জাকারিয়া শেখ, কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি।।
কুড়িগ্রামের জয়া রানী নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী দারিদ্র্য বিমোচনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। জীবিকার তাগিদে এবং পরিবারের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে তিনি কার চালানো শুরু করেন। গ্রামীণ সমাজে নারীদের পেশাগত উদ্যোগ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি হয়, তবে জয়া রানী সেই সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করতে পেরেছেন এলাকার মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি চাইল্ড নট ব্রাইড প্রকল্প (সিএনবি)‘র সহযোগিতায়।
কুড়িগ্রাম কারিগরি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে দুই মাসের প্রশিক্ষণ করেন জয়া রানী। তার এই প্রশিক্ষণে সার্বিক সহযোগিতা করেন সিএনবি প্রকল্প। জয়া রানী কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের রাবাইতারী গ্রামের হত দরিদ্র মুকুল চন্দ্রের দুই মেয়ের মধ্যে বড় মেয়ে এবং রাবাইতারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেনীর শিক্ষার্থী। তার পিতা তাকে অল্প বয়সেই বিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করলে বাধ সাধে জয়া রানী।নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার দৃঢ় প্রত্যয় তার বাবার ইচ্ছাকে হার মানায়। তার দৃঢ়তা তাকে আজ কুড়িগ্রাম জেলার কার ড্রাইভার হতে সহায়তা করেছে। সে কুড়িগ্রাম জেলা সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় কার চালাচ্ছেন।
জয়া রানীর এই কার ড্রাইভার হওয়ার পথ অতোটা সহজ ছিলো না। প্রশিক্ষণ শেষে তিনি ভেবে পাচ্ছিলেন না- কি করবেন। এমন সময় নজরে আসে তার নিজ গ্রামের সার্জেন্ট আতাউর রহমান সাহেবের। তার একটি কার, যা কালে ভদ্রে নিজের ব্যক্তিগত কাজে নিজেই ড্রাইভ করেন। সারা মাস প্রায় গ্যারেজেই পড়ে থাকে তার গাড়িটি। জয়া রানী নিজেকে স্বাবলম্বী করতে যোগাযোগ করেন সার্জেন্ট আতাউর রহমান এর সাথে।
জয়া রানী তাকে বলেন, তার ব্যক্তিগত ব্যবহারের বাইরে সে গাড়িটি ভাড়ায় চালাতে চায়। আতাউর রহমান সাহেব তার অদম্য ইচ্ছা দেখে তাকে গাড়িটি চালাতে দেন। এখন জয়া রানী সেই গাড়ি কুড়িগ্রাম সহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভাড়ায় চালাচ্ছেন। জয়া রানী তার আয়ের একটি অংশ প্রতিদিন আতাউর রহমান সাহেব কে দেন কিন্তু আতাউর রহমান সাহেব সে টাকার সামান্য অংশ গাড়ির মেইনটেনেন্স খরচ বাবদ রেখে বাকী টাকা জয়া রানীর বাবার হাতে ফেরত দিয়ে দেন। এর ফলে জয়া রানীর পরিবার স্বচ্ছলতার মুখ দেখতে পাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জয়া রানী বলেন, তার স্বপ্ন বিদেশের মাটিতে উবার চালানো। এ স্বপ্ন পূরণে সে সরকার ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয়ের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেন।
আতাউর রহমান সাহেব জানান, জয়া রানীর মানসিক শক্তি ও অদম্য ইচ্ছায় তিনি তাকে গাড়িটি চালাতে দিয়েছেন। মেয়েদের গাড়ি চালানোর বাধা কাটাতেও তার এই সহযোগিতা বলেও তিনি জানান। তিনি কামনা করেন জয়া রানীর মত আরো জয়া রানী সমাজে প্রতিষ্ঠিত হোক।
জয়া রানীর ডাইভিং সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, তার ড্রাইভ ভালো ও সততার সহিত তার কাজ করে থাকে। একারণে তিনি জয়া রানীকে স্বাবলম্বী করতে সামান্য মেইন্টেনেন্স খরচ টুকুই শুধু তিনি নিয়ে থাকেন।
মহিদেব যুব সমাজ কল্যাণ সমিতি(সি এন বি) প্রকল্পের ফুলবাড়ি উপজেলার ইয়ুথ গ্রুপ লিডের টেকনিক্যাল অফিসার মো: ইলিয়াস আলি জানান, তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টা দেখার পর তাকে সি এন বি প্রকল্পের ভাঙ্গামোড় ইউনিয়ন যুব সংগঠনের তথ্য ও প্রচার বিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত করেন। তিনি আরো জানান, কার চালানোর মাধ্যমে তিনি শুধুমাত্র অর্থ উপার্জনই করছেন না, বরং নিজের সক্ষমতার উদাহরণ তৈরি করছেন। তার এই সাহসী পদক্ষেপ অনুপ্রেরণা হতে পারে অনেকের জন্য, বিশেষ করে গ্রামীণ নারীদের জন্য যারা নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখেন। আমরা এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাকে ও সকল আগ্রহী নারী দের সহযোগিতা করব।