সংগ্রামী নারী
তপন বর্মন (মার্তণ্ড রাজ)
আমি নারী, আমি সংগ্রামী ;
শত সংগ্রাম করে জীবন যুদ্ধে বেঁচে আছি।
আমি নারী, আমি রমনী ;
পরিবার থেকে সমাজ সবকিছুর দায়িত্ব নিয়ে থাকি।
আমি নারী, আমি মানবী ;
অপরাধী না হয়েও মেনে নিতে হয় –
আমি শতদোষে দোষী।
আমি নারী,আমি এভারেস্ট জয়ীও হতে পারি।
আমি নারী, ফুটবল কন্যা হয়ে প্রতিপক্ষকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়ন হতে পারি।
আমি নারী, জ্ঞান বিজ্ঞান ও কৃষিতে অবদান রাখতে পারি।
আমি নারী, ক্রিকেটার হয়ে বিশ্বজয় করতে পারি।
আমি নারী, সেবিকা হয়ে সেবা করতে পারি।
আমি নারী, দেশ পরিচালনায় নেতৃত্ব দিতে পারি।
আমি নারী, আমি অপরাজিতা;
আমি সবকিছু করতে পারি।।
আমি নারী,
শত সংগ্রাম,শত কষ্টের মাঝে,
দাঁতে দাঁত চেপে রেখে হাসিমুখে বলতে পারি –
“ভালো আছি “
প্রাক্তন
তপন বর্মন ( মার্তণ্ড রাজ)
ভুলিতে পারিনা তারে,
কারণ প্রাক্তন আমার সে,
তাকে না চাইলেও সে ফিরে আসে,
আর কষ্ট দিয়ে যায় স্মৃতিগুলোকে স্মরণ করিয়ে।।
মাঝে মাঝে মনে হয় বারবার ফিরে আসুক,
সেই দিনগুলো,
সেই অতীতের সময় গুলো,
রাগে অভিমানে ভরা ঘটনাগুলো,
কিন্তু জানি আসবে না ফিরে,
তুমি আজ বহু দূরে,
প্রাক্তন হয়েছো আমার যে,
অন্যের আপন হয়ে।।
এখন তুমি নেই,
তোমার সবকিছু লাগে ভালো,
তোমার কষ্ট গুলোর মধ্যে ভালোবাসা খুজে পাই,
বহুদিন পরে হলে আজও।।
তাইতো মাঝে মাঝে বলি –
আমি শতদোষে দোষী হতে রাজি,
যদি তুমি মনে কর আমায় অপরাধী,
তবু তুমি ফিরে এসো,
ওগো মায়াবিনী।।
ভালোবাসি তোমাকে
তপন বর্মন (মার্তণ্ড রাজ)
আমি নিজেকে করেছি কলঙ্কিত,
তোমায় ভালোবেসে!
কখনো বলা হয়নি বন্ধু,
ভালোবাসি তোমাকে।।
যদি তুমি জানতে কতটা ভালবাসি তোমাকে,
তবে দূরে থেকে কাছে এসে বলতে,
মার্তণ্ড ভালোবাসি তোমাকে।।
যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম প্রিয় ক্যাম্পাসে,
সেদিনই তোমাকে ভালো লাগা শুরু করে,
তারপর তোমার সাথে পরিচিত হওয়া, ক্লাস, আড্ডার মাধ্যমে,,
বন্ধুত্বের বন্ধন শক্ত হয়ে ওঠে,
কিন্তু কখন যে তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি বুঝতে পারিনি নিজে ও যে।।
আমি বারবার বহুবার গেছি বলতে,
ভালোবাসি তোমাকে,
কিন্তু সাহস করে বলতে পারিনি,
কতটা ভালোবাসি তোমাকে।।
আমি ভেবেছি নাই বা ভালবাসলে,
কিন্তু বন্ধুত্বের বন্ধন ছিন্ন করে যাবেনা তো দূরে চলে,
ভালোবাসার চেয়ে বন্ধুত্বের বন্ধন আমার কাছে অনেক দামি যে।
জীবনের মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে তোমায় যখন মনে পড়বে,
তখনো বলবো বন্ধু ভালোবাসি তোমাকে।।
ভালোবেসে অপরাধী
তপন বর্মন ( মার্তণ্ড রাজ)
আমার অব্যক্ত কথাগুলো যদি প্রকাশ করতে পারতাম,
আমার অনুভূতিগুলোকে যদি জানাতে পারতাম,
তবে আমি হতাম তোমার কাছে –
হয়তো শ্রেষ্ঠ প্রেমিক, নয়তো অপরাধী।।
তুমি আমার নও আমি জানি- তবুও তোমায় ভালোবেসেছি,
আমি সেই অপরাধে অপরাধী।
আমার প্রতিটি মুহূর্তে, প্রতিটি ক্ষণে তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি,
আমি সেই অপরাধে অপরাধী।
যখন তোমার প্রতি আমার দূরত্ব বেড়েছে,
তুমি তোমার তুমিকে নিয়ে ভালোবাসার নতুন জীবন শুরু করেছো,
তখন মনে হয়েছে তুমি আমার চেয়ে শতকোটি মাইল দূরে,
তবুও আমি তোমায় ভালোবেসেছি,
আমি এই অপরাধে অপরাধী।।
ত্রিশ বছর বয়স
তপন বর্মন (মার্তণ্ড রাজ)
বয়সটা ঊনত্রিশ পেরোলো এবার,
ত্রিশ পূর্ণ হতে আর সাত মাস বাকি,
সময়টা ভীষণ ভয়ঙ্কর রকমের সুন্দর!
