শীতের সকালে কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার বিস্তৃত সরিষা খেতে সূর্যের আলো পড়তেই হলুদ গালিচার মতো ঝলমল করতে শুরু করে। প্রজাপতির ঝাঁক আর মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত সরিষার মাঠ যেন প্রকৃতির এক অনন্য রূপকল্প। কৃষকদের মুখে ফুটে উঠেছে সোনালি রঙের হাসি। সরিষার ভালো ফলন ও বাজারদর কৃষকদের জীবনে অর্থনৈতিক সচ্ছলতা এনে দিয়েছে।
ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ফুলবাড়ীর মাঠে মাঠে সরিষার হলুদ ফুলের সমারোহ দেখা যায়। উপজেলার প্রতিটি গ্রামে সরিষা আবাদ বাড়ছে। চরের জমি থেকে উঁচু জমি পর্যন্ত সরিষার আবাদে যেন এক নীরব বিপ্লব ঘটেছে। সঠিক উদ্যোগ এবং কৃষি বিভাগের সক্রিয় প্রচেষ্টায় কৃষকেরা আধুনিক জাতের সরিষা চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বোরো ধান কাটার পর এবং পরবর্তী ফসলের আগে ফাঁকা সময়ে সরিষা চাষ করা যায়। এতে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই ভালো ফলন হয়। সরিষার ফুল থেকে ‘বড়া’ এবং পাতা থেকে শাক রান্নার পাশাপাশি সরিষার গাছ জ্বালানির কাজে ব্যবহার হয়। বাজারে সরিষার ভালো চাহিদা থাকায় প্রতি মণে ২৫০০ থেকে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া যাচ্ছে।
সরিষার হলুদ গালিচা শুধু কৃষকদের জীবন বদলাচ্ছে না, বরং এ অঞ্চলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও বাড়িয়ে তুলছে।সরিষা খেতে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই বাড়ছে প্রকৃতিপ্রেমীদের ভিড়। বিশেষ করে বড়ভিটা ইউনিয়নের হলুদ খেতগুলিতে কিশোর কিশোরীদের সেলফি তোলা ও ঘোরাঘুরির ধুম লেগেছে।
উপজেলা উপ সহকারি কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, বারি-১৪, ১৭,বিনা ৪,৯ জাতের সরিষায় তেলের পরিমাণ বেশি হওয়ায় এ জাতের প্রতি কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে।
“উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘এবছর ফুলবাড়ী উপজেলায় প্রায় ৩ হাজার ৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করা হয়েছে। সরিষার আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২৩০০ জন কৃষককে সার ও বীজের প্রণোদনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ভালো ফলনের জন্য নিয়মিত কৃষকদেরকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। আমরা আশাবাদী, এ বছর সরিষার উৎপাদন উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়বে এবং কৃষকরা এর থেকে আর্থিকভাবে উপকৃত হবেন।’