কুড়িগ্রাম জেলার নাগেশ্বরী উপজেলার প্রতিভাবান নাট্যকর্মী তরণী কান্ত সেন একসময় মঞ্চে আলো ছড়াতেন, মুগ্ধ করতেন দর্শকদের। কিন্তু আজ জীবনের নির্মম বাস্তবতায় তিনি টুপি ও মোজা বিক্রি করে দিন কাটাচ্ছেন। তার এই জীবনযুদ্ধ শুধু একজন ব্যক্তির নয়, বরং আমাদের সমাজের সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ এবং দায়বদ্ধতার প্রতিফলন।
তরণী কান্ত সেন ছিলেন প্রতীক নাট্য গোষ্ঠীর একজন উজ্জ্বল তারকা। তার অভিনয় ও নাট্য নাট্য নির্দেশনা বহু দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিল।তিনি প্রথম অভিনয় করেন স্কুল জীবনে ১৯৮২ সালে।তিনি শুধু নাট্য শিল্পীই নন,তিনি হারমোনিয়াম যন্ত্রী ও সংগীত শিল্পী ও। তবে নাটকের প্রতি তার আবেগ ও ভালোবাসা ছিল অনন্য।
আজ সেই প্রতিভাবান শিল্পী প্রতীক নাট্য গোষ্ঠীর অফিসের বারান্দায় বসে টুপি ও মোজা বিক্রি করছেন। বয়স ও দারিদ্র্যের চাপে আজ তিনি মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তিনি বলেন, “নাটক আমার জীবন। কিন্তু জীবনযুদ্ধের তাগিদে আমাকে এই কাজ করতে হচ্ছে।”
তরণী কান্ত সেন অভিযোগ করেছেন যে, প্রতীক নাট্য গোষ্ঠী কিংবা নাট্যজগতের কাছ থেকে তিনি তেমন কোনো সহায়তা পাননি। তার এই অবস্থা নাট্যাঙ্গনের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোলে: আমাদের সংস্কৃতির কৃতী সন্তানদের সুরক্ষার জন্য আমরা কতটা দায়বদ্ধ?
তরণী কান্ত সেনের জীবনসংগ্রাম একটি সমাজের মানবিকতার পরীক্ষা। তরুণ নাট্যকর্মীদের জন্য তিনি উদাহরণ হতে পারতেন, যদি তাকে সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হতো। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের মাধ্যমে তার জীবনে পরিবর্তন আনতে হলে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
তরণী কান্ত সেনের গল্প শুধু একজন শিল্পীর নয়, এটি আমাদের সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার গল্প। আমরা যদি তার পাশে দাঁড়াই, তবে হয়তো তার জীবনযুদ্ধে তিনি আবার জয়ের মুখ দেখতে পারবেন। আমাদের উচিত সংস্কৃতিসেবীদের প্রতি সম্মান জানিয়ে তাদের জন্য সহায়তার হাত বাড়ানো।
ব্যক্তি জীবনে তরণী কান্ত সেন তিন কন্য সন্তানের জনক।পাচ জনের সংসার চালাতে অত্যন্ত কষ্ট করতে হয় তাকে।সন্তানের শিক্ষা অর্জন করানোও তার জন্য কষ্টকর।তিনি অভিমান ভরা কণ্ঠে বলেন অনেকেই অনেক প্রশংসা, আশ্বাস দিলেও বাস্তবতা ভিন্ন।কেউ প্রয়োজনে পাশে এসে দাড়ায়নি।তিনি মনে করেন সংস্কৃতি চর্চা না করে,কোনো কাজে নিয়োজিত হলে তার এই দূর্দিন দেখতে হতো না।তার স্মৃতিপটে এখনো গ্রীন রুম,স্ক্রিপ্ট, মঞ্চ,সংলাপ জ্বল জ্বল করছে।
অসহায় সংস্কৃতি কর্মি দের জন্য সরকারের দাপ্তরিক সহযোগিতা থাকলেও তরণী কান্ত সেন তা থেকে বঞ্চিতই রয়ে গেছেন।তার জীবন মানের উন্নয়ণ ঘটাতে যথাযথ কতৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তার শুভাকাঙ্ক্ষী মহল।