চট্টগ্রাম নগরীর পাহাড়তলী থানার পি. এইচ আমিন একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে ঘিরে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে উপদেষ্টা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের পিএস’র বিরুদ্ধে। সভাপতি নির্বাচনে তথ্য উপদেষ্টার পিএস’র হস্তক্ষেপে বিভাগীয় কমিশনারের পিএস স্কুলের প্রধান শিক্ষককে ডেকে একই স্কুলের সাবেক সহকারী শিক্ষক রৌশন আখতার ইনডেক্স নং (১১৯৮৫২) এর নাম সবার উপরে দেয়ার নির্দেশনা দেন। সেই অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক তাদের মনোনীত ব্যক্তির নাম কেটে রৌশন আখতারের নাম দিয়ে প্রস্তাবনা জমা দেন। প্রধান শিক্ষক এ কে এম নেওয়াজ জানান, আমি তিন জনের নাম প্রস্তাব করি, বিভাগীয় কমিশনারের পিএস ফখরুল ইসলাম আমাকে রৌশন আখতারের নাম ১ নং প্রস্তাবে রাখতে বলেন, আমি সেই অনুযায়ী প্রস্তাবনা প্রদান করি।
জানা যায়, হালিশহর পি. এইচ আমিন একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ে রৌশন আখতার সহকারী শিক্ষক থাকাবস্থায় নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২টা টাইম স্কেল নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। নিয়মানুযায়ী টাইম স্কেল পাওয়ার কথা ১ টি, কিন্তু তিনি নিয়েছেন ২ টি। আরো একটি নেয়ার জন্য তদবীর চালিয়ে যাচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ রকম একজন দুর্নীতিপরায়ন শিক্ষক সেই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হওয়ার তদবির করাকে অন্যায় ও দূর্নীতি বলে মন্তব্য করেছেন এলাকার সচেতন অভিভাবক মহল।
সরেজমিনে তদন্ত করে জানা যায়, প্রস্তাবিত কমিটিতে ১ নাম্বারে দেওয়া রৌশন আখতারের ছেলে র,হ,ম আলাওয়াল কবির তথ্য উপদেষ্টা নাহিদের পিএস। অবৈধ ভাবে ২ টি টাইম স্কেল নেওয়ার ব্যাপারে গত স্বৈরাচার সরকারের আমলেও এই পি,এস এর ক্ষমতার অপব্যবহার করা হয় বলে গুঞ্জন রয়েছে বিভিন্ন মহলে। ছেলের দাপটে শিক্ষক রৌশন আখতার অবৈধ কর্মকান্ডগুলো করে আসছিল। এই রৌশন আখতারের রোষানলে পড়ে স্কুলের সাবেক এক সভাপতি কর্মকমিশন কর্মকর্তাকে খাগড়াছড়ি ও কমিটির এক অভিভাবক সদস্য ব্যাংক কর্মকর্তাকে সাতকানিয়া বদলি করে দিয়েছেন । এই সবের মূলে রৌশন আখতারের ছেলের দিকেই ভুক্তভোগীদের আঙ্গুল। তিনি টাইম স্কেল পাবে একটি কিন্তু টাইম স্কেল নিয়েছেন ২টি, আরো একটি নেয়ার প্রক্রিয়াও চালিয়েছেন। রৌশন আখতারকে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও অভিভাবকদের মাঝে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক অভিভাবক বলেন , রৌশন আখতার এই বিদ্যালয়ে কমিটির সভাপতি হলে স্বনামধন্য এই প্রতিষ্ঠানটি ধ্বংস হয়ে যাবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি রক্ষা করতে তারা বিভাগীয় কমিশনার সহ সংশ্লিষ্টদের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
জানা যায়, পাহাড়তলী পি. এইচ আমিন একাডেমি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রৌশন আখতার’র (১১৯৮৫২) টাইম স্কেল বিষয় নিয়ে আনোয়ার হোসেনকে আহবায়ক করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারী থেকে ২০২০ সালের সেপ্টম্বর পর্যন্ত প্রায় ৫ লক্ষ আড়াই হাজার টাকা অতিরিক্ত সরকারী টাকা গ্রহণ করেছে বলে প্রতিবেদনে উঠে আসে।
এ ব্যাপারে বিভাগীয় কমিশনারের পিএসের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, বিভাগীয় কমিশনার স্যার রৌশন আখতারের নাম দেয়ার জন্য বলেছেন, এখানে আমার কোন হাত নেই।
উল্লেখ্য, ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদপূর্ণ হওয়ার কমপক্ষে ৮০ দিন পূর্বে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করতে হয়। এ সময় খসড়া ভোটার তালিকা প্রস্তুতপূর্বক নাম সংশোধের জন্য শ্রেণীকক্ষে জানিয়ে দেওয়ার এবং বিদ্যালয়ের নোটিশ বোর্ডে টাঙিয়ে দেওয়ার বিধান রয়েছে। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রচারণা চালাবেন। নীতিমালা অনুযায়ী তিনি শ্রেণীকক্ষে নির্বাচনের সিডিউল নোটিশ জানিয়ে দেবেন। স্থানীয় বহুল প্রচারিত একটি পত্রিকায় নির্বাচনের সিডিউলের বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার বিধান রয়েছে। এ ছাড়া প্রচারনার জন্য এলাকায় মাইকিং করার বিধানও রয়েছে। কমিটি গঠনে দলীয় প্রভাব, এলাকার প্রভাবশালীদের প্রভাব, বংশীয় প্রভাব এবং প্রতিষ্ঠাতা ক্যাটাগরিদের প্রভাবসহ নানাবিধ প্রভাবের কারণে বিদ্যালয়ে অযোগ্য, দুর্নীতিপরায়ন এবং স্বল্প শিক্ষিত ব্যক্তিরা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে চলে আসেন। ফলশ্রুতিতে বিদ্যালয়গুলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার ক্ষেত্রে সমস্যার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ রয়েছে অনেক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির অযাচিত হস্তক্ষেপের কারণে প্রধান শিক্ষকগণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে এবং তাদের মেধা ও অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে প্রতিষ্ঠানকে সুন্দরভাবে প্রস্ফুটিত করতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতা কমপক্ষে স্নাতক পাশ করা হলেও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলিতে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির ক্ষেত্রে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোন বিধান নেই। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অনেক ক্ষেত্রে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি এবং সদস্য হিসেবে অল্পশিক্ষিত এবং স্বাক্ষরজ্ঞানবিহীন ব্যক্তিরা কমিটিতে অন্তর্ভূক্ত হচ্ছেন।
এছাড়া অনেক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সাধারণ শিক্ষক এবং বিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারী নিয়োগে মোটা অংকের বাণিজ্য করে থাকেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ফলে কমিটিতে আসতে যোগ্যতাসম্পন্ন আগ্রহী অনেকেরই আশাভঙ্গ হচ্ছে।