নাজমুস সাকিব, ঝিনাইদহ।।
প্রকৃতিতে জানান দিয়েছে শীত। পুরো শীত মৌসুমজুড়ে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর থাকে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার উকড়ি বিল।
শামুখ ভাঙ্গা, হাসপাখি, বক, রাঙা ময়ূরী, ছোট স্বরালী, সারশ, গাঙচিল, পানকৌড়ি, বকসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি কয়েক হাজার পাখি। কখনও তারা দলবেধে জলকেলি খেলতে আবার কখনও মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াতে ব্যস্ত। কখনও আবার ব্যস্ত মাছ শিকারে। ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি পাখির এমন বিচরণ চোখে পড়ে ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার সীমান্তবর্তী করিঞ্চা গ্রামের উকড়ির বিলে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিশাল জলরাশির মাঝে মাঝে শাপলা, শালুক আর পদ্মপাতা জন্মেছে অনেক আগে থেকেই। একটু নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের আশায় পাতার ফাঁকে ফাঁকে উকি দিচ্ছে বক, রাঙা ময়ূরী, ছোট স্বরালী, সারশ, গাঙচিল, পানকৌড়ি, বকসহ নানা প্রজাতির দেশি-বিদেশি হাজার হাজার পাখি।
জানা যায়, পাখিরা প্রতিবছর শীতের শুরুতেই ভিনদেশ থেকে ডানায় ভর করে এখানে আসে একটু নিরাপদ আশ্রয় ও খাদ্যের আশায়। পাখিদের আগমনে উকড়ির বিল এখন অতিথি পাখিদের নিরাপদ আশ্রয়। উকড়ি বিলের আয়তন প্রায় ২২৫ একর। এই বিলে বর্তমানে পাখি রয়েছে ২০ থেকে ২৫ প্রজাতির।
পাশের গ্রাম থেকে বিলে ঘুরতে আসা সাব্বির হোসেন বলেন, দিনভর বিলের বিভিন্ন প্রান্তে শামুক ও মাছ শিকার করে পাখিরা কলকাকলিতে মুখরিত করে রাখে পুরো এলাকা। পাখির কিচিরমিচির শব্দ মন কাড়ে পাখি প্রেমীদের। এই দৃশ্য দেখতে প্রায় প্রতিদিন আসি। এখানে ঘোরার জন্য রয়েছে নৌকার ব্যবস্থাও।
ভবনগর গ্রামের প্রকৃতি প্রেমী নাজমুল হোসেন জানান, এই বিলে পাখিদের ওপর কোনো অত্যাচার হয় না। যার কারণে শীত প্রধান দেশ থেকে এই মৌসুমে বেশি পাখি আসে। এই শীতে এখানে গাঙচিল, ডঙকুর, সড়াইল, কাইয়ুমসহ আরও নাম না জানা অনেক পাখি দেখা যায়
বিলের পাহারাদাররা বলেন, বিলে যখন মাছ চাষ হত না তখন শিকারিরা পাখি শিকার করতে আসতো। কিন্তু যখন মাছ চাষের আওতায় আসে এবং কবীর হোসেন ইজারা নেয় তারপর থেকে শিকারিরা আর পাখি শিকার করতে আসে না। কবীর ভাইয়ের নির্দেশ, যদি কেউ পাখি শিকার করতে আসে তাহলে বাধা দিয়ে প্রশাসনকে জানাতে। জায়গাটা নিরাপদ হওয়ায় শীতে এখানে অনেক পাখি আসে। হাঁসপাখি, ডঙকুর, কাঁদাখোঁচা পাখিসহ ১৫/২০ রকমের পাখি আসে।
উকড়ির বিলের ইজারাদার কবীর হোসেন বলেন, নিজের ভালো লাগার জায়গা থেকে পাখিদের এই নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। প্রথমে যখন বিদেশি পাখিগুলো আসতো, তখন অনেক পাখি-শিকারি আসতো,পাখি শিকার করতো। তখন চিন্তা করি, শিকার বন্ধ না করলে পাখিগুলো নিরাপদ আশ্রয় মনে করবে না। এরপর আমি ব্যবস্থা নিয়ে শিকারিদের আসা বন্ধ করি। এখন পাখিদের কেউ একটি ঢিলও মারতে পারে না। নিরাপদ আশ্রয়ের কারণে পাখিগুলো শুধু শীতকালে নয় এখন সারা বছর এই বিলে থাকতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, এই বিলে ১৫ থেকে ২০ প্রজাতির পাখি বসবাস করছে। শীতের এই মৌসুমে পাখিগুলো বিলে আসে। এখানে নিরাপদ এবং পর্যাপ্ত খাবার থাকায় অনেক পাখি গরমকালেও এই জায়গা ছেড়ে যায় না। বিলের আশপাশে সবুজ থাকলে তারা বেশি স্বাচ্ছ্যন্দবোধ করে। পাখিগুলো সন্ধ্যা হলেই পদ্মপাতার আড়ালে এবং আশপাশের গাছে থাকে। সকাল হলেই আবার বিলে চলে আসে। পাখিদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করতে পেরে সত্যিই অনেক ভালো লাগে।