বিগত ১৫ বা ১৬ বছর ধরে বেশিরভাগ রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা জেল জুলুম ও অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। তারা প্রত্যেকেই ভোটের অধিকারের কথা বলেছেন। এছাড়া আমাদের নতুন প্রজন্মের প্রত্যাশা সকলের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। সুতরাং এ প্রত্যাশাকে সামনে রেখেই আমাদের এগোতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের উপর কোন চাপ নেই। আশা করছি সকলের সহযোগিতায় আগামীতে একানব্বই, ছিয়ানব্বই ও ২০০১ এর মত সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে পারবো।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ ও ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ৩০ ডিসেম্বর (সোমবার) নগরির সার্কিট হাউসে চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ, এম, এম নাসির উদ্দিন এসব কথা বলেন।
সিইসি বলেন, নির্বাচন আয়োজনের লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা চট্টগ্রাম থেকে শুরু করলাম। নির্বাচনী প্রস্তুতির মাঠ পর্যায়ের সার্বিক কার্যক্রমও এখান থেকে শুরু হবে। খসড়া ভোটার তালিকা জানুয়ারির ২ তারিখ প্রকাশ হবে এবং মার্চে এটা ফাইনাল হবে। এটাকে আরো গ্রহণযোগ্য করতে আমাদের নির্বাচন কর্মকর্তাদের অভিজ্ঞতার কথা শুনবো। তাদের কাছে পরামর্শ চাইবো কিভাবে সাধারণ মানুষের অসন্তুষ্টি দূর করা যায় এবং নির্বাচন কমিশন ও নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর আস্থা ফিরিয়ে আনা যায়।
ভোটার তালিকা হালনাগাদ কখন শেষ হবে- এ প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, ভোটার রেজিস্ট্রেশন আইনে বলা আছে প্রত্যেক বছরের জানুয়ারির ১ তারিখে যাদের বয়স ১৮ বছর হবে তাদের ভোটার করে ২ তারিখে একটি খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করতে হবে। মার্চের ২ তারিখে এটা ফাইনাল হয়ে যাবে এটা আইনের বিধান। আর সেটা পালন করতে আমরা বদ্ধপরিকর। তবে নির্বাচনী সিডিউল ঘোষণা করার আগ পর্যন্ত এ তালিকা সংশোধন করা যায়। তিনি বলেন, বিগত নির্বাচনগুলোতে মৃত মানুষ ভোট দিয়েছে এমন অনেক আভিযোগ ছিল। কাজেই তালিকা হতে মৃত ভোটার বাদ দেওয়া এবং মহিলাদের ভোটার করতে ও নির্বাচনী ব্যবস্থার উপর আস্থা ফিরিয়ে আনতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণের কার্যক্রম হাতে নিয়েছি। আশা করছি এ কার্যক্রম দ্রুত শুরু হবে এবং আগামী ৬ মাসের মধ্যে শেষ করতে পারবো।
আগামী নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়া বিষয়ক সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত। আবার কোন রাজনৈতিক দল যাতে নির্বাচনে আসতে না পারে সেজন্য কেউ যদি কোর্টে মামলা করে সেক্ষেত্রে কোর্ট কি সিদ্ধান্ত দেয় তার উপর নির্ভর করবে কারা নির্বাচনে আসবে, কারা আসবে না। কিংবা সরকার যদি কোন দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা না করে আমাদের পক্ষে কোন দলকে বাতিল বা নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়। সুতরাং কারা নির্বাচনে আসবে – সেটি রাজনৈতিক এবং কোর্টের সিদ্ধান্ত অথবা সরকার কোন দলকে নিষিদ্ধ করছে কিনা সে সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে। এক্ষেত্রে আমাদের কোন মতামত নেই।
আরও পড়ুন:রাণীনগরে বিস্ফোরক মামলায় আওয়ামীলীগ নেতা গ্রেফতার
অনেক বিশেষজ্ঞ এবং ২০২৪ এর অভ্যুত্থানকারীদের দাবি ১৭ বছর বয়সে ভোটার করা – এ প্রশ্নের জবাবে কমিশনার বলেন, কত বছর বয়সে ভোটার করা যাবে সেটি সংবিধানে লেখা আছে। সংবিধান সংস্কার কমিশন এটি নিয়ে কাজ করছে। তারা যদি ১৭ বছরে ভোটার করার বিধান সংবিধানে সংযোজন করে তবেই নির্বাচন কমিশনের পক্ষে ১৭ বছর বয়সীদের ভোটার করা সম্ভব হবে।
বিগত তিনটা নির্বাচনে যারা দিনের ভোট রাতে করেছে তাদের বিরুদ্ধে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে কোন আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা- এ প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে তাদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার চিন্তা করছি না। এটি নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বা সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করবে।
এসময় চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো: ইউনুচ আলীর সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের উপপরিচালক (স্থানীয় সরকার) মো: নোমান হোসেন, জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বশির আহমেদ, অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা নাসির উদ্দিন পাটোয়ারীসহ চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা নির্বাচন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।