Homeজেলাবাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ

বাংলাদেশে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রয়োজন জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ

ইসমাইল ইমন, চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।।

২০২৪ সালে যখন বিশ্বব্যাপী বিশ্ব মানবাধিকার দিবসের এই দিনটি পালিত হচ্ছে তখন বাংলাদেশে ছাত্র- জনতার গনঅভ্যূন্খানের মাধ্যমে কর্তৃতবাদী সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হয়েছে।

১০ ডিসেম্বর মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব চত্বরে বেলা ১১ টায় বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের উদ্যোগে মানববন্ধন সমাবেশ ও বনাঢ্য শুভা যাত্রা অনুষ্ঠিত হয়।

মানবাধিকার সংগঠন অধিকার, আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন, ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস কমিশন ,আইনী সহায়তা কেন্দ্র,ও আইন সহায়তা ফাউন্ডেশন (আসফ) ও ছায়াপথের উদ্যোগে বিশ্ব মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে মানববন্ধনে অধিকার ,আসক ও আসফ এর পক্ষে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তবর্তী কালীন কমিটির সদস্য সচিব , চট্টগ্রাম উন্নয়ন সংস্থা সিডিএ’র বোর্ড মেম্বার ও আমার দেশ পত্রিকার চট্টগ্রাম আবাসিক সম্পাদক জাহেদুল করিম কচি, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ, সাংবাদিক ও সাহিত্যিক কামাল পারভেজ,সাহাব উদ্দিন, ওসমান জাহাঙ্গীর, কামরুল হুদা, রফিকুল ইসলাম, ইসমাইল ইমন সহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠনের বিভাগীয় জেলা ও মহানগরের নেতৃবৃন্দে।

প্রধান অতিথি বক্তব্যে বলেন – রাজনীতি আর মানবাধিকার সংগঠন কার্যক্রম এক সাথে করা যায় না। রাজনীতি করলে কখনোই মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয় নিয়ে কথা বলতে পারবেন না। মানবাধিকার সংগঠন করতে হলে নিজেকে নিরেপক্ষ ভাবে কাজ করতে হবে এবং জনসাধারণের মানবাধিকার লঙ্ঘিত বিষয় নিয়ে প্রতিবাদ করতে হবে। প্রধান অতিথি আরও বলেন যেখানে বিগত সরকারের সময় প্রতিনিয়তই রাষ্ট্রযন্ত্র কতৃক জন সাধারণের উপর স্টিমরোলার চালানো হয়েছে সেটাই ছিলো পৃথিবীর সবচাইতে বড় মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমরা এরকম সরকার চাইনা এবং পরবর্তী যেই দল ক্ষমতায় আসুক মানবাধিকার সংগঠন তারা তাদের নিজস্ব কাজ স্বাধীন ভাবে করতে পারে তারও নিশ্চিয়তা দিতে হব।

বক্তারা আরো বলেন, ২০২৪ সালের ৫ অগাস্ট বাংলাদেশের ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থান কর্তৃত্ববাদী হাসিনা সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হলে ৮ আগস্ট একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়। বাংলাদেশের অভূতপূর্ব ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী সাবেক কর্তৃত্ববাদী সরকারের পক্ষ অবলম্বন করে বিভিন্নভাবে এই অভ্যুত্থানকে এবং অন্তর্বর্তী সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টায় রয়েছে। এই সময়ে ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করতে বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা প্রচারণা চালাচ্ছে। ভারতের আগরতলায় অবস্থিত বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনে হামলা চালানো হয়েছে এবং বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশের নাগরিকদের হত্যা ও নির্যাতন অব্যাহত আছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো বাংলাদেশের উপর ভারতের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। শেখ হাসিনার সরকার গত সাড়ে ১৫ বছরে ক্ষমতাকে কুক্ষিগত করার জন্য দেশের সমস্ত রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পরিকল্পিতভাবে দলীয়করণের মাধ্যমে তাদের আজ্ঞাবহ প্রতিষ্ঠানে রূপান্তরিত করেছিল। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশন ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের রাজনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ব্যবহার করেছে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো অকার্যকর হওয়ার ফলে রাজনৈতিক অসহনশীলতা ও রাষ্ট্রের অগণতান্ত্রিক আচরণ এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন রোধের ক্ষেত্রে কার্যকর ভূমিকার অনুপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে কার্যকর করার লক্ষ্যে ৬টি কমিশন গঠন করেছে। এছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই ২৯ আগস্ট গুম হওয়ার বিরুদ্ধে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে গৃহীত সনদ ‘ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন ফর দি প্রোটেকশন অফ অল পারসনস ফ্রম এনফোর্সড ডিসএপিয়ারেনস্’ অনুমোদন করে। কিন্তু বাংলাদেশ অনুস্বাক্ষরীত ইতিপূর্বে বিভিন্ন সনদ/চুক্তিগুলোর বাধ্যবাধকতা অনুসরণ এবং তা বাস্তবায়নে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। অধিকার মনে করে এখনই সুযোগ এসেছে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠায় এই সকল সনদ/চুক্তিগুলো বাস্তবায়ন করা এবং জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সকল প্রতিষ্ঠান সংস্কার করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা নিশ্চিত করা।

সর্বশেষ খবর