বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ফেলানী হত্যার ন্যায়বিচার এবং সীমান্তে নির্বিচারে হত্যা বন্ধের দাবিতে আয়োজিত “মার্চ ফর ফেলানী-২০২৫” সফলভাবে সম্পন্ন হয়েছে। কুড়িগ্রামের জেলা শহর থেকে শুরু হয়ে ফেলানী হত্যার স্থল সীমান্তে গিয়ে শেষ হওয়া এই লং-মার্চে সাধারণ মানুষ, ছাত্র-জনতা, পেশাজীবী সংগঠন এবং মানবাধিকার কর্মীদের বিশাল অংশগ্রহণ দেখা যায়।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) সকালে কুড়িগ্রামের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এই লং-মার্চে যোগ দেন। জাতীয় নাগরিক কমিটি এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে এই আয়োজন সীমান্ত হত্যার বিরুদ্ধে এক ঐতিহাসিক প্রতিবাদে রূপ নেয়।
লং-মার্চে বক্তব্য রাখেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম। তিনি বলেন,
“সীমান্তে লাশের মিছিল আর দেখতে চাই না। এটি মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। ন্যায়বিচারের জন্য আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে।”
জাতীয় নাগরিক কমিটির কেন্দ্রীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ড. আতিক মুজাহিদ বলেন,
“বিএসএফ কর্তৃক ফেলানীসহ ৬০০ নিরপরাধ বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়েছে। সীমান্ত হত্যা বন্ধে আন্তর্জাতিক চাপ ও কার্যকর নীতিমালা প্রয়োজন। আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব, যতদিন ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত না হয়।”
২০১১ সালে ১৫ বছর বয়সী ফেলানী খাতুনকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) গুলি করে হত্যা করে। তার লাশ কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে থাকার মর্মান্তিক দৃশ্য আজও জাতির হৃদয়ে গভীর দাগ কেটে আছে। এই হত্যার ১৪ বছর পেরিয়ে গেলেও ফেলানীর পরিবার বিচার পায়নি।
২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে অন্তত ৬০০-এর বেশি বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন বলে মানবাধিকার সংস্থাগুলোর তথ্য জানিয়েছে।
লং-মার্চের শেষ বক্তব্যে আয়োজকরা বলেন,
“সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ কুড়িগ্রাম থেকে শুরু হলেও এই আন্দোলন সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণে জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতা নেওয়া হবে।”
সীমান্ত হত্যা বন্ধের এই দাবিকে একটি ঐতিহাসিক মাইলফলক হিসেবে আখ্যা দিয়ে আয়োজকরা মনে করেন, “মার্চ ফর ফেলানী-২০২৫” বাংলাদেশের প্রতিবাদী জনগণের ঐক্যের নতুন ইতিহাস সৃষ্টি করেছে।