দীর্ঘদিনের প্রত্যাশা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাকাজ শুরু হলেও ৬ বছরে শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। এতে হতাশায় জেলার সেবাপ্রত্যাশীরা। দ্রুত ২৫০ শয্যা হাসপাতালের কার্যক্রম শুরুর দাবি তাদের।
জানা যায়, লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল ২০১৮ সালের জুন মাসে। কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে হিসেবে কাজটি ২০২০ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ২০২৪ সাল শেষ হলেও সেই কাজটি এখনও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বর্তমানে যে ভবনটিতে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে, সেটি ১০০ শয্যার হাসপাতাল। কিন্তু কখনও কখনও ওই ভবনের ১০০ শয্যার বিপরীতে ৪ শতাধিক রোগীও ভর্তি থাকে।
এতে চিকিৎসাসেবার মান নিশ্চিত করতে বেগ পোহাতে হচ্ছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে। মেঝেতে, করিডোরে, র্যাম্প, বারান্দায় বা শৌচাগারের সামনের অংশেও নোংরা পরিবেশে ভর্তি থাকে রোগীরা। আড়াইশ শয্যার হাসপাতালটি চালু হলে ভালো পরিবেশে চিকিৎসাসেবা নিতে পারতো রোগীরা।
এছাড়া জানা যায়, লক্ষ্মীপুর জেলাবাসীকে চিকিৎসাসেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৭ সালের ১৪ মার্চ সাবেক সরকার ১০০ শয্যার হাসপাতালকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করার ঘোষণা করেন।
এরই ধারাবাহিকতায় গণপূর্ত বিভাগ থেকে ভবন নির্মাণ কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়। রুপালি জিএম অ্যান্ড সন্স কনস্যুডিয়াম নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পায়। প্রথম পর্যায়ে কাজের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ ৯ হাজার ৬৪ টাকা। ২০১৮ সালের ১২ জুন কাজটি শুরু করে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। শুরুতে কাজের মেয়াদ ছিল ১৮ মাস। সে হিসেবে ২০১৯ সালের ৬ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজটি শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু প্রথম দফায় শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজের মেয়াদ বৃদ্ধি করে। ২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে কাজের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২১ সালের ৭ জুন পর্যন্ত নতুন সময়সীমা বর্ধিত করা হয়। কিন্তু এরমধ্যে আরও তিন বছর পার হয়ে যায়। সব মিলিয়ে দেড় বছর মেয়াদি কাজ গিয়ে গড়ায় ৬ বছরে। কিন্তু আদৌ শেষ করতে পারেনি। এরই মধ্যে কাজের প্রাক্কলন ব্যয়ও বৃদ্ধি করা হয়েছে।
প্রথম পর্যায়ের নির্মাণ ব্যয় থেকে চার কোটি ৪৩ লাখ টাকার বেশি বাড়িয়ে মোট নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৯ কোটি ৭৯ লাখ ৪৮ হাজার ৪৭৭ টাকা। বর্তমানে আরো প্রায় ৪কোটি টাকার নির্মান ব্যয় বাড়িয়ে বাজেট পাঠানো হয়েছে। সেটি এখনও পাস না হওয়ায় কাজ বন্ধ রয়েছে।
তবে স্থানীয়রা বলছেন লুটপাট করে সকল টাকা শেষ । এখন কাজ করার টাকা নেই। ঠিকাদাররা আওয়ামী লীগের দোষর। তাদের দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি টাকা লুটপাট হয়েছে। এ ভবনে এতো টাকা ব্যয় হওয়ার পরও এখনও টাকা সংকট এটি মেনে নিতে পারছেন না জেলার সুশীল সমাজ। তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থার দাবি তাদের।
আরও পড়ুন:লক্ষ্মীপুরে ট্রাফিক পুলিশের উপর হামলার ঘটনার মামলায় ১১ জন গ্রেপ্তার, কারাগারে প্রেরণ
সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) লক্ষ্মীপুরের সভাপতি প্রফেসর জেডএম ফারুকী বলেন, শয্যা সংকটে রোগীরা মারাত্মক ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। মানসম্মত সেবা প্রাপ্তি নিশ্চিত হচ্ছে না। এতে সেবা না পেয়ে অনেককে প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। ১০০শয্যা হাসপাতালে প্রতিদিন দিগুন-তিনগুন চিকিৎসা নিচ্ছে। নতুন ভবন চালু হলে ২৫০ শয্যার সুবিধাভোগ সম্ভব হবে রোগীদের। দ্রুত ভবনটির কাজ শেষ করে চালু করা হোক এবং চিকিৎসক ও লোকবল নিয়োগ করা হোক।
সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. অরুপ পাল বলেন, গড়ে প্রতিদিন তিন থেকে চার শতাধিক রোগী হাসপাতালে ভর্তি থাকে। প্রতিদিনই রোগীর চাপ বাড়ছে। এদিকে আমাদের লোকবলও সংকট। দীর্ঘদিন থেকে নতুন ভবনের কাজ চলমান। ভবনটি বুঝে পেলেই ২৫০ শয্যার কার্যক্রম চালু হবে। তখন ২৫০ শয্যার জনবলও নিয়োগ হবে। তাহলেই আমাদের ভোগান্তি কমবে। কারণ শয্যা সংকটের চেয়েও জনবল সংকট মারাত্মকভাবে আমাদের ভোগাচ্ছে। এখন ১৫৪ জনের মধ্যে আমাদের জনবল রয়েছে ১০১জন। তবুও চিকিৎসক-নার্সসহ সব কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে নিয়ে রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি।
সিভিল সার্জন ডা. আহাম্মদ কবীর বলেন, নতুন ভবনটি ২০২৩ সালের জুনে বুঝিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। পরে সংশ্লিষ্টরা মেয়াদ বাড়িয়েছেন। এবছরের ডিসেম্বরে মধ্যে ভবনটি আমাদেরকে বুঝিয়ে দেবেন বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এ বিষয়ে বার বার সমন্বয় সভায়ও বলেছি। গণপূর্ত বিভাগে বাজেট সংকটের কথা বলছেন। আমরা আশা করি দ্রুতই এ সংকট সমাধান হয়ে আমাদের ভবনটি বুঝিয়ে দিবেন। আর ভবন বুঝে পেলে আমাদের কার্যক্রম চালু হবে এবং চিকিৎসক ও লোকবল নিয়োগ হবে।
নির্মিতব্য ২৫০ শয্যা হাসপাতাল ভবনের নিযুক্ত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাথে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে নির্মাণাধীন ভবনের কাজ দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা মো. তারেক বলেন, আমি এখন আর কাজটির সঙ্গে জড়িত না। তবে জেনেছি ভবনটি নির্মাণে বাজেট সংকট দেখা দিয়েছে। তাই কাজ বন্ধ।
এবিষয়ে জানতে লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায় নি। জানা গেছে চাঁদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী নাসিম আহমেদ টিটু লক্ষ্মীপুরে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। মাঝে মাঝে তিনি লক্ষ্মীপুরে আসেন। তার ব্যক্তিগত মোবাইল ফোনে কল করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে লক্ষ্মীপুর গণপূর্ত কার্যালয়ের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নাজমুল করিম বলেন, ভবনটির কাজ শেষের দিকে। কিন্তু নির্মাণ ব্যয়ে বাজেট সংকট দেখা দিয়েছে। এখনও পুরো বাজেট আসেনি। ঠিকাদারও বাড়তি কাজ করে রেখেছে। বাজেট পাশ হলে দ্রুত ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ কবে। এছাড়া আরো কোন তথ্য তিনি দিতে পারেননি।