Homeঅর্থনীতিবিএসইসির চেয়ারম্যানকে সরাতে চাই না: অর্থ উপদেষ্টা

বিএসইসির চেয়ারম্যানকে সরাতে চাই না: অর্থ উপদেষ্টা

অনেকের দাবি থাকলেও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদকে পদ থেকে সরাতে চাই না। মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা পরিষদ কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, কাল না পরশু আমি বললাম, অনেকে সরাতে বলছে। আমি বললাম ‘না, আমি সরিয়ে দিতে চাই না’। অথচ একজন (সাংবাদিক) লিখেছেন, ‘উনি সরিয়ে দিতে তৈরি হয়েছেন’।

এদিকে সরকারের কিছু সংস্কার কার্যক্রমের কারণে শেয়ারবাজারে দরপতন হতে পারে বলে মনে করছেন সালেহউদ্দিন আহমেদ। আজ দুপুরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পরিদর্শন এবং শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে এক সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, শেয়ারবাজারে দরপতন হচ্ছে কিছু সংস্কার কার্যক্রমের জন্য। বিষয়টি এমন নয় যে কাউকে সুযোগ দিতে কোনো নীতি সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে বা এর কারণে কোনো দরপতন হচ্ছে।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক, শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির চেয়ারম্যান রাশেদ মাকসুদ, ডিএসইর চেয়ারম্যান মোমিনুল ইসলাম, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, আইসিবির চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ। এর বাইরে অর্থ উপদেষ্ঠার সঙ্গে বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএর, নিরীক্ষকদের নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফআরসির ঊধ্বর্তন কর্মকর্তা, ডিএসই ও সিএসই পরিচালকবৃন্দ, ব্রোকারেজ হাউস, মার্চেন্ট ব্যাংক ও সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানিগুলোর নেতৃবৃন্দ।

শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে বৈঠকে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আরও বলেন, সব সংস্কারের কিছু যন্ত্রণা থাকে। তাই শেয়ারবাজারের সংস্কার কার্যক্রমেরও কিছু যন্ত্রণা সাময়িকভাবে সইতে হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান হচ্ছে শেয়ারবাজারকে শক্তিশালী করা।

অর্থ উপদেষ্টা বলেন, কিছু সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। আর কিছু সুপারিশ শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে শুনেছি। এখন যেভাবে কোম্পানিগুলোতে ব্যাংক অর্থায়ন চলছে, আমরা এভাবে চাই না। ব্যাংকের ঋণনির্ভর অর্থনীতি টেকসই কোনো অর্থনীতি নয়। ব্যাংক থেকে টাকা নিয়ে শিল্প গড়লে অনেক সময় টাকা ফেরত না দিলেও চলে। এ কারণে আমাদের দেশে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ার ক্ষেত্রে ব্যাংক ঋণনির্ভরতা বেশি।

তিনি আরও বলেন, দেশে ভালো ভালো অনেক কোম্পানি আছে, যারা শেয়ারবাজারে আসে না। পরিবারের মধ্যে মালিকানা ধরে রাখতে চায়। আমরা ভালো কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আসা উৎসাহিত করতে চাই।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের শেয়ারবাজারের গভীরতা অনেক কম। ভালো ভালো কোম্পানিগুলো এই বাজারে আসতে খুব বেশি আগ্রহী নয়। এসব কোম্পানির মালিকেরা ভাবেন, ছেলে হবে পরিচালক, বউ চেয়ারম্যান। ব্যবসায় যা মুনাফা হবে, তা নিজেরা ভোগ করবেন। শেয়ারবাজারে আসা মানেই ভালো ব্যবস্থাপনা, করপোরেট সুশাসন ইত্যাদি উন্নত হওয়া। কিন্তু অনেকে এসব বিষয়ে প্রশ্নের মুখোমুখি হতে চান না। সময় এসেছে বাজারের গভীরতা বাড়ানোর। এ জন্য ভালো ভালো কোম্পানি বাজারে আনতে হবে। আর তার জন্য করের সুবিধাসহ সরকারি যেসব নীতি–সহায়তা দরকার, সেসব বিষয় সরকার বিবেচনা করবে। কিছু সরকারি কোম্পানি বাজারে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

দেশে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয়েরও বড় সমস্যা রয়েছে মন্তব্য করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, দলগতভাবে দেশের কল্যাণে কাজ করার উদ্যোগেরও ঘাটতি আছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির মধ্যে সমন্বয় বা যোগাযোগ কমে গেছে। শেয়ারবাজারের স্বার্থে এই যোগাযোগ ও সমন্বয় বাড়ানোর পাশাপাশি দলগতভাবে কাজ করার ক্ষেত্রে বাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে এগিয়ে আসতে হবে।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, শেয়ারবাজারে সূচক বাড়লেই সবাই খুশি হন। কিন্তু বাজার যখন বেশি ওপরের দিকে যায়, তখন একটু সতর্ক হতে হবে। অনেক সময় নিয়ন্ত্রক সংস্থার ভুল নীতির কারণেও শেয়ারবাজারে সমস্যা দেখা দেয়। সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন।

শেয়ারবাজারে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগ বাড়াতে উদ্যোগ গ্রহণের জন্য ডিএসইসহ শেয়ারবাজার–সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রতি আহ্বান জানান সালেহউদ্দিন আহমেদ।

বৈঠক বিষয়ে ডিএসইর চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম সমকালকে বলেন, অর্থ উপদেষ্টাকে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্টদের কিছু কথা শোনার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। সে অনুরোধে তিনি সাড়া দিয়েছেন। ডিএসই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের সাথে সকল নিয়ন্ত্রক সংস্থাও দায়িত্বশীলরাও উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে শেয়ারবাজারকে অর্থনীতির স্বার্থে আরও কার্যকরভাবে ব্যবহার করার জন্য কী করা উচিত সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানান মমিনুল ইসলাম। এর বাইরে বিদ্যমান সমস্যাগুলোর নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

ডিএসইর চেয়ারম্যান বলেন, শেয়ারবাজারের উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষের, বিশেষত বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিএসইসির মধ্যে সমন্বয় আরও বাড়ানো কথা বলেছেন অর্থ উপদেষ্টা। বন্ড বাজার উন্নয়নে আইডিআরএর সহায়তা লাগবে। ভালো কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করতে হলে এনবিআরের দিক থেকে কর বিষয়ে ছাড় দরকার। বাজারের অন্যতম সমস্যা মূলধনী লোকসানি অ্যাকাউন্টগুলোর বিষয়ে কী করা হবে, তা নিয়েও আলোচনা হয়েছে।

বিএসইসির চেয়ারম্যান স্বীকার করেছেন, এ বাজারের উন্নয়নে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জকে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে। এক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জ যাতে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, তার জন্য বিএসইসি সব সহায়তা করবে, অতীতের মত ডিএসইর ভূমিকাকে ‘খাটো’ করা হবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।

এছাড়া সাধারণ বিনিয়োগকারীদের গুজব নির্ভর বিনিয়োগ থেকে বের করে গবেষণা নির্ভর বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার জন্য রিসার্স অ্যানালিস্ট এর অনুমোদন দেওয়া এবং এক্ষেত্রে শিক্ষণ প্রতিষ্ঠান বিআইসিএম এবং বিএএসএমকে কাজে লাগানোর কথাও এসেছে।

প্রবাসী বাংলাদেশিদের শেয়ারবাজারে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করার উপায় নিয়েও আলোচনা হয় বলে জানান ডিএসইর চেয়ারম্যান।

সর্বশেষ খবর