যান্ত্রিক সামগ্রীর আধিপত্য এবং আধুনিক প্রযুক্তির বিকাশের যুগে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলায় মৃৎশিল্প এখনও জীবনের ছোঁয়া দিয়ে বেঁচে আছে। যুগের পরিবর্তনে মৃৎশিল্প ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে হাঁটলেও নাগেশ্বরীর কিছু ঐতিহ্যবাহী শিল্পী এখনও এই প্রাচীন শিল্পকে ধরে রেখেছেন।
নাগেশ্বরী উপজেলার হাসনাবাদ ইউনিয়নের কৈয়াপাড়া গ্রামে শত বছর ধরে মাটির জিনিসপত্র তৈরির কাজ করে আসছেন মৃৎশিল্পীরা। মাটির তৈরি হাঁড়ি, কলস, সরা,কুয়ার পাট,ব্যাংকসহ নানা পণ্য এখানে এখনও তৈরি করতে দেখা যায়। বিশেষত, ধর্মীয় বা সাংস্কৃতিক উৎসবে এগুলোর চাহিদা বাড়ে।এখনো এই কৈয়াপাড়া গ্রামের বলাই পাল(৫২),মুকুল পাল(৪৮),শরৎ পাল(৬৪),সুবাস পাল( ৫২),রঞ্জিত পাল( ৫০)
পরিমল পাল(৪৮),সুবোল পাল(৫০) ধরে রেখেছেন প্রাচীন বাংলার ঐতিহ্যবাহী মৃৎ শিল্প কে।
এলাকার মৃৎ শিল্পী লাল চান পাল জানান,তার তার পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য এই মৃৎশিল্পের কাজ।তিনি ছোট সময় দেখতেন তারা দাদা কানাই চন্দ্র পাল কে এই কাজ করতে।তার দাদাকে সহযোগিতা করতেন তার বাবা সুশীল চন্দ্র পাল।এই ধারাবাহিকতায় তিনিও কষ্ট করে ধরে রেখেছেন বাপ দাদার ব্যবসাটিকে।তার পরবর্তী প্রজন্ম এই ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে পারবে কিনা সে বিষয়ে তিনি সন্দেহ পোষণ করেন।
পরিমল পাল জানান এ ব্যবসায় তাদের দিন চলে না।তবুও ধরে আছেন মাটির মায়ায়।সরকার যদি তাদের দিকে সুনজর না দেন তবে হয়ত পরবর্তী প্রজন্মের কাছে এই ঐতিহ্য ইতিহাস হয়ে রয়ে যাবে।
আরও পড়ুন:রাণীনগরে শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশনের দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত
মৃৎশিল্পীদের জীবনে রয়েছে নানা চ্যালেঞ্জ। প্লাস্টিক ও স্টিলের সামগ্রীর সহজলভ্যতা তাদের পণ্যের বাজার সংকুচিত করেছে। তবুও তারা এই ঐতিহ্য ধরে রাখার জন্য সংগ্রাম করে যাচ্ছেন। স্থানীয় মাটি ও প্রাকৃতিক উপকরণ ব্যবহার করে তারা মনের মাধুরী মিশিয়ে পণ্য তৈরি করেন।
নাগেশ্বরী উপজেলার সচেতন মহল মনে করেন প্রাচীন বাংলার এই বিলুপ্ত প্রায় মৃৎশিল্পের টিকে থাকার জন্য স্থানীয় শিল্পীদের আর্থিক সহায়তা ও প্রশিক্ষণ প্রয়োজন। তাছাড়াও আধুনিক বাজারে প্রতিযোগিতার জন্য প্রয়োজন নতুন ডিজাইন ও উন্নত বিপণনের সুযোগ।
যান্ত্রিক সামগ্রীর যুগে নাগেশ্বরীর মৃৎশিল্প আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির পরিচায়ক। এটি শুধু পণ্য নয়, বরং মানুষের জীবনের সঙ্গে জড়িত এক টুকরো ইতিহাস। এই শিল্প টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
মৃৎশিল্প শুধু পেশা নয়, এটি ঐতিহ্যের ধারক এবং আমাদের শিকড়ের সঙ্গে সংযুক্ত একটি শিল্প। তাই নাগেশ্বরীর মৃৎশিল্পীরা যেভাবে সংগ্রাম করে তাদের কাজ ধরে রেখেছেন, তা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।