সিরিয়ায় পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে চলা আসাদ পরিবারের শাসনের পতন হয় অনেকটা আচমকাই। কয়েক দিনের ব্যবধানে চোখের সামনেই ধসে পড়ে বাশার আল-আসাদের সাম্রাজ্য। এর মধ্য দিয়ে সিরিয়ায় বাশার আল-আসাদের ২৪ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। বাবা হাফিজ আল-আসাদ ও ছেলে বাশার আল-আসাদ মিলে টানা ৫৩ বছর সিরিয়া শাসন করেছেন।
এদিকে বিদ্রোহীরা আসাদের সরকারকে উৎখাতের পর সিরিয়ার একটি সামরিক বিমানঘাঁটিতে রাশিয়া তাদের সামরিক সরঞ্জাম গুটিয়ে নিচ্ছে, মহাকাশ প্রযুক্তি কম্পানি ম্যাক্সারের প্রকাশিত স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তোলা ছবিগুলো দেখে এমনটাই ধারণা করা হচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার তোলা ওই ছবিগুলোতে দেখা যায়, সিরিয়ার উপকূলীয় লাতাকিয়া প্রদেশের হুমাইমিম বিমান ঘাঁটিতে অন্তত দুটি আন্তোনোভ এএন-১২৪ (বিশ্বের বৃহত্তম কার্গো বিমানগুলোর মধ্যে একটি) বিমানে সরঞ্জাম তোলা হচ্ছে।
ম্যাক্সার বলেছে, ‘দুটি আন্তোনোভ এএন-১২৪ বৃহত্তম কার্গো বিমান হুমাইমিম বিমান ঘাঁটিতে অবস্থান করছে এবং ছবিতে বিমান দুটির ডালা খোলা অবস্থায় দেখতে পাওয়া গেছে। ধারণা করা হচ্ছে, বিমানে সামরিক সরঞ্জাম ওঠানো হচ্ছে।
ম্যাক্সার আরো বলেছে, ‘কাছাকাছি একটি কেএ-৫২ অ্যাটাক হেলিকপ্টার খুলে ফেলা হচ্ছে এবং সম্ভবত এটিকে ছোট আকারে গুটিয়ে পরিবহনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। বিমানঘাঁটিতে আগে মোতায়েন এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষা ইউনিটের অংশগুলোও স্থানান্তরের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।’
লাতাকিয়ার বিমানঘাঁটিতে সরঞ্জাম গুটানোর কার্যক্রম চললেও ম্যাক্সার জানিয়েছে, ভূমধ্যসাগরের তীরে সিরিয়ার বন্দরনগরী তারতুসে অবস্থিত রাশিয়ার নৌঘাঁটি এখনো বহাল তবিয়তে আছে। সেখানে কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি।
ম্যাক্সার বলেছে, ‘গত ১০ ডিসেম্বরের আমাদের তোলা ছবিতে যে অবস্থান ছিল, গতকাল শুক্রবার তোলা ছবি অনুসারেই তারতুস ঘাঁটির অবস্থান অপরিবর্তিত আছে। তারতুসের উপকূলে দুটি (রুশ) ফ্রিগেট এখনো দেখা যাচ্ছে।’
ব্রিটিশ সম্প্রচারমাধ্যম চ্যানেল-৪ নিউজ জানিয়েছে, তারা ১৫০টিরও বেশি রুশ সামরিক যানবাহনের একটি বহরকে সিরিয়ার সড়কপথে চলতে দেখেছে। রুশ সামরিক বাহিনী শৃঙ্খলাপূর্ণভাবে অগ্রসর হচ্ছিল এবং মনে হচ্ছিল রাশিয়াকে সিরিয়া থেকে শৃঙ্খলাপূর্ণ প্রস্থানের জন্য একটি চুক্তি হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় মন্তব্যের জন্য রয়টার্সের অনুরোধে সাড়া দেয়নি।
এদিকে সিরিয়ায় গম সরবরাহ স্থগিত করেছে রাশিয়া। নতুন সরকারের অনিশ্চয়তা এবং অর্থ প্রদানে বিলম্বের কারণে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে রাশিয়ান এবং সিরিয়ান সূত্রগুলো।
রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, সিরিয়ার জন্য রাশিয়ার পাঠানো দুটি গমবাহী জাহাজ গন্তব্যে পৌঁছতে পারেনি। রাশিয়া বিশ্বের বৃহত্তম গম রপ্তানিকারক দেশ। পুতিনের মস্কো দীর্ঘদিন ধরে বাশার আল-আসাদের সরকারকে সমর্থন দিয়ে আসছে এবং জটিল আর্থিক ও লজিস্টিক ব্যবস্থার মাধ্যমে সিরিয়াকে গম সরবরাহ করত। তবে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কারণে এই প্রক্রিয়া আরো কঠিন হয়ে পড়েছে।
রাশিয়ার সরকারের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে, সিরিয়ায় গম আমদানির দায়িত্ব কারা নেবে, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এ অবস্থায় রপ্তানিকারকরা সিরিয়ায় গম সরবরাহ করতে অনিচ্ছুক। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সূত্রটি জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে কেউ সিরিয়ায় গম সরবরাহ করার সাহস করবে না।
শিপিং ডেটা অনুসারে, রাশিয়ার গমবাহী একটি জাহাজ ‘মিখাইল নেনাশেভ’ সিরিয়ার উপকূলের কাছে নোঙর করা রয়েছে। অন্য একটি জাহাজ, ‘আলফা হারমেস,’ কয়েক দিন সিরিয়ার উপকূলের কাছে অবস্থানের পর এখন মিসরের আলেকজান্দ্রিয়া বন্দরের দিকে যাচ্ছে।
সূত্র : রয়টার্স