আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলা ২ নং উত্তর ইউনিয়নের খাসেরহাট বাজারে দফায় দফায় সংঘর্ষ ভাংচুর অগ্নিসংযোগের অভিযোগে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতারা যৌথভাবে জরুরি সভা করেন গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় । সভায় ওই ইউনিয়নের বিএনপির ও অঙ্গসংগঠনের সব কার্যক্রম বিলুপ্ত করা হয়েছে।
ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। গতকাল শুক্রবারের বৈঠকে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন।
অভিযুক্ত উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জি এম শামীম বলেন, ‘বিগত দিনে যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছেন ফারুক কবিরাজ। এতে আমি আপত্তি জানাই। এ নিয়ে আমার সঙ্গে তাঁর বিরোধ চলছে। দুই দিন ধরে হামলা চালিয়ে আমার দুটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মাছ ও টাকা লুট করে নিয়ে গেছেন তাঁরা। চারটি বাড়িও ভাঙচুর করা হয়েছে।’
গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের খাসেরহাট ও বাবুরহাটে সংঘর্ষে জড়ান বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি মো. ফারুক কবিরাজ এবং অপর পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের সদস্যসচিব জি এম শামীম। এতে শফিক রহমান রাঢ়ী, রাসেল রাঢ়ী, আবু ইউছুফ, তাহমিনা বেগম, লিটন রাঢ়ী, গণি রাঢ়ী, মিজান খান, কবির হোসেনসহ ১০ জন আহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তিদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রায়পুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও লক্ষ্মীপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অন্যদিকে বিলুপ্ত উত্তর চরবংশী ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি অভিযুক্ত ফারুক কবিরাজ বলেন, ‘আবু ইউছুফ নামের আমার এক সমর্থককে কুপিয়ে তাঁর কান কেটে ফেলেছেন শামীমের শ্বশুর শফিক রহমান রাঢ়ী। এতে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। শামীমের নেতৃত্বে এলাকায় দখল ও চাঁদাবাজি চলছে। তাঁর এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা। শামীমের লোকজন অস্ত্র নিয়ে বাজারে প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছেন। তাঁরা ইউনিয়ন বিএনপি কার্যালয় ভাঙচুর করেছেন।’
শুক্রবার বিকালে উপজেলা বিএনপি জরুরি বৈঠক ডেকে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বলে জানান উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম। তিনি বলেন, কমিটিতে তিনিসহ সদস্যসচিব শফিকুর রহমান ভূঁইয়া, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সালেহ আহমেদসহ সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের জেলা কমিটির একজন করে প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তিন দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও লক্ষ্মীপুর ২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবুল খায়ের ভূঁইয়া বলেন, দলে বিশৃঙ্খলা কারীদের ছাড় দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। যারা বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে অপকর্ম করবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া আছে কেন্দ্র থেকে। দুই নং উত্তরচরবংশী ইউনিয়নের ঘটনাটি আমাদের জন্য বিব্রতকর। উপজেলা বিএনপির নেতৃবৃন্দ কে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার এবং ২ নং উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের বিএনপিও সহযোগী সংগঠনের সকল কার্যক্রম বিলুপ্ত করে সকল স্থগিত থাকবে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত । এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্ত রাখতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে আমরা পরামর্শ করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য,৫ ই আগস্টের পর থেকে ২ নং উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে একের পর এক আলোচনার জন্ম দিচ্ছে বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে। প্রশ্নের সম্মুখীন হয়েছে বিএনপি’র নেতৃবৃন্দ। সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন মাস্টার এর মাছঘাট দখল, সাবেক চেয়ারম্যান মোস্তফা গাজীর নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন ভয়-ভীতি দেখিয়ে ফের ঘাট দখলসহ নানান অভিযোগে অভিযুক্ত ইউনিয়ন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠন।