কুড়িগ্রাম জেলার রাজীবপুর উপজেলার আমিনুল ইসলাম মাষ্টার,একজন বেসরকারি দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক ও নিভৃতচারী স্বেচ্ছাসেবক, নিজ উদ্যোগে আরো কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক কে সাথে নিয়ে একটি পায়ে হাঁটার অনুপযোগী মাটির রাস্তা সংস্কার করে মানুষের জীবনযাত্রায় অসাধারণ অবদান রেখেছেন। তার এই প্রচেষ্টা গ্রামের মানুষের জন্য আশীর্বাদস্বরূপ হয়ে উঠেছে।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার কোদালকাটি ইউনিয়ন এর চরসাজাই মন্ডলপাড়া থেকে পার্শ্ববর্তী উপজেলা রৌমারী কর্তিমারী বাজার যাওয়ার একমাত্র রাস্তাটি মাটির ও নিচু হওয়ায় শীত মৌসুম ব্যতীত অন্য সময় যাতায়াতের জন্য ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পড়ে।একটু বৃষ্টি কিংবা আশপাশের আবাদি জমিতে সেচ কাজের পানি দিলেও মাটির রাস্তাটি কর্দমাক্ত হয়ে যাতাযাতের অযোগ্য হয়ে যায়।কোদালকাটি ইউনিয়নের মন্ডল পাড়া গ্রামের মানুষের বাজার ঘাট,শিশু কিশোর দের স্কুল যাওয়ার এক মাত্র অবলম্বন এই মাটির রাস্তা টি ই। দীর্ঘদিনের এই সমস্যা সমাধানের জন্য স্থানীয় সরকার বা কেউ কোনো উদ্যোগ গ্রহন করেন নাই। প্রতিদিন শতশত মানুষ যাতায়াতে অবর্ণনীয় কষ্ট মো: আমিনুল ইসলাম মাষ্টার কে ভাবিয়ে তোলে।তিনি ভাবতে থাকেন কি করে মানুষের চলাচলের সুবিধার জন্য রাস্তাটির সংস্কার করা যায়।
এলাকার কয়েকজন স্বেচ্ছাসেবক যুবক ও মজুর মিলে পরামর্শ করেন স্ব উদ্যোগে রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করে তোলার।তারাও উৎসাহ দেন ও সঙ্গে কাজ করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।এ ভাবনা থেকেই তারা একাধারে ৫ দিন পরিশ্রম করে রাস্তাটি চলাচল উপযোগী করে তোলেন। তার কাজে সহযোগিতা করেন হাকিম,মামুন, সানোয়ার সহ আরো অনেকেই।তার এই উদ্যোগ এলাকার সকলের নিকট প্রশংসা পাচ্ছে।
আমিনুল ইসলাম মাষ্টার বলেন গ্রামটির সঙ্গে রৌমারী উপজেলার কর্তিমারি বাজারের সঙ্গে যোগাযোগে এক মাত্র সংযোগকারী এই রাস্তাটি দীর্ঘদিন ধরে অবহেলিত ছিল। বিশেষ করে বর্ষাকালে এই রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে চলাচলের সম্পূর্ণ অনুপযোগী হয়ে পড়ত। স্কুলগামী শিশু, অসুস্থ রোগী এবং কৃষকদের পণ্য পরিবহনে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হতো। এলাকাবাসী বহুবার এই রাস্তার উন্নয়নের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করলেও কোনো সমাধান আসেনি।তাই তিনি স্ব উদ্যোগে এই সংস্কার কাজটি করেছেন।
নতুন করে পথটি সংস্কার হওয়ায় গ্রামবাসীর জীবনযাত্রা সহজ হয়ে গেছে। শিশু-কিশোররা স্কুলে যেতে পারবে সময়মতো, কৃষকেরা তাদের পণ্য সহজেই বাজারে নিতে পারছে, এবং রোগীদের দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া সম্ভব হবে। এলাকাবাসী আমিনুল ইসলাম মাষ্টারের এই কাজের জন্য গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে।
আমিনুল ইসলাম মাষ্টার শুধু এই কাজই করেন নি,তিনি ইতিপূর্বে একটি ছোট নদীর বাধার কারনে মানুষের দূর্ভোগ দেখে স্ব উদ্যোগে নদীর উপর কাঠের ব্রীজ নির্মান করে এলাকার মানুষের ও শিশু কিশোর দের স্কুল যাতাযাতের ব্যবস্থা করেছিলেন।যা দেশের ও বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ায় প্রকাশিত হয়েছিলো।এলাকার সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রমে পথ ঘাট,হাজামজা পুকুর সংস্কার,বাল্য বিবাহ রোধে ভূমিকা, বয়স্ক শিক্ষা,দরিদ্র শিশু কিশোর দের শিক্ষা উপকরণ বিতরণ সহ নানামুখী কাজে তার অবদান চলমান।তাছাড়া তার একটি মহতি উদ্যোগ কুড়িগ্রাম জেলার বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশ বান্ধব ও বজ্রনিরোধক বৃক্ষ তাল রোপন করার কাজ চলমান।তিনি নিভৃতে সবুজ বিপ্লব ঘটানোর কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
আমিনুল মাষ্টার প্রমাণ করেছেন যে, মানুষের কল্যাণে কাজ করতে বড় কোনো পদের প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন শুধু ইচ্ছাশক্তি ও মানবিকতার। তার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে সমাজের অন্যান্যদের জন্য দৃষ্টান্তস্বরূপ।
আমিনুল ইসলাম মাষ্টারের মতো নিভৃতচারী মানুষরা আমাদের সমাজের সত্যিকারের নায়ক। তার এই স্বেচ্ছাসেবামূলক কাজ আরও অনেককে অনুপ্রাণিত করবে এবং সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে।