Homeআন্তর্জাতিকপ্রাচীন মিশরের গর্ভবতী মমি: যমজ গর্ভধারণের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি

প্রাচীন মিশরের গর্ভবতী মমি: যমজ গর্ভধারণের মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি

১৯০৮ সালে মিশরের খারগা ওয়াসিসের এল বাগাওয়াত নেক্রোপলিস থেকে প্রত্নতাত্ত্বিকরা একটি কিশোরীর মমি আবিষ্কার করেন। তার বয়স ছিল ১৪ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে। প্রাথমিক গবেষণায় দেখা যায়, মৃতদেহটির মধ্যে একটি ভ্রূণ এবং প্লাসেন্টা পাওয়া গেছে, যা কিশোরীর দুই পায়ের মাঝখানে অবস্থান করছিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, তিনি প্রসবকালীন জটিলতার কারণে মারা যান।

এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর, আধুনিক চিত্রায়ন প্রযুক্তি, যেমন সিটি (CT) স্ক্যান ব্যবহার করে, তার মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য উদঘাটন করা হয়। স্ক্যানের মাধ্যমে জানা যায় যে, ওই কিশোরী আসলে যমজ সন্তান ধারণ করছিলেন। প্রথম ভ্রূণের মাথা তার পেলভিসে আটকে যায়, যা একটি ব্রিচ ডেলিভারি পরিস্থিতির লক্ষণ—যখন শিশুর পা বা নিতম্ব আগে বেরিয়ে আসে। এটি জন্ম প্রক্রিয়ায় গুরুতর জটিলতা তৈরি করতে পারে, যা প্রাচীনকালে আধুনিক চিকিৎসার অনুপস্থিতিতে আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠত। এই ধরনের পরিস্থিতি মা ও শিশুর উভয়ের জন্যই বিপর্যয় ডেকে আনত।

আরও একটি ভ্রূণ তার বুক এবং পেটের গহ্বরে পাওয়া গেছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, মমি করার সময় যারা তাকে প্রস্তুত করেছিলেন, তারা যমজ গর্ভধারণ সম্পর্কে জানতেন না। শরীর পচে যাওয়ার ফলে দ্বিতীয় ভ্রূণ তার পেট থেকে বুকে সরে যেতে পারে। এই ঘটনা প্রাচীন যুগে গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসবের ঝুঁকি এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।

প্রাচীন মিশরের গর্ভবতী মমি
প্রাচীন মিশরের গর্ভবতী মমি

প্রাচীন মিশরে যমজ সন্তানের জন্মকে অনেক সময় অশুভ বা অবাঞ্ছিত বলে মনে করা হতো। ঐতিহাসিক নথি, যেমন Oracular Amuletic Decrees, এসব বিষয়ের প্রতি প্রাচীন সমাজের উদ্বেগের কথা তুলে ধরে। এ ধরনের সামাজিক বিশ্বাস ও সাংস্কৃতিক ধারা প্রাচীনকালের মাতৃস্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর গভীর প্রভাব ফেলেছিল।

এই ঘটনাটি শুধু প্রাচীন মিশরের প্রসূতি স্বাস্থ্য ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাই নয়, বরং ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডির চিত্রও তুলে ধরে। মমি হওয়া ওই কিশোরী এবং তার যমজ সন্তানের মৃত্যু প্রাচীন সভ্যতার প্রতিদিনের সংগ্রামের প্রতিফলন। আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে এই মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন সম্ভব হয়েছে, যা শুধু চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে নয়, মানবজাতির অতীত সম্পর্কে একটি নতুন আলো দান করে।

অন্যদিকে, মমি প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতার কথাও উঠে আসে। দ্বিতীয় ভ্রূণ শনাক্ত না হওয়া হয়তো তৎকালীন প্রযুক্তির অভাব বা শরীর সম্পূর্ণ পরীক্ষা না করার ফলাফল হতে পারে। এর পাশাপাশি, “মিস্টেরিয়াস লেডি” নামে পরিচিত বিশ্বের একমাত্র গর্ভবতী মিশরীয় মমির উদাহরণ আমাদের আরও গবেষণার দিকে নিয়ে যায়।

সমাজে যমজ সন্তানের জন্ম সম্পর্কে যে কুসংস্কার ছিল, সেটিও গুরুত্বপূর্ণ। Oracular Amuletic Decrees এ “অনিয়মিত জন্ম” বা যমজ সন্তান জন্ম থেকে রক্ষা পাওয়ার বিষয়ে যে উল্লেখ আছে, তা এসব কুসংস্কারের গভীরতাকে নির্দেশ করে। এ ধরনের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রাচীনকালে গর্ভধারণ এবং প্রসবকালীন সিদ্ধান্তগুলোর ওপর প্রভাব ফেলেছিল।

অবশেষে, কিশোরী মমি এবং তার যমজ ভ্রূণের ঘটনাটি প্রাচীন মিশরের চিকিৎসা, সংস্কৃতি এবং সমাজের গভীর দিকগুলো সম্পর্কে একটি বিস্তৃত ধারণা দেয়। এটি সন্তান প্রসবের ঝুঁকি, যমজ গর্ভধারণের জটিলতা এবং প্রাচীন যুগের গর্ভধারণ সম্পর্কে সমাজের ধারণার একটি জীবনচিত্র তুলে ধরে। আধুনিক প্রযুক্তি এসব প্রাচীন রহস্য উন্মোচনে সহায়তা করছে এবং আমাদের অতীত সম্পর্কে গভীরতর উপলব্ধি তৈরি করছে।

সর্বশেষ খবর