Homeজাতীয়বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেল শহীদ নাজমুলের পরিবার

বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের আর্থিক সহায়তা পেল শহীদ নাজমুলের পরিবার

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ নাজমুল কাজীর পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন। আজ বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটায় বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে শহীদ নাজমুলের পরিবারের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে আর্থিক সহায়তার ৩ লাখ টাকার চেক তুলে দেওয়া হয়।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বসুন্ধরা গ্রুপের উপদেষ্টা নন্দিত কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমুল হাই, বসুন্ধরা গ্রুপের প্রেস অ্যান্ড মিডিয়া উপদেষ্টা মোহাম্মদ আবু তৈয়ব।

উপস্থিত অতিথিরা বলেন, ‘যে সাহসিকতা ও আত্মত্যাগের সঙ্গে নাজমুল কাজী দেশমাতার জন্য জীবন দিয়েছেন, তা চিরদিন স্মরণীয় থাকবে।

তাদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক ও সামাজিক দায়িত্ব। আর বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের শহীদ পরিবারটির পাশে থাকা দেশপ্রেম ও কৃতজ্ঞতার অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।’
বক্তরা বলেন, ‘এই উদ্যোগের মাধ্যমে ফাউন্ডেশনটি দেশের স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগকারী বীরদের পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। শহীদ নাজমুল কাজীর পরিবারের প্রতি আর্থিক সহায়তা প্রদান করে তারা প্রমাণ করেছে, স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য জীবন উৎসর্গকারী বীরদের আত্মত্যাগ কখনোই ভুলে যাওয়া যায় না।


আরও পড়ুন:ধামইরহাটে ফসলি জমি নষ্ট করে পুকুর খননের দায়ে ভ্রাম্যমান আদালতে জরিমানা


নাজমুল ২০২৪ সালের জুলাই ছাত্র-জনতার আন্দোলনের উত্তাল সময়ে জনগণের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করেছিলেন। তিনি খাদ্য ও পানীয় বিতরণের সময় পুলিশের গুলিতে নির্মমভাবে প্রাণ হারান। তার এ আত্মত্যাগ আমাদের মুক্তিসংগ্রামের ইতিহাসে এক উজ্জ্বল অধ্যায় হিসেবে স্থান পেয়েছে। আজ তার স্ত্রী মারিয়া সুলতানা ও আড়াই বছরের কন্যা আরিয়ানা কাজী নুজাইরার জীবনে বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের এই উদ্যোগ নতুন আশা দেখিয়েছে।


বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নাসিমুল হাই জানান, বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন দীর্ঘদিন ধরে সমাজসেবামূলক কার্যক্রমে সম্পৃক্ত। তাদের লক্ষ্য, দেশের উন্নয়নে অসহায় ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

তিনি বলেন, ‘দেশের জন্য আত্মত্যাগকারীদের প্রতি সম্মান জানাতে আমরা সবসময়ই প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ধরনের উদ্যোগ আমাদের সামাজিক দায়বদ্ধতারই প্রতিফলন।’

তিনি আরো জানান, এই উদ্যোগ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশনের মহৎ মানসিকতার প্রতীক।

স্বাধীনতা ও গণতন্ত্রের জন্য আত্মত্যাগকারীদের পরিবারকে সম্মান জানিয়ে তারা দেশপ্রেমের এক উজ্জ্বল উদাহরণ স্থাপন করেছে। শহীদ নাজমুল কাজীর পরিবার নতুন আশায় পথচলা শুরু করেছে, আর এই মানবিক উদ্যোগ দেশবাসীর হৃদয়ে এক অনন্য স্থান করে নিয়েছে।
শহীদ নাজমুল কাজীর স্ত্রী মারিয়া সুলতানা আবেগতাড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার স্বামী আমাদের স্বাধীনতার জন্য জীবন দিয়েছেন। আজ বসুন্ধরা ফাউন্ডেশন আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে প্রমাণ করেছে, তার আত্মত্যাগ জাতি ভুলে যায়নি। এই সহায়তা আমাদের নতুন করে বাঁচার শক্তি ও সাহস দিচ্ছে।’

এ সময় ছোট্ট আরিয়ানা মোবাইলে বাবার ছবি দেখে বারবার কান্না করছিল। তার নিষ্পাপ চাহনি যেন জানিয়ে দিচ্ছিল, এই সহায়তা তার ভবিষ্যৎ গড়ার পথে বড় ভূমিকা রাখবে।

নাজমুলের স্ত্রী মারিয়া জানান, ১৮ জুলাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্বামী নাজমুল কাজী জানতে পারেন শনির আখড়ায় আন্দোলনকারীদের জন্য পানি ও শুকনা খাবার প্রয়োজন। তাই দেরি না করে মোহাম্মদবাগের বাসা থেকে বের হয়ে পার্শ্ববর্তী একটি দোকান থেকে কিছু পানির বোতল ও শুকনা খাবার নিয়ে আন্দোলনকারীদের মাঝে বিতরণ করেন নাজমুল।

এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সেখানে থাকা অস্ত্রধারীরা তাকে ব্যাপক মারধর ও ছুরিকাঘাত করে রাস্তায় ফেলে রেখে যায়। এ সময় মুমূর্ষু অবস্থায় তাকে স্থানীয় অনাবিল হাসপাতালে নিয়ে যান দুই পথচারী। কিন্তু প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় আন্দোলনে আহত কাউকে চিকিৎসা দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত একটি রিকশায় করে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়। পরবর্তীতে তিনি (স্ত্রী মারিয়া) খবর পেয়ে বিকাল ৫টায় ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছান। সেখানে গিয়ে এক সারিতে ৫ জনের লাশ দেখতে পান। এর মধ্যে একজন ছিলেন তার স্বামী নাজমুল কাজী।

জানা গেছে, নাজমুলের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার দৌলতপুরে। বাবা সেলিম কাজী ও মায়ের নাম নাজমা বেগম। গত ৪-৫ বছর ঢাকার রায়েরবাগের মোহাম্মদবাগ এলাকায় কাপড়ের কেমিক্যালের ব্যবসা করতেন নাজমুল। স্ত্রী ও আড়াই বছর বয়সের একমাত্র সন্তান আরিয়ানাকে নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকতেন। আর বাবা-মা ও ছোট দুই ভাই থাকেন গ্রামের বাড়ি মুরাদনগরের দৌলতপুরে।

সর্বশেষ খবর