শীতের শুরুর দিকে, যখন প্রকৃতি তার রূপ বদলায়, তখন প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের ফসলের মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ সমারোহ চোখে পড়ে। সরিষা ফুলের হলুদ রঙের ছটা গ্রামাঞ্চলের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়ে, সেসব জায়গায় শীতের আসার সঙ্গে সঙ্গে এক নতুন শোভা নিয়ে উপস্থিত হয়। মাঠজুড়ে সরিষার ফুলের সমারোহ যেন নতুন জীবনের বার্তা নিয়ে আসে, যা অনুপ্রেরণা দেয় কবিদেরও। সরিষা ফুল নিয়ে কবিদের হাজারও কবিতা রয়েছে, যেখানে তারা এই ফুলের সৌন্দর্য এবং এর সাথে সম্পর্কিত প্রকৃতির রূপের নানা দিককে তুলে ধরেছেন। শীত মৌসুম আসতে না আসতেই প্রকৃতিপ্রেমীরা একেবারে ডুবে যান সরিষা ফুলের সৌন্দর্যে। সরিষা ফুলের সমারোহ যেন প্রকৃতির এক মায়াবী রূপে পরিণত হয়। গ্রামাঞ্চলে ফসলের মাঠে এই হলুদ ফুলের বিস্তার শুধু চোখকে মুগ্ধ করে না, বরং মনের গভীরে এক শান্তির অনুভূতি ছড়িয়ে দেয়। শীতের হাওয়া, সরিষার রঙিন সমারোহ, আর মাঠের পেছনে বিস্তৃত সবুজ প্রকৃতি মিলিয়ে এক অপরূপ দৃশ্য সৃষ্টি হয়।
এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে দিনাজপুরের বীরগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠে। দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠে সবে মাত্র উঁকি দিচ্ছে সদ্য ফোটা সরিষা গাছের হলুদ বর্ণের ফুল। আর এই সরিষা ফুলের সঙ্গেই যেন মিশে আছে হাজারও কৃষকের রঙিন স্বপ্ন। চলতি রবি মৌসুমেও সরিষা চাষে লাভের স্বপ্নে বিভোর উপজেলার কয়েক হাজার কৃষক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি রবি মৌসুমে এ উপজেলার ১১টি ইউনিয়নে বারি-১৪ ও বারি-১৫ সহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ১০ হাজার ৬৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আবাদ আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ফসলের মাঠ ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার প্রায় প্রতিটি এলাকাতেই কম বেশি সরিষার চাষ করা হয়েছে। উন্নত জাত ও দেশীয় জাতের রাই, চৈতা ও মাঘি সরিষার বীজ বপন করছেন কৃষকরা। তবে প্রচলিত দেশি সরিষার চেয়ে উন্নত জাতের বারি-১৪ ও বারি-১৫ ফলন বেশি হওয়ায় এ দুই জাতের সরিষা চাষে বেশি আগ্রহী বলে জানান কৃষকরা।
উপজেলার নিজপাড়া ইউনিয়নের প্রেমবাজার এলাকার প্রফুল্ল রায় জানান, এই এলাকায় সরিষার চাষ বেশ ভালোই হয়। এই সরিষা ফুলের দৃশ্য দেখতে উপজেলা শহর থেকে অনেক প্রকৃতিপ্রেমী আসেন। আমি এ বছর ২ বিঘা জমিতে বারি-১৪ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। এখন পর্যন্ত গাছের অবস্থা বেশ ভালো দেখা যাচ্ছে। যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে, তাহলে ভালো ফলনের আশা করছি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, শীত মৌসুম আসলেই শহর থেকে প্রকৃতিপ্রেমীরা গ্রামে ছুটে আসেন। এই শীত মৌসুমে সরিষা ফুল ফুটলেই তারা আসেন। এটা বেশ ভালো। শহরের যান্ত্রিক জীবনযাপন ভেদ করে কিছুটা সময় হলেও শেকড়ের গন্ধ পান তারা। মিশে যান গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যের মাঝে। এ উপজেলায় বিগত বছরের তুলনায় এ বছর সরিষার আবাদ প্রায় দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সরিষার চাষ আরও বৃদ্ধি করার জন্য কৃষকদের সব ধরনের সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে।