লাভজনক না হওয়ায় জয়পুরহাট চিনিকল এলাকায় আখ চাষ দিন দিন কমছে। এর ফলে আখের অভাবে চিনিকলে চিনির উৎপাদনও হ্রাস পাচ্ছে। কৃষকরা অভিযোগ করেছেন, দীর্ঘমেয়াদি ফসল হিসেবে আখের দাম কম, বিক্রির টাকা সময়মতো না পাওয়া এবং নানা ঝামেলার কারণে তারা আখ চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন। আখের পরিবর্তে একই সময়ে তারা তিন থেকে চারটি ফসল চাষ করে বেশি লাভবান হচ্ছেন।
তবে চিনিকল কর্তৃপক্ষের দাবি, আখ চাষ কমলেও আখের দাম বৃদ্ধি, বিকাশের মাধ্যমে দ্রুত পরিশোধ, সাথি ফসল চাষের সুবিধা এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা দেওয়ায় গত দুই বছরে আখ চাষের পরিমাণ বেড়েছে।
চিনিকল সূত্রে জানা যায়, গত মাড়াই মৌসুমে (২০২৩-২৪) জয়পুরহাট জেলায় ২ হাজার ৫ একর জমিতে আখ চাষ হয়েছিল। এ থেকে চিনিকলে সরবরাহ হয়েছিল ৩৭,৪৭৫ মেট্রিক টন আখ, যা থেকে ১,১৭০ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন হয়। এবার আখ চাষ ৩ হাজার ২ একর জমিতে বেড়েছে এবং ৫৫ হাজার মেট্রিক টন আখ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে মাড়াই মৌসুম (২০২৪-২৫) শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন:বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি বড়দিনের অভ্যর্থনা জানাবেন দুপুরে
চিনিকল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এ মৌসুমে ৩,০২৫ মেট্রিক টন চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সাথি ফসল চাষ, উন্নত বীজ, প্রযুক্তিগত সহায়তা, এবং আখের মূল্য বৃদ্ধির কারণে এবছর ৪ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ রোপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১,১২৩ একর জমিতে আখ রোপণ সম্পন্ন হয়েছে।
জয়পুরহাট চিনিকল ১৯৬২ সালে প্রথম মাড়াই মৌসুম শুরু করে।
তখন জয়পুরহাটসহ আশপাশের জেলাগুলোতে ব্যাপক আখ চাষ হতো। চিনিকলটি বছরে প্রায় ছয় মাস মাড়াই করে ২০ থেকে ২৩ হাজার মেট্রিক টন চিনি উৎপাদন করত। এমনকি নাটোর থেকেও ট্রেনে আখ সরবরাহ করা হতো। চিনিকল এলাকায় একসময় ১১ থেকে ১২ হাজার একর জমিতে আখ চাষ হতো। কিন্তু এখন আখ চাষের জমি কমে ৩ থেকে ৪ হাজার একরে নেমে এসেছে।
কেশবপুর দক্ষিণপাড়ার কৃষক মিজানুর রহমান বলেন, আগে বেশি জমিতে আখ চাষ করতাম। কিন্তু এবার মাত্র ১ বিঘায় আখ চাষ করেছি। আখ চাষে সময় লাগে ১২ থেকে ১৪ মাস, যা লাভজনক নয়। আখ বিক্রির টাকা সময়মতো পাওয়া যায় না। অন্য ফসল চাষ করলে বেশি লাভ হয়।
একই এলাকার কৃষক শিপন হোসেন ও আজিজুল হক জানান, চিনিকল থেকে আখ বিক্রির অনুমতিপত্র (পূর্জি) সময়মতো পাওয়া যায় না। জমিতে আখ শুকিয়ে নষ্ট হয়। চিনিকলে আখ বিক্রিতে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। তাই আমরা অন্য ফসল চাষে বেশি আগ্রহী।
জেলা আখ চাষি কল্যাণ সমিতির সভাপতি আবু তালেব চৌধুরি বলেন, চিনিকলকে লাভজনক করতে হলে আখ চাষ লাভজনক করতে হবে। কৃষকরা আগের তুলনায় কিছু সুবিধা পেলেও আখের দাম বাড়ালে এবং উন্নত বীজ সরবরাহ করা হলে আখ চাষে আগ্রহ আরো বাড়বে।
জয়পুরহাট চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (কৃষি) কৃষিবিদ তারেক ফরহাদ বলেন, মিলগেটে প্রতি কুইন্টাল আখের দাম ৬০০ টাকা এবং মিলের বাইরে ৫৮৭ টাকা দেওয়া হচ্ছে। সাথি ফসল চাষে প্রযুক্তিগত সহযোগিতাও দেওয়া হচ্ছে। আখ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে আমাদের উদ্যোগ অব্যাহত আছে। আগামীতে আখ চাষের পরিমাণ আরো বাড়বে বলে আশা করছি।