Homeজাতীয়ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ঠেকানোর চ্যালেঞ্জে ইসি

ভোটার তালিকায় রোহিঙ্গা ঠেকানোর চ্যালেঞ্জে ইসি

উনিশ বছর বয়সী সুমাইয়া আক্তার। মুখে নেকাব, পরেছেন বোরকা। অপরিচিত মো. ইসমাইলকে (৬৫) বানান বাবা। তাঁর পরনে সাদা পাঞ্জাবি ও মাথায় সাদা টুপি। দেখলে যে কারও মনে হবে, তারা বাংলাদেশি বাবা-মেয়ে। সুমাইয়া নির্বাচন কমিশনে (ইসি) গিয়েছিলেন জাতীয় পরিচয়পত্র করতে। সবকিছুই ঠিকঠাক ছিল। ছবি তুলতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় সুমাইয়াকে চ্যালেঞ্জ করেন কর্মকর্তারা। এক পর্যায়ে নিজেকে রোহিঙ্গা নাগরিক হিসেবে পরিচয় স্বীকার করেন সুমাইয়া। তথ্য-উপাত্ত ঘেঁটে নিশ্চিত হওয়া যায়, তাঁর প্রকৃত নাম সুমি আক্তার। সুমাইয়া আক্তার মুন্নী নামে অন্য একটি জন্মসনদ জমা দিয়েছিলেন তিনি।

গত ১১ ডিসেম্বর আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে সুমাইয়াসহ তিনজনকে আটক করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবু জাফর মোহাম্মদ সালেহ বলেন, বিভিন্ন স্থানে কিছুদিন পরপর রোহিঙ্গা আটকের ঘটনা উদ্বেগের।

সুমাইয়া আক্তারের মতোই চট্টগ্রামে কখনও জাতীয় পরিচয়পত্র বানাতে গিয়ে, কখনওবা নিবন্ধন সনদ তৈরি করতে গিয়ে বা পাসপোর্ট বানাতে গিয়ে আটক হচ্ছে রোহিঙ্গা নাগরিক। কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামের দূরত্ব কম হওয়ায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ড, জেলার ১৫ উপজেলাকে নিরাপদ জায়গা হিসেবে বেছে নেয় তারা। সেখানে বিভিন্ন গ্রুপের সঙ্গে মোটা অঙ্কের টাকার চুক্তির মাধ্যমে নিচ্ছে বাংলাদেশি নাগরিকত্বের পরিচয়পত্র।

এসব রোহিঙ্গা এখন ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে নির্বাচন কমিশনের। রোহিঙ্গা নাগরিকদের কারণে বড় ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে চট্টগ্রামের বাসিন্দাদেরও। এ অবস্থায় আসন্ন ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে রোহিঙ্গা ঠেকানোই ইসির প্রধান ‘চ্যালেঞ্জ’ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে চট্টগ্রামকে ‘বিশেষ এলাকা’ হিসেবে চিহ্নিত করে ভোটার তালিকা হালনাগাদে ‘বিশেষ’ কড়াকড়ি জারি করেছে কমিশন।

নতুন বছরের প্রথম দিনে চট্টগ্রামের আনোয়ারার পারকি সমুদ্রসৈকতের পরুয়াপাড়া এলাকা থেকে একসঙ্গে ২০ রোহিঙ্গাকে আটক করা হয়। পরে তাদের সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। এর এক দিন আগে গত ১৯ ডিসেম্বর পারকি সমুদ্র এলাকা থেকে ২৫ রোহিঙ্গাকে আটক করে কোস্টগার্ডের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা।
সর্বশেষ গত ৯ জানুয়ারি মো. সাবের (২২) নামে এক রোহিঙ্গা যুবককে আটক করা হয়। তিনি উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্পের বাসিন্দা। পটিয়া উপজেলা নির্বাচন অফিসে মামার জাতীয় পরিচয়পত্রের ব্লক খুলতে এসে আটক হন তিনি।


আরও পড়ুন:সারদায় কনস্টেবলদের স্থগিত হওয়া সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত


পটিয়া উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘তাঁর কথাবার্তায় সন্দেহ হওয়ায় আমরা তাঁকে চ্যালেঞ্জ করি। তিনি নিজেকে গাজীপুরের ভোটার ও পটিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী পরিচয় দেন। তবে তিনি ভালো করে চলিত ভাষায় কথা বলতে পারেন না। এক পর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত যাচাই-বাছাই শেষে আমরা নিশ্চিত হই, মো. সাবের নিজেও একজন রোহিঙ্গা নাগরিক। পরে জিজ্ঞাসাবাদে সাবের জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে কক্সবাজারের উখিয়া বালুখালী ক্যাম্পে আসেন তিনি। ২০২২ সালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার হন এবং এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করেন। এখন পটিয়ার একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করছেন।’

এর আগে রোহিঙ্গা নারী রমজান বিবি চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার বাসিন্দা দেখিয়ে লাকী নাম ব্যবহার করে ভোটার হন। ভুয়া নাম-ঠিকানার এই রোহিঙ্গা নাগরিকের জাতীয় পরিচয়পত্রটি (এনআইডি) দেখা যায় ইসির সার্ভারেও। কিন্তু কমিশনের কাছে তাঁর ভোটার হওয়ার কোনো কাগজপত্র সংরক্ষিত ছিল না। পরে লাকীর ভুয়া পরিচয়পত্রের তথ্য সন্ধান করতে গিয়ে ৭৩টি ভুয়া এনআইডির তথ্য ইসির সার্ভারে থাকার ঘটনা উঠে আসে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ইউনুচ আলী বলেন, ‘কক্সবাজারের কাছাকাছি হওয়ায় চট্টগ্রাম অঞ্চলকে বেছে নিয়েছে রোহিঙ্গারা। এ কারণে প্রায়ই রোহিঙ্গা নাগরিক আটক হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে আমরাও বিব্রত। এ কারণে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমে রোহিঙ্গা ঠেকানোই আমাদের বড় চ্যালেঞ্জ। একজন রোহিঙ্গাও যাতে ভোটার হতে না পারে, সেদিকে বাড়তি নজর রাখতে নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কঠোর বার্তা দিয়েছে কমিশনও।’

চট্টগ্রাম নির্বাচন অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘কয়েক দিন পরপর চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গা নাগরিক আটক হওয়ার ঘটনায় কমিশন উদ্বিগ্ন। কারণ, অতীতে চট্টগ্রামে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে অনেক রোহিঙ্গা কৌশলে ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিল। ভোটার হালনাগাদ কার্যক্রমে তাই এ বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে কারও গাফিলতি বা অবহেলা বরদাশত করবে না কমিশন। এটি এখন সবার জন্যই চ্যালেঞ্জের।’

জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এরই মধ্যে নিজ নিজ এলাকার নির্বাচনী কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিদ্যমান ভোটারসহ প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত চাওয়া হয়েছে। কোন এলাকায় কতজন তথ্য সংগ্রহ কর্মকর্তা প্রয়োজন, কোন এলাকার বিদ্যমান ভোটার সংখ্যা কতসহ নিজ নিজ এলাকার সার্বিক বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট এলাকা থেকে তথ্য পাওয়ার পর পরবর্তী কাজ শুরু করবে কমিশন। সতর্কতা হিসেবে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছাড়া এবার মিলবে না ভোটার ফরম।

সর্বশেষ খবর