওই সময় প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারির বেতন না দেয়ায় এক ধরনের কঠিন পরিস্থিতি পড়তে হয়েছে প্রতিষ্ঠানটিকে। তিনমাস বকেয়া বিদ্যুৎ ও টেলিফোন বিল পরিশোধ না করায় সংযোগ কেটে দেয়া হয়।
আরও পড়ুন>> দুর্নীতি আড়াল করতে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ নেতাদের কুটকৌশল
২০২৪ সালের ১৪ ডিসেম্বর আইইবির কমিটি গঠনের ইস্যুর জেরে এসোসিয়েশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এ্যাব) এর সিনিয়র সদস্য প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন, প্রকৌশলী দুলাল হোসেনসহ তিনজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেন প্রকৌশলী সোহান আহমেদ টিটুর নেতৃত্বে কয়েকজন প্রকৌশলী। সোহান আহমেদ টিটু একসময়ের ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। সংগঠনটির অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে এর আগেও আইইবির সদস্য পদ বাতিল হয়েছিল। সবশেষ গত ১১ জানুয়ারি একই ইস্যু ধরে আবারও আরেক দফায় সিনিয়র সদস্য প্রকৌশলী রাশেদ আলমের ওপর হামলা ও শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়।
যারা আইইবিকে অচলবস্থা করতে গোপনে ঢিল ছুঁড়েছিলেন এদিকে প্রকৌশলী মো. হারুন ছিলেন সাবেক পিডিবি নির্বাহী প্রকৌশলী। তিনি বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সক্রিয় নেতা ছিলেন। ওই সময় বঙ্গবন্ধু প্যানেল থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিলেন তিনি; বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদ চট্টগ্রামের সেক্রেটারি ছিলেন ও সাবেক যুবলীগ নেতা মো. শাহজাহান; আরেক সিনিয়র প্রকৌশলী এয়াকুব সিরাজদ্দৌলা। তিনি ছিলেন আওয়ামীলী লীগের সক্রিয় একজন সুবিধাভোগি নেতা। আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে যখনই এ্যাবের পক্ষে সরকার বিরোধী কোনো কর্মসূচি ঘোষণা করলে তখন ওইসব প্রোগ্রামের তিনি অজুহাত দেখিয়ে প্রায় অনুপস্থিত থাকতেন।
যেভাবে অরাজকতা তৈরি করে দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার অপকৌশল আইইবিতে নানা বিশৃ্খলার পরিস্থিতি তৈরি করে সুবিধা নিতে চেয়েছিল বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সভাপতি প্রকৌশলী মো. হারুন ও বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সেক্রেটারি যুবলীগ নেতা মো. শাহজাহান। একইসঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সময় দুর্নীতি, নিয়ম বর্হিভুতভাবে কক্সবাজারের জায়গা বিক্রি ও আইইবির চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নিচে রেস্টুরেন্ট বরাদ্দ নিয়ে দুর্নীতি ধামাচাপা দেয়ার জন্য সম্প্রতি পরপর দুবার হামলার ঘটনা অপকৌশল হিসেবে কাজ করেছিলেন এই দুই নেতার।
নতুন কমিটিকে যা করতে হবে সদস্যদের অভিমত ৫ আগস্টের বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগের দোসররা দুদক থেকে বাঁচতে অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। অনেকে আত্মগোপনে থেকে আইইবিতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়েছেন। পূর্বের কমিটির অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ায় হলো নতুন কমিটির প্রধান কাজ।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে আইইবির নব কার্যকরী কমিটির ভাইস-চেয়ারম্যান প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ‘আইইবি সুষ্ঠ পরিবেশ করতে নির্দিষ্ট গুটিকয়েক সদস্য অতর্কিত হামলার করে এসব বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে বারবার। তারা বহিরাগতদের এনে এই পর্যন্ত দুবার সিনিয়র নেতাদের ওপরে ন্যাক্কার হামলা করেছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। হামলার ঘটনায় থানায় জিডি করা হয়। তারা মূলত দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহি এই প্রতিষ্ঠানটি অচল করতে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে সিনিয়র নেতাদের ওপরে হামলা করা হয়।’
হামলার সঙ্গে জড়িতদের ব্যাপারে কি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে প্রকৌশলী রফিকুল ইসলাম আমার দেশকে বলেন, ‘ আইইবি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের পরবর্তি কাউন্সিল মিটিংয়ে এব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে তদন্ত টিম গঠন করা হবে।’