মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটে নতুন আরোপিত ভ্যাট না কমালে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। এতে কাজ না হলে প্রয়োজনে সচিবালয় ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবেন তারা।
রবিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ‘মোবাইল ও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর অতিরিক্ত সম্পূরক শুল্ক আরোপের প্রতিবাদে’ আয়োজিত মানববন্ধন থেকে এ হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশন, ভয়েস ফর রিফর্ম ও টেকনোলজি ইন্ড্রাস্ট্রি পলিসি এডভোকেসি প্ল্যাটফর্ম (টিআইপিএপি) যৌথভাবে এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।
মানবন্ধনে অংশ নেওয়া ব্যক্তিরা এ সময় ‘জনগণের ওপর কর না বসিয়ে সরকারি অপচয় বন্ধ করুন’; `১০০ টাকা মোবাইল টপ আপে ৭০ টাকা যায় সরকারের পকেটে!’; মোবাইল ব্যবহার ও সিগারেট খাওয়া কি এক হলো? কেন তাহলে সিগারেটের মতো সম্পূরক শুল্ক?’ ‘ইন্টারনেট না থাকলে জুলাই বিপ্লব হতো না!’ এমন ধরনের বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড ধারণ করেন।
মানববন্ধন কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরাম ও আইআইজিএবি’র সভাপতি আমিনুল হাকিম বলেন, ‘শতভাগ দেশীয় উদ্যোক্তার মাধ্যমে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা প্রদান করা হয়। এই সেবা খাত ধ্বংস করার অপচেষ্টা আগেও করা হয়েছে এখন আবার নতুন করে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক ও সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত করায় গ্রাহকের ভোগান্তি যেমন বাড়বে একইভাবে এই সেবাখাত ধ্বংস হয়ে যাবে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে যদি এই ধরনের হঠকারি সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার না করা হয় তাহলে আমরা গ্রাহক এবং সেবা খাতের সবাইকে নিয়ে এনবিআর কার্যালয় ঘেরাও করব।’
আইএসপিএবি’ র সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমাদের ছোট ছোট উদ্যোক্তা যেমনভাবে হুমকির মুখে পড়বে ঠিক একইভাবে গ্রাহকদের উপর অতিরিক্ত করের বোঝার চাপ বাড়বে। ফোনে ইন্টারনেট সেবা বিমুখ হবে জনগণ যা নতুন করে বৈষম্য তৈরি করবে।’
বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশনের সাবেক পরিচালক খালিদ আবু নাসের বলেন, ‘নতুন করে করের বোঝা শুধু জনগণকেই ভোগান্তিতে ফেলবে না, সরকারকে ১০ নম্বর বিপদ সংকেতে ফেলবে। হঠকারী মূলক সিদ্ধান্ত দ্রুত প্রত্যাহার করতে হবে।’
প্রযুক্তিবিদ ও প্রযুক্তি শিল্প উদ্যোক্তা বেসিসের সাবেক সভাপতি ফাহিম মাশরুর বলেন, ‘কারো সঙ্গে আলোচনা না করে নতুন করে ইন্টারনেট সেবায় কর আরোপ করা এক ধরনের স্বৈরাতান্ত্রিক আচরণ। নতুন করে কর বৃদ্ধি করলে টেলিযোগাযোগ ইন্টারনেট সেবা খাত হুমকির মুখে পড়বে। নতুন উদ্যোক্তা তৈরি তো দূরে থাক, গ্রাহকরা এই সেবা গ্রহণ করতে পারবে না, ফলে নতুন করে কর আদায় করার যে সিদ্ধান্ত -তা হোঁচট খাবে।’
বাংলাদেশ মোবাইল ফোন রিচার্জ ব্যবসায়ী এসোসিয়েশনের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলু বলেন, এই সংকটের মধ্যে এনবিআর সামাজিক দায়বদ্ধতা ভুলে গিয়ে রাষ্ট্রের অর্থ যোগানোর জন্য জনগণের পকেট কাটার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অথচ দেশে কল ড্রপ, কথা না বোঝা, এবং পর্যাপ্ত নেটওয়ার্ক পরিষেবা না থাকার মতো সমস্যা এখনো রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান না করে, নতুন করে ভ্যাট বাড়ানোর সিদ্ধান্তকে আমরা মেনে নিতে পারছি না।
সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক এসোসিয়েশনের সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্নীতিবাজ রাজস্ব কর্মকর্তাদের খুশি করতেই তাদের পরামর্শে এই ধরনের হঠকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা ভেবেছিলাম ৫ই আগস্ট এর পর আর রাজপথে দাঁড়াতে হবে না। কিন্তু আজ দুঃখের সঙ্গে আমাদের রাজপথে দাঁড়াতে হলো। গ্রাহক স্বার্থ বিবেচনা না করে কারো সঙ্গে আলোচনা না করে রাতের আঁধারে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা জনগণের সঙ্গে নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করল। এক সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন না করলে আমরা এনবিআর কার্যালয়ের সামনে অবস্থান করা সহ কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবো।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন প্রযুক্তিবিদ ফিদা হক, ফ্রিল্যান্সারদের প্রতিনিধি আনিস, পাঠাও এর সিইও ফাহিম আহমেদ প্রমুখ।