আমরা একটি সাম্যের দেশ চেয়েছি। আমরা চাই এমন একটি রাষ্ট্র তৈরি হোক, যেখানে বিভিন্ন ধর্মের, বর্ণের, গোত্রের, চিন্তার সব মানুষ সমান অধিকার ভোগ করবে। এই আদর্শ মাথায় রেখে একটি রাষ্ট্র তৈরি করা হোক।
পুলিশি যে ব্যবস্থা তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কার দরকার।
বাংলাদেশে এখনো পুলিশি ব্যবস্থা সম্পূর্ণ নিবর্তনমূলক। কিন্তু আমরা দেখলাম, নিবর্তনমূলক ব্যবস্থাগুলো সংস্কার না করে বরং আগে যে ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে বিএনপি, জামায়াতের লোকজনকে আক্রান্ত করা হচ্ছিল, সেই একই ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে এখন আওয়ামী লীগের লোকজনকে আক্রান্ত করা হচ্ছে। পুলিশের হেফাজতে মৃত্যু বন্ধ হয়নি। বেনামি মামলা করার নীতি বন্ধ হয়নি।
পুলিশের বলপ্রয়োগ করার নীতি বন্ধ হয়নি। পুলিশের যে সংস্কার দরকার ছিল সেই সংস্কার এখনো হয়নি। আমরা পুলিশের সংস্কার চাই।
আমাদের প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সুযোগ ছিল।
বাংলাদেশের যে প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থাকে আমরা নতুন করে চিন্তা করতে চাই। নানা রকম বাহ্যিক হুমকি আছে। কোন পন্থায় এগিয়ে নিজের দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করব, সেটি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে।
রাষ্ট্রের নিবর্তনমূলক ক্ষমতাকাঠামোগুলো দূর হয়নি। আমরা দেখছি রাষ্ট্র একই রকম নানা রকম বল প্রয়োগ করে যাচ্ছে।
আমরা এই নিবর্তনমূলক ক্ষমতাকাঠামো ও রাষ্ট্রকাঠামোর পরিবর্তন দেখতে চাই। আমরা এমন কোনো কাঠামো চাই না, যে কাঠামোতে আবার কেউ শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে পারেন।
আরও পড়ুন:ছাগলকাণ্ডে আলোচিত সেই মতিউর ও তার স্ত্রী গ্রেপ্তার
নির্বাচনীব্যবস্থার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে আমরা চাই, নির্বাচনে অর্থের ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা হোক। আমাদের দেশে বারবার লুটেরারা নির্বাচনে জিতে যায়। বিভিন্ন সিন্ডিকেটের লোকজন মানুষকে শোষণ করে খায়। ব্যবসায়ীরা বারবার করে নির্বাচিত হয়। আমাদের কাঠামোটাই এমন একটা নির্বাচন করতে গেলে যে পরিমাণ অর্থ লাগে ওই পরিমাণ টাকা কোনো একজন সৎ ভালো মানুষের কাছে থাকা সম্ভব নয়। নির্বাচনে কালো টাকার খেলা বন্ধ না হলে নির্বাচনের কোনো পরিবর্তন ঘটবে না।
এখানে পাবলিক ফিন্যান্সের কথা ভাবা যেতে পারে। স্ক্যান্ডেনেভিয়ান অনেক দেশে এই ব্যবস্থা আছে। নির্বাচনের জন্য যে টাকা সে টাকার বরাদ্দ প্রার্থিতার বিবেচনায় রাষ্ট্র থেকে দেওয়া হবে। বরাদ্দকৃত টাকা থেকে বেশি খরচ করা যাবে না। এটি শুধু আইন করে নয়, আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ জিনিস হচ্ছে আনুপাতিক প্রতিনিধি। আমরা চাই আনুপাতিক প্রতিনিধি বা এ ধরনের ব্যবস্থা আসুক। তা না হলে দলীয় বৃত্ত থেকে বের হওয়া যাবে না। হয়তো এখন আওয়ামী লীগ-বিএনপি থাকবে না, বৃত্তটা বিএনপি-জামায়াত হয়ে যাবে। দ্বিদলীয় বৃত্ত কিন্তু এই নির্বাচনব্যবস্থায় থাকলে ভোট নষ্ট হবে। কারণ কাঠামোটাই এমন, সবাই কোনো একটা শক্তিকে ঠেকাতে অন্য কাউকে ভোট দেবে। ধরা যাক, কোনো একজনের নতুন একটি রাজনৈতিক দলকে পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সে এ কথা চিন্তা করে ভোট দেয়নি যে আমি যদি তাকে ভোট দিই, তাহলে সে তো ৮ কিংবা ১০ শতাংশের বেশি ভোট পাবে না। ওই ভোট পেয়ে লাভ কী। ভোটটা নষ্ট হবে। এই ভোট নষ্ট হওয়ার চিন্তা দূর করার একমাত্র উপায় হচ্ছে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা।
সংবিধানের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীর যে বাড়তি ক্ষমতাগুলো দেওয়া হয়েছে সেগুলোকে পরিমিত করে দেওয়া দরকার। যাতে চাইলেও কেউ শেখ হাসিনা হয়ে উঠতে না পারেন। সংবিধানে ‘সেপারেশন অব পাওয়ার’ যে তিনটা ব্রাঞ্চ, এই তিনটি ব্রাঞ্চের সঙ্গে আলাদা আলাদা করে কিভাবে সেপারেশন অব পাওয়ার রাখবে এবং এগুলোতে কোনো কনফ্লিক্ট তৈরি হলে কিভাবে রিসলভ হবে তাই নিয়ে সংবিধানের আরো নতুন ধারা দরকার। সঙ্গে সঙ্গে আরো যেটা জরুরি সেটা হলো ফ্লোর ক্রসিংয়ের যে নিয়ম আছে, সেটি পরিবর্তন করা দরকার। যদি আমাকে দলদাস হিসেবেই ভোট দিতে হয়, তাহলে আমার সংসদে যাওয়া আর কলাগাছের যাওয়ার তফাত কী? সংবিধানের যে গঠনকাঠামো সেই গঠনকাঠামোতে মানুষের যে মৌলিক অধিকারগুলো মানবাধিকার হিসেবে স্বীকৃত না সেগুলো সংবিধানে রাখলেই হয়ে যাবে, এমন না। তবে স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর এসে যদি আমরা মানুষের মৌলিক অধিকারগুলো মৌলিক অধিকার হিসেবে সংবিধানে স্বীকৃতি দিতে পারি, তাহলেও সেটা একটা বড় ব্যাপার হবে।