Homeজেলাকুড়িগ্রামে যত্র তত্র ইটভাটা, মাটির যোগান দিতে কৃষিজমি, রাস্তার বেহাল দশা

কুড়িগ্রামে যত্র তত্র ইটভাটা, মাটির যোগান দিতে কৃষিজমি, রাস্তার বেহাল দশা

জাহিদ খান, ষ্টাফ রিপোর্টার।।

কুড়িগ্রাম জেলার উত্তর ধরলার(নাগেশ্বরী, ফুলবাড়ী,ভুরুঙ্গামারী) বিভিন্ন অঞ্চলে অত্যাধিক ইটভাটা গড়ে উঠেছে। এই ইটভাটাগুলোর অধিকাংশই গড়ে উঠছে সরকারি নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে। যত্রতত্র ইটভাটা স্থাপনের কারণে পরিবেশ দূষণ এবং কৃষি জমির ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।

ইট তৈরির কাঁচামাল হিসেবে মাটি ব্যবহার করা হয়। এসব মাটি সংগ্রহ করতে গিয়ে ধ্বংস করা হচ্ছে উর্বর কৃষিজমি। ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার ফলে জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে এবং ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে। ফলে কৃষি নির্ভর এই দেশে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে। তাছাড়া বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি ফলদায়ী গাছেও এর বিরুপ প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে বলেও স্থানীয় কৃষি অধিদপ্তর থেকে জানানো হয়।

এ বিষয়ে ইট ভাটা সংলগ্ন নাগেশ্বরী উপজেলার বিন্নাবাড়ি এলাকার কৃষক রিয়াজুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ❝ আশপাশে ম্যালা ইট ভাডা বানাইছে মাইনষে। সরকারি নিয়ম মাইনচে কিনা তাক কবার পাবার নোয়াং। কিন্তুক, ওমার ভাডার মাডি যোগান দিতে এডেকার কিছু পাইসা লোভী জমি আলা ভাল আবাদি জমির মাডি ভেকু নাগে তুলি বেচে খাবার নাইগচে। যার জইন্তে ওই জমির সাতত হামার জমিও হুমকিত পইরবার নাইগছে। জমিত পানি দিলে পানি থাকে না, ওই মাডি কাডা নিছু জমিত চলি যায়। তাছাড়া সরকার পাইসা খরচ করি হামার জইন্তে পাকা আস্তা বানে দিচে, ওমার ভাটার মাডি উইব্বার জইন্তে বে-আইনি ট্রাক্টর চালেয়া আস্তা ভাঙ্গিয়া বেহাল দশা কইরবার নাইগচে। ভাডার মালিক ক্ষমতাবান মানুষ, হামরা কিছু কবারো পাইনা। সইয্যও কইরব্যার পাইনা। হামরা পড়চি ফাডা বাশের চিপাত।❞

তার কথার সত্যতা তাৎক্ষণিক নাগেশ্বরী ফুলবাড়ী রাস্তা থেকে ছিলাখানা ও ব্যারাকুটি যাওয়ার রাস্তায় দেখা গেলো। অনেক গুলো ট্রাক্টর মাটি লোড করে যাতায়াত করছে। ইটভাটাগুলোর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য এই ভারী যানবাহনের অতিরিক্ত চাপে রাস্তার বিভিন্ন স্থানে ভেঙ্গে একাকার, বিশেষ করে রাস্তা গুলোর গাইড ওয়াল ভেঙ্গে পাশের জমিতে নেমে গেছে। কারণ হিসেবে দেখা যায় মাটি ভর্তি করে পাশের জমি থেকে ট্রাক্টর উঠানামার ফল।

এসব বে-আইনি যানবাহন রাস্তা দিয়ে মাটি এবং ইট পরিবহন করে। অতিরিক্ত ওজন বহনের ফলে সড়কের বিভিন্ন স্থানে গর্ত তৈরি হচ্ছে, যাতে রাস্তা চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। এতে সাধারণ মানুষের যাতায়াতে ভোগান্তি বাড়ছে এবং দুর্ঘটনার ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ইটভাটাগুলোতে চুপিসারে কাঠ খড়ি ও কয়লা পোড়ানোর ফলে বায়ুদূষণ হচ্ছে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। আশপাশের এলাকার মানুষ শ্বাসকষ্ট, অ্যাজমাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে বলেও এলাকা বাসির সাথে কথা বলে জানা যায়।

বিজ্ঞ জন এ বিষয়ে বলেন-ইটভাটা স্থাপনের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নিয়ম-নীতি মানা এবং কৃষিজমি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। অবৈধ ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইট উৎপাদন উৎসাহিত করা সময়ের দাবী।

পরিবেশ, কৃষি এবং জনগণের স্বার্থ রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ সমস্যাগুলো আরো তীব্র আকার ধারণ করবে। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি।

উল্লেখ্য – কুড়িগ্রাম জেলার উত্তর ধরলার নাগেশ্বরী থেকে ফুলবাড়ী যাওয়ার রাস্তার মাত্র ১০কি.মি.(দশ কি.মি.) এর মধ্যেই ১০ টি(দশটি) ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর