চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়কটির বেহাল হয়ে আছে। পিচ ঢালাই কার্পেটিংয়ের এ সড়কটি সংস্কার করা হচ্ছে ইট দিয়ে সলিং করে। সম্প্রতি সড়কের লক্ষ্মীপুর জেলার সদরের অংশের পাঁচটি স্থানে বসানো হয়েছে ইটের সলিং।
ইট বসানোর জন্য ব্যবহার হচ্ছে বালু। ফলে ধুলোবালির মাত্রা বেড়েছে কয়েকগুণ। দূষণ হচ্ছে পরিবেশ। সড়ক জুড়ে ধুলাবালিতে অতিষ্ঠ সাধারণ মানুষ।
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগ-সওজ ও স্থানীয়দের কাছ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, চাঁদপুর-লক্ষ্মীপুর-নোয়াখালী মহাসড়কে সবশেষ ২০১৭ সালে কার্পেটিং করা হয়। যানবাহনের চাপ, বন্যা ও অতিবৃষ্টিতে সড়কের বিভিন্ন স্থানে পিচ, মেকাডম উঠে খানাখন্দ ও ফাটল দেখা দেয়। সৃষ্টি হয় ছোট-বড় গর্তের।
এরপর ২০২৪ সালে এ মহাসড়কের লক্ষ্মীপুর অংশের হাজিরপাড়া, মান্দারী, জকসিন, পুলিশ লাইন্স সংলগ্ন, ইসলাম মার্কেট, বাস টার্মিনাল এলাকায় পিচ ঢালাই দিয়ে কার্পেটিং করা হয়েছিল। কিন্তু সেটাও বেশিদিন টেকেনি। ওইসব স্থানে চলতি মাসের শুরুতে ইটের সলিং করা হয়। ভারি যানবাহন চলাচল করায় সলিং ভেঙে বালু উড়ছে। সড়কের দুপাশের গাছগাছালি ও ফসলি জমি বিবর্ণ হয়ে পড়ছে। ধুলোবালি রোধে পানি ছিটানোর নিয়ম থাকলেও তা মানা হচ্ছে না বলে এ পথে চলাচলকারীদের অভিযোগ।
নিয়মিত এ রুটে মোটরসাইকেলে চলাচল করেন সদর উপজেলার হাজীরপাড়ার বড় ভল্লবপুর গ্রামের ফারুক হোসেন। তিনি বলেছিলেন, “রাস্তায় বের হলে ধুলো এসে চোখ জ্বালাপোড়া করে। সর্দি-কাশি দেখা দেয়; শ্বাস নিতেও কষ্ট হয়।”
চাঁদপুর-নোয়াখালী রুটে চলাচলকারী আনন্দ পরিবহনের চালকের সহকারী মোস্তফা বলেন, “নোয়াখালীর বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত সড়কের অবস্থা খারাপ ছিল। কিন্তু বন্যা পরবর্তী সময়ে বেগমগঞ্জ চৌরাস্তা থেকে চন্দ্রগঞ্জ পশ্চিম বাজার পর্যন্ত নোয়াখালী অংশে সড়ক সংস্কার করা হয়েছে। কিন্তু লক্ষ্মীপুর অংশে কোনো সংস্কার হয়নি।”
ভোলার ট্রাক চালক আবদুল মতিনের ভাষ্য, “ইটের সলিংয়ের কারণে দুর্ভোগ আরও বাড়বে। কারণ যানবাহন চলাচলে চাকায় ইট ভেঙে-গুঁড়ো হয়ে ধুলোবালুতে দিনের বেলাও অন্ধকার দেখাচ্ছে। এটা যেন সরকারি টাকা লুটের প্রকল্প।”
পরিবেশবাদী সংগঠন সবুজ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন বাবু বলেন, “লক্ষ্মীপুরে প্রধান সড়কে চলাচলকারী বালুবাহী ট্রাক থেকে বালু উড়ে। সেই বালু আবার অন্য যানবাহনে গিয়ে পড়ে। সেগুলো পথচারীদের চোখে-মুখেও ঢুকছে। “ওই সড়ক দিয়েই ট্রলি কিংবা পিকআপ ভ্যানে করে বিভিন্ন ইটভাটায় মাটি ও ইট পরিবহন করা হয়। এ সময়ও সড়কে মাটি পড়ে একাকার হচ্ছে। এখন ইটের সলিংয়ের কারণে আরো ভোগান্তি বাড়বে।”
লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) অরূপ পাল বলেন, “বায়ু দূষণের কারণে মানবদেহের শ্বাসযন্ত্রের সমস্যা হয়। অ্যাজমা, চুলকানি, সর্দি, কাশিসহ নানা রোগ-বালাই দেখা দেয়। শিশুদের জন্যেও ধুলোবালি ক্ষতিকর। প্রতিদিনই নতুন নতুন রোগী হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নিচ্ছে।”
কী ধরনের বায়ু দূষণ হচ্ছে জানতে চাইলে পরিবেশ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হারুন-অর-রশিদ পাঠান রশিদ বলেন, “এ বিষয়ে আমাদের কাছে কোনো তথ্য-উপাত্ত নেই। আসলে সড়কে বায়ু দূষণ ও নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সওজের দেখভাল করার কথা। তারা বিষয়টি ভালো বলতে পারবেন।”
লক্ষ্মীপুর সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মোশাররফ হোসেন বলেন, “সড়কের খানাখন্দগুলোতে সিলকোড করলে বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। তাই ইটের সলিংয়ের মাধ্যমে সংস্কার করা হচ্ছে। ইট বসে গেলে দুর্ভোগ ছাড়াই যানবাহন চলাচল করতে পারবে।”ধুলোবালি রোধে পানি না ছিটানোর বিষয়ে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি। সওজের এই কর্মকর্তার ভাষ্য, “বাস টার্মিনাল থেকে চন্দ্রগঞ্জ বাজার পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর অংশে ১৮ কিলোমিটার সড়কের চার লেনের ‘উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা-ডিপিপি’ জমা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি টেন্ডারসহ প্রক্রিয়া হলে চার লেনে ২৪ ফুট করে ৪৮ ফুট এবং মাঝখানে ডিভাইডার হবে।“এ ছাড়া বাস টার্মিনাল থেকে চাঁদপুর রুটের রায়পুরে বর্ডার অংশে পিএমপি (মেজর সড়ক) প্রকল্পের জন্যেও প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৫০ কোটি টাকা।”তবে কবে নাগাদ এ প্রকল্প অনুমোদন হবে তা সুনির্দিষ্ট বলতে পারেননি তিনি।