উত্তরের হিমেল হাওয়ায় দেখতে দেখতে চলে আসছে শীতকাল। শীত মানেই প্রশান্তির ঘুমের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ঋতু। কয়েকদিনের মধ্যেই প্রচন্ড ঠান্ডায় জবুথবু দিনাজপুরের বীরগঞ্জের মানুষ। শীতের আগমনে লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কারিগররা। বিভিন্ন স্থানে লেপ-তোষক তৈরির দোকানগুলোতে ভিড় করছেন ক্রেতারা। পৌর শহরের বিভিন্ন এলাকায় সর্বত্রই গত কয়েক দিন থেকে শীত আসতে শুরু করেছে।
শীতের আগমনে প্রত্যন্ত পল্লী এলাকায় থেকে শুরু করে শহরের বিভিন্ন এলাকায় লেপ-তোষক তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন কারিগররা। এবার একটু আগ থেকেই শীত নামতে শুরু করেছে। তীব্র শীতে ধুনকর আর লেপ-তোষকের ব্যবসায়ীরা বেজায় খুশি।
শনিবার (১৪ ডিসেম্বর) উপজেলার পৌর শহর সহ ইউনিয়নের বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানে ব্যবসায়ীরা বিক্রির জন্য লেপ-তোষক মজুদ করে রেখেছেন।
জানা গেছে, গত কয়েকদিন ধরে ঠান্ডা বাতাস ও ঘন কুয়াশা বেশি পড়ছে। দিনে সূর্যের আলো থাকলেও সন্ধ্যার পর বৃষ্টির মতো কুয়াশায় চারদিকে ঢেকে যাচ্ছে। নভেম্বর মাসের শেষের দিক থেকে উপজেলায় শীত নামতে শুরু করেছে। তীব্র শীতের কারণে বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় বেজায় খুশি ধুনকর আর গরম কাপড় ব্যবসায়ীরা। লোকজন নিজের পরিবারের সদস্যদের জন্য লেপ-তোষক সংগ্রহ করেছেন। তেপ-তোষাক তৈরির অগ্রিম বায়না নিচ্ছেন কারিগররা। ট্রেইলারগুলোতেও ভিড় করছে মানুষ। বিভিন্ন ধরনের শীত বস্ত্র তৈরির পাশাপাশি কোট-প্যান্ট তৈরির চাহিদাও বেড়ে গেছে। এই প্রচন্ড শীতের মোকাবিলায় আগাম প্রস্তুতি হিসেবে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় হিড়িক পড়েছে লেপ-তোষক বানানোর।
পৌরশহরের বিজয় চত্বর এলাকার মফিজুল ইসলাম, ঢাকা-পঞ্চগড় মহাসড়কের পাশে বাবু রহমান ও হাটখোলা এলাকার কাহারোল মোড়ে মা তুলা ঘরের স্বত্বাধিকারী মো. ইসরাইল হোসেনসহ অনেকে কারিগর লেপ-তোষক তৈরির কাজে ব্যস্ততা সময় পার করছেন। এ দিকে খোলা বাজারে লেপ-তোষক তৈরির তুলার দাম ক্রমাগত বেড়ে চলেছে বলে দাবি ক্রেতারা।
পৌরশহরের (পুরাতন শহীদ মিনার) বিজয় চত্বর এলাকার লেপ-তোষক তৈরির কারিগর আজিজুল ইসলাম জানান, বাজারে প্রতি কেজি গার্মেন্ট তুলা ৬০-৭০ টাকা, শিমুল তুলা ৪০০-৪৫০ টাকা, কার্পাস তুলা ১৮০- ১৯০ টাকায় বেচাকেনা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এ বছর তুলার মূল্য অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে পৌর এলাকা ও গ্রামাঞ্চলের গৃহবধূরা শীতের আগাম প্রস্তুতি হিসেবে পুরান কাঁথা, কম্বলগুলো জোড়াতালী দিয়ে মেরামত করেছেন।
উপজেলার দোকানগুলোতে একটি লেপ বানাতে প্রকারভেদে ১২০০-১৬০০ টাকা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে। পৌর শহরের পরিত্যক্ত ডাক্তার খানা মাঠ এলাকায় একজন ক্রেতা জানান, গতবার ১০০০ টাকায় যে লেপ বানানো হয়েছিল এবার সেটা ১২০০ টাকা খরচ পড়ছে।
লেপ কিনতে আসা মাহবুব ইসলাম বলেন, আসছে প্রচন্ড শীত। আমাদের এই উত্তরাঞ্চলে শীত বেশি হয়, তাই আগে ভাগে লেপ তৈরি করে নিতে এসেছি। তিনি আরও জানান, লেপ-তোষক প্রকারভেদে গত বছরের চেয়ে এবার ২৫০-৩০০ টাকা বেশি খরচ হচ্ছে।
উপজেলার হাটখোলা এলাকার কারিগর ইসরাইল ও জাকিরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিন ২-৪টা লেপ-তোষক বানাতে পারি। আর একটি লেপ-তোষক বানানোর মজুরি হিসেবে পাই ২৫০-৩৫০ টাকা। তবে সাইজ অনুসারে প্রতিদিন ৬০০-১০০০ টাকা পর্যন্ত রোজগার হয়। সেই টাকা দিয়েই সংসার চলে। দীর্ঘ ৯ বছর থেকে এই কাজ করে আসছি।
এদিকে লেপ-তোষক দোকানদার বাবু রহমান বলেন, লোকজন শীত নিবারণের জন্য শীতবস্ত্রের প্রতি ঝুঁকছেন। উপজেলায় লেপ-তোষকের অনেক দোকান থাকা শর্তেও প্রতিদিন ৭-১০টি লেপ-তোষক অর্ডার পাই। তিনি আরও বলেন, অন্য বছরের তুলনায় এবার কাপড় ও তুলার দাম বেশি। যেমন শিমুল তুলা ৪৫০-৫০০ টাকা প্রতি কেজি, সাদা (গার্মেন্টস তুলা) ৭০-৮০ টাকা প্রতি কেজি। কালো-হলুদ, লাল রংগের গার্মেন্টস তুলা ৪০-৫০ টাকা প্রতি কেজি। কার্পাস তুলা ১৮০ থেকে ১৯০ টাকা প্রতি কেজি বিক্রি করি। বিভিন্ন কাপড়ের মান অনুসারে প্রতি গজ ৬০-৭০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করা হয় ।