সবকিছু আছে কিন্তু মনে হয় কিছুই নেই?
বেঁচে আছি কিন্তু বেঁচে নেই?
ভালো আছি কিন্তু ভালো নেই?
সময়ের সাথে সাথে বন্ধুগুলো হারিয়ে যায়,
আড্ডা গুলো আর হয়ে ওঠেনা,
ভালোবাসার মানুষও হারিয়ে যায়।।
আমার যে বন্ধুগুলো চাকরি পেয়েছে তারা আজ কতই না ব্যস্ত,
ফেসবুকে দেখতে পাই তাদের পরিবার সহ,
আর যে বন্ধুগুলো চাকরি পায়নি,
আমার মতো একই পথের পথিক,
তারা চোখ আর বই এক করে পড়ছে,
আর মাঝে মাঝে চিৎকার করে বলছে –
চাকরি চাই! শুধু একটি চাকরি চাই!
সময়ের সাথে সাথে মনে হয় স্বপ্নগুলোর পরিবর্তন হয়,
আমার বন্ধু সৌরভ, যার স্বপ্ন ছিলো সে চাকরি করবে না!
বাবার ব্যবসার হাল ধরবে।
সেও আজ একটা অধিদপ্তরে চাকরি করে!
শুনেছি টাকার বিনিময়ে এ চাকরি পেয়েছে!
আমার জানা নেই, টাকার বিনিময়ে এদেশে চাকরি পাওয়া যায় কিনা?
আমার জেনে লাভ ও নেই, জানার প্রয়োজন বোধও করিনি।
কারণ টাকার বিনিময়ে চাকরি পাওয়া গেলেও আমার তো আর সে টাকা নেই!?
আমার বন্ধু নিরুপমা, যে ক্লাসে চুপটি করে থাকতো, কারো সাথে কথা বলতো না!
সেও আজ প্রশাসনে ক্যাডার,
আমার বন্ধু সাদ্দাম, যার স্বপ্ন ছিলো কোন রকম একটা চাকরি হলেই চলবে,
সে আজ বাংলাদেশ ব্যাংকে চাকরি করে।
আর আমার বন্ধু রহমত, যে বিসিএস বলে আমাদের মাতিয়ে রাখতো,
সে আজ বলে বন্ধু একটা চাকরি চাই শুধু , একটা চাকরি হলেই চলবে!
সত্যিই, সময়ের সাথে সাথে ভাগ্যও স্বপ্ন দুইটারি পরিবর্তন হয়।।
ওইদিকে আমার পরিবার আমাকে নিয়ে কতই না ব্যস্ত,
বিশেষ করে বাবা-মা,
তাদেরও তো একটা স্বপ্ন আছে ,
তারাও তো স্বপ্ন দেখেছিল আমাকে নিয়ে ,
তারা তো আমার স্বপ্নের স্বপ্নদেষ্টা।।
বাবা-মা মাঝে মাঝে ফোন করে আর বলে-
বাবা, আর একটু কষ্ট কর..
সময় তো আছে, নিজের প্রতি বিশ্বাসটুকু রাখ..
আর মাঝে মাঝে গল্প করে বলে –
ওই যে তোর রহিম চাচার ছেলেটা আছে না সে অডিটরে চাকরি পেয়েছে।
তোর নিলুফা ভাবির মেয়েটা সে বিসিএস এ ভাইবা দিয়ে এসেছে,
শুনেছি ভাইবা ও ভালো দিয়েছে, হয়তো হয়ে যাবে ।।
আরো কত কত রকমের গল্প।।
আমার কিছুই বলার থাকেনা।।
আর পরিবারের চেয়ে সমাজের মানুষগুলো তারা মনে হয় আমাকে নিয়ে আরো বেশি বেশি ব্যস্ত,
তারা আমাকে নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত ।।
আগে যখন আগে বাড়িতে যেতাম,
তাদের সাথে ভালো মন্দ গল্প করতাম,
সকল গল্পের শেষে তাদের একটাই প্রশ্ন –
চাকরিটা কবে হবে??
এ প্রশ্নের উত্তর আমার ও জানা নেই.. আমি ও জানিনা –
আসলে চাকরিটা কবে হবে?
এজন্য বাড়িতেও আর যাই না।।
আগে দু-তিন মাস পর পর বাড়িতে যেতাম,
এখন শেষ কবে বাড়ি গিয়েছি সেটা ও মনে নেই,
সম্ভবত দেড় বছর হবে।।
এ সমাজে মূল্যহীন থেকে মূল্যবান হওয়ার জন্যে একটি চাকরি চাই,
এ সমাজে স্থান পেতে হলে একটা চাকরি চাই,
এ সমাজে শিক্ষিতের সম্মান পেতে হলে একটি চাকরি চাই,
আর আমি ও সেই চাকরির প্রতিক্ষায়,
আমি সেই সন্মানের প্রতিক্ষায়,
আমি সেই দিনের প্রতিক্ষায়..