২০১১ সালের বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি শোকাবহ দিন হয়ে আছে ফেলানী নামটি। ফেলানী, ১৫ বছরের এক তরুণী, যে সীমান্তে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর অত্যাচারের শিকার হয়ে নিহত হয়েছিল । এই ঘটনা বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং ন্যায়বিচারের অভাবের এক চরম উদাহরণ হিসেবে চিহ্নিত হয়।
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি, ফেলানী ভারতের কুচবিহার জেলার শীতলকুচি সীমান্ত পার করতে গিয়ে বিএসএফ সদস্যদের হাতে নিহত হয়েছিল। বাংলাদেশের উদ্দ্যেশ্যে ভারতীয় সীমান্ত এলাকা পার হওয়ার সময় ভারতীয় বিএসএফের হাতে আটক হয়।
তবে, সবচেয়ে হৃদয়বিদারক ঘটনা ছিল তার পরে।ফেলানী কে বি এস এফ সদস্যরা নির্মম নির্যাতন করে।তাকে অর্ধমৃত অবস্থায় ফেলে রাখে। ফেলানী তখনও জীবিত ছিলো, কিন্তু বিএসএফ সদস্যরা তাকে গুলি করে হত্যা করার পর তার লাশটি সীমান্তের তারের বেড়ায় ঝুলিয়ে রাখে । এই ঘটনা ছিল মানবাধিকারের প্রতি তীব্র অবমাননা এবং বিরুদ্ধ নির্যাতন ।
ফেলানীর হত্যাকাণ্ড শুধু একটি সাধারণ হত্যাকাণ্ড ছিল না, এটি বাংলাদেশের জন্য একটি সীমান্ত হত্যার অন্ধকার অধ্যায় । এই হত্যাকাণ্ডের পর বিশ্বব্যাপী নিন্দার ঝড় ওঠে , বাংলাদেশ সরকার প্রতিবাদ জানায়, এবং ন্যায়বিচারের দাবি তোলেন।
বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মধ্যে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেন, বিএসএফের পক্ষ থেকে এমন নির্মমতা মানবাধিকার লঙ্ঘন । তাদের অভিযোগ ছিল, সীমান্তে এমন ধরনের হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক আইন ও নৈতিকতার পরিপন্থী।
ফেলানীর হত্যাকাণ্ড বাংলাদেশের জনগণের মাঝে এক গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি করেছিল। দেশব্যাপী জনমত এবং বিশ্বের মানবাধিকার সংস্থাগুলোর প্রতিবাদ সরকারের কাছে ন্যায়বিচারের দাবি জানায়। তবে, ভারতীয় কর্তৃপক্ষের কাছে এর কোন বিচার পাওয়া যায়নি। বিএসএফের জবাবদিহিতা ও যে সেনা সদস্য ফেলানীকে হত্যা করেছে তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।
ফেলানীর পরিবার ছিল এক গভীর শোকে, তারা বিচারের জন্য অসংখ্য বার আবেদন করেছিল, কিন্তু বিচারপ্রাপ্তির নিশ্চয়তা কখনো পাওয়া যায়নি। তাদের মধ্যে প্রতিটি দিন গিয়েছে ক্ষোভ, হতাশা এবং নিরাশার মধ্যে ।
ফেলানীর মৃত্যুর পর, তার পরিবার এবং বাংলাদেশের জনগণ ন্যায়বিচারের আশা নিয়ে দিন পার করছে। এই হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি যেন একটি উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সীমান্তে নিরপরাধ মানুষদের উপর সংঘটিত অন্যায়ের ।
সীমান্ত হত্যার ঘটনা ফেলানীর স্মৃতি আজও বহন করছে বাংলাদেশের মানুষ। যারা সীমান্তে মানবাধিকারের প্রতি সম্মান ও বিচার পাওয়ার অধিকার চেয়ে আসছে। প্রতিবছর ফেলানীর মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়, এবং তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করা হয়।
এছাড়া, সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠনগুলো আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আহ্বান জানিয়ে আসছে। সেইসাথে, বিচার পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আরো প্রাথমিক পদক্ষেপ গ্রহণের আশা করা হচ্ছে।
ফেলানীর রক্তাক্ত স্মৃতি আজও বাংলাদেশের সীমান্তে ন্যায়বিচারের অভাবের আর্তি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সীমান্ত হত্যার এই নির্মম অধ্যায় বাংলাদেশের জনগণকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে এবং ন্যায়বিচারের প্রতি তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার অনুপ্রেরণা দেয়।
এটি শুধুমাত্র ফেলানীর পরিবারের জন্য নয়, বরং বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার লঙ্ঘনের শিকার প্রতিটি মানুষের জন্য একটি স্মৃতি যা কখনোই ভুলে যাওয়ার নয়। ফেলানী হত্যার বিচার আজও বিচারপ্রার্থী।