Homeজাতীয়নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশে স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন: এইচআরডব্লিউ

নির্যাতন বন্ধে বাংলাদেশে স্থায়ী সংস্কার প্রয়োজন: এইচআরডব্লিউ

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গণতান্ত্রিক ও অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ভবিষ্যতের জন্য উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের (এইচআরডব্লিউ) এশিয়া বিষয়ক উপপরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি।

তিনি সতর্কতা উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং আন্তর্জাতিক সমর্থন ছাড়া এর অগ্রগতি নষ্ট হয়ে যেতে পারে।’

বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ওয়ার্ল্ড রিপোর্ট-২০২৫-এ তিনি এসব বিষয় তুলে ধরেছেন।

গাঙ্গুলি বলেন, ‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা দিতে হবে, গুমের বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও ক্ষতিপূরণে সহায়তা করতে হবে। একই সঙ্গে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর বেসামরিক নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে।’

প্রতিবেদনে তিনি বলেছেন, নোবেল পুরস্কার বিজয়ী মোহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গুমের ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছে এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বৈরাচারী শাসনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কার ও জবাবদিহিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।

অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জবাবদিহিতা ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে উল্লেখ করে এইচআরডব্লিউ বলেছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উচিত জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার অফিসের সহায়তায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে প্রতিষ্ঠানগুলোর সংস্কার করা, কুখ্যাত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) বিলুপ্ত করে স্বাধীন তদারকি ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা বাহিনীর সংস্কার করা এবং গুমের শিকার ও তাদের পরিবারের জন্য ন্যায়বিচার চাওয়া উচিত।

এতে বলা হয়, পার্বত্য চট্টগ্রামে মানবাধিকার পর্যবেক্ষকদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীদের নিবন্ধনের জন্য জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনারের সঙ্গে কাজ করতে হবে, যাতে তারা সুরক্ষা, চিকিৎসা সেবা এবং খাদ্য রেশন পেতে পারে।

জুলাই ও আগস্টে তিন সপ্তাহ ধরে ছাত্র-নেতৃত্বাধীন বিক্ষোভের উপর দমন অভিযানের সময়, নিরাপত্তা বাহিনীর অতিরিক্ত ও নির্বিচারে গুলি বর্ষণের কারণে এক হাজারেরও বেশি লোক নিহত এবং কয়েক হাজার আহত হয়েছিল।

৫৪৬ পৃষ্ঠার বিশ্ব প্রতিবেদনের ৩৫তম সংস্করণে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ১০০টিরও বেশি দেশের মানবাধিকার চর্চা পর্যালোচনা করেছে।

নির্বাহী পরিচালক তিরানা হাসান তার সূচনা প্রবন্ধে লিখেছেন, বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে সরকারগুলো রাজনৈতিক বিরোধী, কর্মী এবং সাংবাদিকদের অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার ও কারারুদ্ধ করেছে।

এতে আরও বলা হয়, সশস্ত্র গোষ্ঠী ও সরকারি বাহিনী বেআইনিভাবে বেসামরিক লোকজনকে হত্যা করেছে। অনেককে তাদের বাড়িঘর থেকে বিতাড়িত করেছে এবং মানবিক সহায়তা পাওয়ার পথ বন্ধ করে দিয়েছে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, গেল ২০২৪ সালে ৭০টিরও বেশি জাতীয় নির্বাচনের বেশিরভাগেই কর্তৃত্ববাদী নেতারা তাদের বৈষম্যমূলক বক্তব্য ও নীতি নিয়ে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছেন।

অ্যাক্টিভিস্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, নিরাপত্তা বাহিনী বিরোধী সমর্থক এবং সাংবাদিকদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং তাদের যথাযথ প্রক্রিয়া এবং আইনি পরামর্শের অধিকার থেকে বঞ্চিত করাসহ নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছে।

এইচআরডব্লিউ বলছে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জাতিসংঘের গুম বিষয়ক কনভেনশনে সম্মতি দিলেও নিরাপত্তা বাহিনী অবৈধভাবে আটকদের মুক্তি দিতে বা তাদের ভাগ্যে কী ঘটেছে, সে সম্পর্কে তাদের পরিবারকে জবাব দিতে ব্যর্থ হয়েছে।

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে সশস্ত্র গোষ্ঠী ও গ্যাংয়ের হাতে সহিংসতার ঝুঁকিতে রয়েছে। অনিবন্ধিত শরণার্থীরা ক্ষুধার ঝুঁকিতে রয়েছে এবং তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো হবে এই ভয়ে তারা স্বাস্থ্যসেবা নেয় না।

সর্বশেষ খবর