Homeইতিহাস ও ঐতিহ্যইলামিত্র কৃষক, আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেত্রী চাঁপাই নবাবগঞ্জের জমিদার বাড়ির সংগ্রামী পুত্রবধূু

ইলামিত্র কৃষক, আন্দোলনের অবিসংবাদিত নেত্রী চাঁপাই নবাবগঞ্জের জমিদার বাড়ির সংগ্রামী পুত্রবধূু

পরিচয়ঃ
ইলা মিত্র ১৯২৫ সালের ২৮অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন। বাবাঃ নগেন্দ্রনাথ সেন।চাকরি করতেন ব্রিটিশ সরকারের অধীনে বাংলার অ্যাকাউন্ট জেনারেল হিসেবে। নগেন্দ্র নাথের বাসা যশোর জেলায়। চাকুরী সূত্রে ইলা মিত্রের জন্ম কলকাতায়। পরবর্তী সময় ইলা মিত্রের বাবা স্থায়ীভাবে বাসা করেন বর্তমান ঝিনাইদহ জেলার বাগুটিয়া গ্রামে।

লেখাপড়াঃ
ইলা মিত্র প্রথমে বেথুন স্কুল ও বেথুন কলেজ কলকাতায় লেখাপড়া করেন।১৯৪৪ সালে বি,এ ডিগ্রী অর্জন করেন।অতপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৫৮সালে বাংলা সাহিত্যে এম এ ডিগ্রী অর্জন করেন।

অ্যাথলেটিক্স রাজ্য চ্যাম্পিয়নঃ
ইলা মিত্র ১৯৩৮ সাল থেকে ১৯৫৩ সাল পর্যন্ত ছিলেন রাজ্য জুনিয়র অ্যাটলেটিক চ্যাম্পিয়নঃ এছাড়াও তিনি সাঁতার বাস্কেটবল ও ব্যাডমিন্টন খেলায় ছিলেন পারদর্শী।

প্রথম অলিম্পিক বাঙালি মেয়েঃ
তিনি প্রথম বাঙালি মেয়ে যিনি ১৯৪০ সালে জাপান অনুষ্ঠিত পৃথিবীর বৃহত্তম ক্রীড়া অনুষ্ঠান অলিম্পিকের জন্য নির্বাচিত হন কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিস্ফোরণ উন্মুখ পরিস্থিতির জন্য সে বছর অলিম্পিক খেলা বাতিল হয়ে যায় এই কারণে তার অলিম্পিক খেলায় অংশগ্রহণ করা হয়নি।

রাজনীতির হাতে খড়িঃ
বেথুন কলেজে অধ্যয়নের সময় থেকে ইলা মিত্রের। রাজনীতির সঙ্গে পরিচয় ঘটে ১৯৪৩ সালে তিনি কলকাতার মহিলা সমিতির সদস্য হোন। সে সময় হিন্দু কোড বিলের বিরুদ্ধে মহিলা সমিতির সদস্যদ গণ আন্দোলন শুরু করলে এ আন্দোলনে ইলা মিত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।

কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদঃ
মহিলাদের আত্মরক্ষা সমিতির সদস্য হিসেবে নারী আন্দোলনের কাজ করার জন্য তিনি মাত্র ১৮ বছর বয়সে ভারতীয় কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য পদ লাভ করেন।

বিবাহঃ
পৈতৃক নাম ইলা সেনের বিবাহ হয় ১৯৫০ সাল সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রামচন্দ্রপুর হাটের পার্শ্বে স্থানীয় জমিদার মহিম চন্দ্র মিত্রের ছোট ছেলে কমিউনিস্ট কর্মী রমেন্দ্র নাথ মিত্রের সঙ্গে।রমেন মিত্রের মাতার নাম বিশ্ব মায়া মিত্র। বিয়ের পর ইলা কলকাতা ছেড়ে চলে আসেন শ্বশুরবাড়ির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার রামচন্দ্রপুর হাটের জমিদার বাড়িতে।

মেয়েদের জন্য স্কুল প্রতিষ্ঠাঃ
গ্রামের সাধারণ মানুষ সবার দাবি তাদের নিরক্ষর মেয়েদের লেখাপড়া শিখার দায়িত্ব গ্রামের শিক্ষিত বধূ ইলামিত্র কি নিতে হবে। ইলার সহকারী শিক্ষক হলেন রমেন মিত্রের বন্ধু আলতাব মিয়া।কৃষ্ণ গোবিন্দপুর হাটের এই ইস্কুলটি তখন তিনজন ছাত্রী নিয়ে শুরু হলেও ইলা ও আলতাবের মিয়ার প্রচেষ্টায় তিন মাসের মধ্যে ছাত্রী সংখ্যা পঞ্চাশের ঘর অতিক্রম করে।

রানীমাঃ
ইলা মিত্র জমিদার বাড়ির অন্দরমহল থেকে বের হয়ে বহু বিধ সমাজসেবামূল কাজের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। হয়ে ওঠেন এলাকার সবার প্রিয় রনি মা

চাষীদের পক্ষে আন্দোলনঃ
মুঘল আমলে জমির মালিক ছিলেন কৃষকরা। তখন কৃষকরা তিন ভাগের এক ভাগ খাজনা জমিদার বা স্থানীয় শাসনকর্তাদের মাধ্যমে মুঘল বাদশাহ কে প্রদান করতে হতো। কিন্তু ব্রিটিশ শাসনামলে১৭৯৩ সনে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত প্রথা প্রচলনের ফলে গরিব চাষীদের জমির মালিকানা চলে যায় জমিদারদের হাতে। তখন উচ্চ খাজনার সঙ্গে ফসল উৎপাদন হোক বা না হোক খরা ও বন্যার কোন সম্পর্ক ছিল না। এ সময় মধ্যে দালাল মধ্যস্বত্তভোগী জোতদার শ্রেণীর আবির্ভাব ঘটে।

তেভাগা আন্দোলনঃ
ইলা মিত্র সমাজকর্মী স্বামীর মুখে জমিদার ও জোতদা রের হাতে বাংলার চাষীদের নিদারুণ বঞ্চনাও শোষণের কাহিনী শোনেন।এসব শুনে জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য নিজের পারিবারিক ঐতিহ্য ও মোহ ত্যাগ করে ইলা মিত্র কৃষকদের পাশে এসে দাঁড়ান।স্বামির উৎসাহে তিনি পুরোদোস্তর তেভাগা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে তিনি কৃষকের পক্ষে সংগ্রাম করেছেন।

ব্রিটিশের হাতে গ্রেফতারঃ
কৃষকদের সংঘটিত করে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়ার কারণে লীলা মিত্র ব্রিটিশদের হাতে গ্রেফতার হন। ভোগ করেছেন অমানুষিক নির্যাতন।

বঙ্গীয় আইনসভার সদস্যঃ
ব্রিটিশ সরকারের হাত থেকে মুক্ত হয়ে ইলা মিত্র পুনরায় রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন এবং বঙ্গীয় আইনসভার সদস্য নির্বাচনে তিনি সদস্য নির্বাচিত হন।

মৃত্যুঃ
সাধারণ দরিদ্র প্রজাদের কথা ভেবে কৃষক আন্দোল নের নেতৃত্ব দেওয়া এই মহান নেত্রীর ১১ই অক্টোবর ২০০২ সালে মৃত্যু হয়।

লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক রাজু।
গ্রন্থঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা। পর্বঃ ৪৬

সর্বশেষ খবর