Homeইতিহাস ও ঐতিহ্যদিনাজপুরের নন্দিত ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্পী নিতুন কুন্ড

দিনাজপুরের নন্দিত ভাস্কর্য ও চিত্রশিল্পী নিতুন কুন্ড

পরিচয়ঃ
চিত্রশিল্পী, শিল্প উদ্যোক্তা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নিত্য গোপাল কুন্ড ৩ ডিসেম্বর ১৯৩৫ সালে দিনাজপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন।পিতা জ্ঞানেন্দ্রনাথ কুন্ডু।মাতা বীণাপানি কুন্ড।দুই সন্তান অমিত কুন্ড ও অনিমেষ কুন্ডু নাতি পরম কুন্ডু।

লেখাপড়াঃ
প্রাথমিক ১৯৪২সন বড় বন্দর পাঠশালায়। মাধ্যমিক ১৯৪৭সনে ভর্তি হন। ১৯৫২ সনে মেট্রিক গৃজনাদ হাই স্কুল।

চারু শিক্ষাঃ
নিত্য গোপাল কুন্ড ১৯৫৪ সালে ঢাকা চারুকলা ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন।১৯৫৯ সালে এই ইনস্টিটিউট থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি স্নাতক সম্মানের কোর্স সমাপ্ত করেন। চাকুরী নিত্য গোপাল কুন্ড প্রথমে ঢাকায় মার্কিন তথ্য কেন্দ্রে যোগ দিয়ে ১৯৭১ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর তিনি আর চাকরিতে যোগদান করেননি।

মুক্তি সংগ্রামে অংশগ্রহণঃ
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তিনি বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের অধীনে তথ্য প্রচার বিভাগের ডিজাইনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই সময় তার আকাঁ একটি পোস্টারের স্লোগান ছিল সদা জাগ্রত বাংলার মুক্তিবাহিনী।

চিত্র প্রদর্শনঃ
চিত্রশিল্পী হিসেবে তিনি ১৯০৫ সালে ১৯৬৬ সনে ঢাকায় চিত্র প্রদর্শন করেন।১৯৬৬ সনে চট্টগ্রামে। ১৯৬৮ সনে রাজশাহীতে।তার মোট চারটি একক চিত্র প্রদর্শনী হয়। এছাড়াও এই চিত্রশিল্পী ১৯৫৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দেশে-বিদেশে বহু যৌথ চিত্র প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছেন।নিতুন কুন্ড তার প্রতিটি কর্ম নতুন নান্দনি কতার মাধুরী মিশিয়ে বর্তমান প্রজন্মের আধুনিক মননশীল মানুষের একটা রুচিবোধ তৈরীকরে দিয়েছে।

অঙ্কনের ধরনঃ
তেল রং,জল রং,এক্রেলিক,এসিন, সেরিগ্রাফ,পেন্সিল, কালি/কলম,এই সকল উপকরণের মাধ্যমে তিনি তার চিত্রগুলি ফুটে তুলেছেন।

অটবি প্রতিষ্ঠাঃ
ফার্নিচার জগতের বিস্ময় অটবি। এটি হচ্ছে আধুনিক বাংলাদেশের প্রথম সারির একটি আসবাব পত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান। স্থাপিত হয় ১৯৭৫ সালে। প্রথম নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান বিদ্যুৎ কুমার বসু।বর্তমান প্রধান ব্যক্তি অনিমেষ কুন্ডু। প্রথম শোরুম এলিফ্যান্ট রোডে। দ্বিতীয় দিলকুসা বাণিজ্যিক এলাকায়।তৃতীয় মিরপুর।

উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্যঃ
সাবাস বাংলাদেশ ১৯৯২ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবনের সামনে স্থাপিত।এটির উদ্বোধন করেন তার মেয়ে অমিতি কুন্ডু সঙ্গে ছিলেন জাহানারা ইমাম। সার্ক ফোয়ার ১৯৯৩ সন এটি প্যান প্যাসিফিক হোটেল সোনারগাঁয়ের সামনে অবস্থিত।

কদম ফোয়ারা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের চত্বরে অবস্থিত মোরাল তুলারং জনতা ব্যাংক ঢাকা, ঐতিহ্যবাহী নৌকার প্রতীক সম্পান চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ২০০১ সং মসজিদ ফোয়ারা জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের সম্মুখের ফোয়ারা।

স্মরণীয় বরনীয়ঃ
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের পোস্টার ডিজাইন ১৯৭২ সালে ইন্দিরা গান্ধীর আগমন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মঞ্চের ডিজাইন বিভিন্ন ট্রাফিক ট্রফির নকশা জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পদকের নকশা শিল্পমেলা ট্রফির নকশা শিল্পী নিজ মনন মিশিয়ে নতুন ইঙ্গিকে তৈরি করেন

পুরস্কার ও সম্মাননাঃ
একুশের পদক ১৯৯৭সন। জাতীয় চিত্রকলা পুরস্কার ১৯৬৫সন।ডেইলি স্টার শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা পদক।এছাড়াও তিনি অনেক বেশি বিদেশি পুরস্কার অর্জন করেন।

মৃত্যুঃ
২০০৬ সালের ২২ সেপ্টেম্বর এই মহান শিল্পী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে১৫সেপ্টেম্বর সকালে বারডেম হাসপাতালে মারা যান। ১৬ই সেপ্টেম্বর পোস্তগোলা শ্মশানে এই মুক্তিযোদ্ধার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পূর্ণ হয়।

লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক রাজু।
গ্রন্থঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা। পর্বঃ ৫৮

সর্বশেষ খবর