স্টাফ রিপোর্টার:
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয় বর্তমানে নানা অনিয়ম ও অস্থিরতায় জর্জরিত। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকীর অভিযোগ অনুযায়ী, সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিম দুদু ও তার পরিবার প্রায় তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এ বিষয়ে বারবার বগুড়া জেলা প্রশাসক, শাজাহানপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডে লিখিত অভিযোগ দিলেও এখন পর্যন্ত কোনো কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ সূত্রে জান যায়, স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটির সাবকে সভাপতি নুরুজ্জমান শাজাহানপুর উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও মঝিড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। আব্দুল হালিম দুদু তার প্রতিবেশী। নুজ্জামানের রাজনৈতিক প্রভাবে আব্দুল হালিম দুদু ২০২০ সালের ৬ ডিসেম্বর এক রেজুলেশনের মাধ্যমে স্কুলের আর্থিক দায়িত্ব গ্রহন করেন। তখন থেকেই প্রধান শিক্ষক কোন ঠাসা হয়ে যান।
ইতিপূর্বে মহাসড়ক সম্প্রসারণের জন্য বিদ্যালয়ের জমি অধিগ্রহণের পর মোট ৯৬ লাখ টাকা দুদুর পরিবারের সদস্যরা উত্তোলন করেন। এছাড়া স্থাপনা বাবদ প্রাপ্ত ২ কোটি ৯০ হাজার টাকাও চলে যায় দুদর হাতে। আর্থিক দায়িত্বের কর্তৃত্ব ও সভাপতি নুরুজ্জামানের প্রভাব খাটিয়ে তিনি এর বেশিরভাগ অর্থও আত্মসাৎ করেন। বিভিন্ন সময়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী এসবের প্রতিবাদ করেন।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট, হাসিনা সরকারের পতনের পর আব্দুল হালিম দুদু আরও আক্রমনাত্মকভাবে বিএনপি দলীয় পরিচয়ে আবির্ভুত হন। তিনি শিক্ষার্থীদের দিয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মব সৃষ্টি করেন। এক পর্যায়ে তিনি প্রধান শিক্ষককে পদত্যাগ করাতে বাধ্য করেন। এখন জীবনের নিরাপত্তা নিয়ে শংকায় আছেন বলে জানিয়েছেন পদত্যাগকারী প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষার্থীর সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা স্কুলের অনিয়মের বিষয়ে কিছু জানে না। তবে সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিম দুদু প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তাদের উস্কে দিয়েছে। এর জন্য তাদের কিছু টাকাও দিয়েছে।
এখন বিএনপি দলীয় পরিচয় দিলেও আব্দুল হালিম দুদুর অতীত রাজনৈতিক পরিচয় নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। তিনি একসময় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, তবে ১০ বছর আগে মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি থেকে অব্যাহতি নেন। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করলেও স্থানীয় বিএনপি নেতারা তাকে দলছুট বলে দাবি করছেন।
জানতে চাইলে মাঝিড়া ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আজাদ বলেন, “বিগত সরকারের সময়ে নুরজ্জামানের সাথে থেকে স্কুলের টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ক্ষমতার পালাবদল হলে তিনি বিএনপির পরিচয়ে জোর করে প্রধান শিক্ষক দিলরুবা লাকীকে সরিয়ে প্রধান শিক্ষকের চেয়ার দখল করে রেখেছেন। এটা সম্পূর্ণ অন্যায় এবং এতে আমাদের দলের ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।“
তবে এসব বিষয় অস্বীকার কারেছেন অভিযুক্ত আব্দুল হালিম দুদু। তিনি বলেন, আমাকে কখন আর্থিক দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমার জানা নেই। তাছাড়া স্কুলের ব্যাংক একাউন্ট সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হয়। তারা নিজেরাই টাকা আত্মসাৎ করে আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
এবিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তাইফুর রহমান বলেন, প্রধান শিক্ষক মীর্জা দিলরুবা লাকীকে হত্যার হুমকি ও জমির টাকা আত্মসাতের বিষয় আমার জানা ছিল না। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।