কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের নওদাবশ এলাকায় সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের পাশে অবস্থিত মেসার্স আলতাফ ব্রিকস নামক একটি অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে প্রশাসনের উদ্যোগে ইটভাটার কাঁচা ইট ধ্বংস করা হয় এবং ফায়ার সার্ভিসের সহায়তায় ভাটার আগুন নিভিয়ে দেওয়া হয়।
নওদাবশ এলাকার সাইফুর রহমান সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করে আসছিলেন, ইটভাটার ধোঁয়া তাদের শ্রেণিকক্ষে প্রবেশ করে পড়াশোনার পরিবেশ বিঘ্নিত করছে। তারা জানান, “ইটভাটার ধোঁয়া এবং ধুলাবালির কারণে আমাদের মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা সম্ভব হয় না। এতে আমাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।”
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় একাধিক অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে, যা স্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও জনগণের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য মারাত্মক হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে, উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নে ফুলবাড়ী-নাগেশ্বরী মহাসড়কের পাশে মাত্র আধা কিলোমিটারের মধ্যে ডব্লিউ এএইচ ব্রিকস, এবি ব্রিকস এবং এমএসএইচ ব্রিকস নামে তিনটি ইটভাটা অবস্থিত। এসব ইটভাটার আশপাশে সাতটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে গঙ্গারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গঙ্গারহাট উচ্চ বিদ্যালয়, এবং কাশিপুর ডিগ্রি কলেজ।
ইটভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে শিক্ষার্থীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট, চোখের সমস্যা এবং পরিবেশগত নানা অসুবিধা দেখা দিচ্ছে। গঙ্গারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন, “ইট পোড়ানোর ধোঁয়ার কারণে আমরা ঠিকমতো শ্বাস নিতে পারি না। আমাদের চারপাশে ধুলাবালি জমে থাকে, এমনকি গাছের ফলও ধরে না।”
শিমুলবাড়ী ইউনিয়নের ফকির পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেও একটি অবৈধ ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এক শিক্ষক বলেন, “এই ভাটার কারণে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ও শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”
২০১৯ সালের ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন অনুযায়ী, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা থেকে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন বাধ্যতামূলক। তবে এই আইন লঙ্ঘন করেই ফুলবাড়ী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ইটভাটা গড়ে উঠেছে।
আরও পড়ুনযুক্তরাষ্ট্রের দাবানল আল্লাহর ‘গজব’? যা বললেন শায়খ আহমাদুল্লাহ
এর আগে, উপজেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের যৌথ উদ্যোগে চারটি অবৈধ ইটভাটার বিরুদ্ধে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়। উপজেলা নির্বাহী অফিসার রেহেনুমা তারান্নুমের নেতৃত্বে পরিচালিত অভিযানে চারটি ইটভাটার মালিকদের কাছ থেকে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়।
কুড়িগ্রাম জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক রেজাউল করিম জানান, “পরিবেশ সুরক্ষা এবং বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে এ ধরনের অভিযান নিয়মিতভাবে চালানো হবে। অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম বন্ধ করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।”
এলাকার জনগণ ও শিক্ষার্থীরা দ্রুত অবৈধ ইটভাটাগুলো অপসারণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, এসব ভাটার ধোঁয়া ও ধুলাবালির কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়ছে। প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে এর ক্ষতিকর প্রভাব আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
ফুলবাড়ীর স্থানীয় জনগণের মতে, প্রশাসনের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয় হলেও, সমস্যার স্থায়ী সমাধানে নিয়মিত অভিযান এবং কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি।