দুই ওভারে ১৭ রান দিয়ে উইকেট নেই। পাওয়ার প্লেতে শেখ মেহেদি হাসানের এমন পারফরম্যান্স একটু বিস্ময়করই। পাওয়ার প্লেতে ব্যাটসম্যানদের ‘পাওয়ার’ দমিয়ে রাখতে যে জুড়ি নেই তার! এ দিন একটু ব্যতিক্রম। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাটসম্যানদের শান্তি দিলেন না তিনি। বরং প্রথম দুই ওভারে বিবর্ণ হয়েথাকা বোলারই পরের দুই ওভারে চার উইকেট নিয়ে একরকম ম্যাচের ফয়সালাই করে দিলেন। জয় দিয়ে আসর শুরু করল শিরোপাপ্রত্যাশী রংপুর রাইডার্স।
বিপিএলের নতুন আসরের উদ্বোধনী দিনের দ্বিতীয় ম্যাচে নতুন দল ঢাকা ক্যাপিটালসকে ৪০ রানে হারাল রংপুর রাইডার্স।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে সোমবার টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা রংপুরের হয়ে ফিফটি করতে পারেননি কেউ। তবে কয়েকজনের কার্যকর ইনিংসে ২০ ওভারে ১৯১ রানের পুঁজি পায় তারা।
রান তাড়ায় ঢাকার শুরুটা ছিল আশা জাগানিয়া। কিন্তু শুরুর জুটি ভাঙার পর ভেঙে পড়ে তাদের ইনিংসও। উদ্বোধনী জুটিতে রান আসে ৬৫। পরের সব ব্যাটসম্যান মিলে আর একশ রানও করতে পারেননি।
সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টি-টোয়েন্টি সিরিজে ম্যান অব দা সিরিজ হওয়া শেখ মেহেদি সেই ফর্ম বয়ে আনেন বিপিএলেও। ২৭ রানে তার প্রাপ্তি চার উইকেট। ঝড়ো ইনিংসের সঙ্গে দুটি উইকেট নিয়ে ম্যাচের সেরা খুশদিল শাহ।
শুরুতেই শেষ টেইলর-হেলস
ম্যাচের প্রথম ওভারে আমির হামজা হোতাককে দুটি চার একটি ছক্কায় শুরু করেন স্টিভেন টেইলর। তবে পরের ওভারেই তাকে থামিয়ে দেন মুস্তাফিজুর রহমান। অ্যালেক্স হেলসকে জ্বলে উঠতে দেননি আলাউদ্দিন বাবু।
তিন ওভারের মধ্যে দুই ওপেনারকে হারায় রংপুর।
সাইফ-ইফতিখারের বন্ধন
বেশির ভাগ সময় ফিনিশারের ভূমিকা পালন করতে দেখা গেলেও ইফতিখার আহমেদকে এবার চারে পাঠায় রংপুর। পাল্টা আক্রমণের কাজটি শুরু করেন তিনি। সাইফ হাসান যথারীতি শুরু করেন ধীরগতিতে। দশম ওভারে প্রথম বাউন্ডারি আসে তার ব্যাট থেকে। এর আগ পর্যন্ত রান ছিল তার ১৮ বলে ১১। পরের কয়েকটি বড় শট খেলে পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
এই জুটিতেই দলের রান পেরিয়ে যায় একশ। দুজনের কেউ অবশ্য বড় করতে পারেননি ইনিংস। আলাউদ্দিন বাবু দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে সাইফকে (৩৩ বলে ৪০) ফিরিয়ে ভাঙেন এই জুটি। ৬৫ বলে ৮৯ রান আসে এই জুটিতে।
পরের ওভারে আলাউদ্দিন বিদায় করে দেন ইফতিখারকেও। আট চারে ৩৮ বলে ৪৯ রানে আউট হন পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান।
আপন রূপে খুশদিল-সোহান
মঞ্চ ছিল প্রস্তুত। খুশদিল শাহ ও নুরুল হাসান সোহান সেখানে নিজেদের মেলে ধরেন চেনা রূপে। উইকেটে যাওয়ার পরপরই আলাউদ্দিন বাবুকে চার ও ছক্কা মারেন খুশদিল। মুস্তাফিজের এক ওভারে দুজন মিলে চার মারেন চারটি।
শূন্য রানে পয়েন্টে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে গিয়ে ছয় চারে ১১ বলে করে ফেরেন রংপুর অধিনায়ক সোহান। জুটিতে ৩ ওভারে আসে ৪১ রান।
শেষ ওভারে মুস্তাফিজকে দুবার ছক্কায় উড়িয়ে ২৩ বলে ৪৬ রানে অপরাজিত থাকেন খুশদিল। শেষ ৫ ওভারে ৬৫ রান তোলে রংপুর।
আলাউদ্দিনের তিন
সম্প্রতি জাতীয় লিগ টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি হওয়া আলাউদ্দিন বাবু ফর্মটাকে বয়ে আনলেন বিপিএলেও। ড্রাফটে দল না টেলেও জাতীয় লিগের সাফল্যে তাকে দলে নেয় ঢাকা। তিনিও প্রতিদান দেন প্রথম ম্যাচে তিন উইকেট নিয়ে। ভালো শুরুর পর অবশ্য একটু খরুচে ছিলেন তিনি।
জাতীয় লিগের ফাইনালে দুর্দান্ত বোলিংয়ে ম্যাচ-সেরা হওয়া মুকিদুল ইসলাম বিপিএলের শুরুর ম্যাচেও ছিলেন উজ্জ্বল (৪-০-২৭-২)।
আগুন-পানি লিটন-তানজিদ
লক্ষ্য বড় হলেও তানজিদ হাসান ও লিটন কুমার দাস শুরু করেন একটু সাবধানতায়। প্রথম চার ওভারে রান আসে ২৬। এর মধ্যেই তানজিদ জীবন পান ৭ রানে।
তবে টিকে থাকলে পুষিয়ে দেওয়া যে স্রেফ ব্যাপার এই দুজনের জন্য, সেটিও দেখা যায় দ্রুতই। পরের তিন ওভারে রান আসে ৩৭।
পরের ওভারে আক্রমণে এসে চিত্র বদলে দেন শেখ মেহেদি। তানজিদকে (২১ বলে ৩০) আউট করে উদ্বোধনী জুটি থামান তিনি ৬৫ রানে।
নতুন ব্যাটসম্যান হাবিবুর রহমান সোহান প্রথম বলেই স্লগ করে ছক্কা মেরে পরের বলে আবার একই চেষ্টায় বিলিয়ে দেন উইকেট।
পরের ওভারে আরও দুটি ধাক্কায় ঢাকাকে ম্যাচ থেকে একরকম ছিটকে দেন শেখ মেহেদি। লিটনকে (২৭ বলে ৩১) থামিয়ে বড় বাধা সরান তিনি। আফগান অলরাউন্ডার ফারমানউল্লাহকে বোল্ড করে দেন দারুণ এক ডেলিভারিতে।
তাসের ঘর
উদ্বোধনী জুটি ভাঙার পর বলার মতো আর কোনো জুটি গড় ওঠেনি ঢাকার। দুই দফা ধসে ধুলোয় মিশে যায় তাদের সম্ভাবনা। ১০ রানের মধ্যে চার উইকেটের পতন হয় প্রথম দফায়। অধিনায়ক থিসারা পেরেরা চেষ্টা করেন পাল্টা আক্রমণে জবাব দেওয়ার। কিন্তু থমকে যান তিনি দুটি ছক্কা একটি চার মেরেই। এই দফায় ২১ রানের মধ্যে পতন হয় চার উইকেটের।
ম্যাচ তখন কার্যত শেষ। লোয়ার অর্ডাররা স্রেফ ব্যবধান কমান একটু। তার পরও রংপুরের জয় বড় ব্যবধানে ফল: রংপুর রাইডার্স ৪০ রানে জয়ী। ম্যান অব দা ম্যাচ: খুশদিল শাহ।