ইমরুল হাসান সাজন, কুড়িগ্রাম জেলা প্রতিনিধি।।
শারীরিক গঠনে উচ্চতা কম হওয়ায় প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন এমনকি পরিবারের কাছে হতে হয় নানা কটাক্ষের শিকার। পড়াশোনা করে বড় হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হলেও সম্ভব হয়নি। তবে পড়াশোনা বা চাকরি করে সফল না হলেও ভালোবেসে সফল হয়েছেন তারা দুজনে। একজন যেন আরেকজনের পরিপূরক। হাজারো অভাবে ছেড়ে যাননি একে অন্যের হাত। মমিনুল-আদুরী দম্পত্তির ভালোবাসার এমন জুটি এখন এলাকায় ভালোবাসার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। হাজারো মতের অমিল,মানুষের কটাক্ষ,সমাজের হেয় চোখে তাকানোসহ কোনোকিছুই ফাটল ধরাতে পারেনি মমিনুল-আদুরী দম্পতির সুখের সংসারে।
কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের মৌ-লোভী পাড়া গ্রামের বাসিন্দা মমিনুল ইসলাম ও আদুরী বেগম। ২০১৮ সালে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হোন তারা। দুজনের উচ্চতা প্রায় ৩ ফুট। খর্বাকৃতি হওয়ায় দুজনকেই শুনতে হয়েছে সমাজের মানুষের নানান কটু কথা। কিন্তু সেসব কথাকে পাত্তা না দিয়ে একে অপরকে ভালোবেসে একসঙ্গে পার করে দিয়েছেন ৬ বছরেরও বেশি সময়। স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মো: মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,তারা শুধুমাত্র দেখতে খাটো। এটিই তাদের একটা অপূর্ণতা। সবার জীবনেই একটা না একটা সমস্যা থাকে। তাদের জীবনে এরকমটাই। তবে তাদের যে মিল-মহব্বত এটা অনেক বেশি। আমরা তাদের মাঝে কখনো বড় কোনো সমস্যা দেখিনি। তারা সবসময় হাসিখুশি থাকার চেষ্টা করেন। তাদের মতো স্বামী-স্ত্রী প্রতিটা সংসারে হওয়া উচিত। আদুরী বেগম বলেন,সংসার মানে সমস্যা,ঝগড়া ও নানা ঝুট ঝামেলা। অনেক সময়ে এসব বাড়লেও কখনো চিন্তাও করি নাই তাকে ছেড়ে যাব।
মৃত্যুর আগ পর্যন্ত একসঙ্গে থাকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ আমরা। মমিনুল ইসলাম বলেন,সৃষ্টিকর্তা আমাকে এভাবেই পৃথিবীতে বাঁচাতে চেয়েছেন। তিনি আমাকে ভালো রেখেছেন। মানুষের কটু কথা শোনেও আমি পড়াশোনা চালিয়ে গেছি। তবে সমস্যার কারণে এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা হয়নি। তারপরে কাজ করে সংসার চালাই। মায়ের দেওয়া ভিটেমাটি ছাড়া আর কিছু নেই। শুধু যে ঘরটিতে আমি থাকি সেটি আমার। তারপরেও আমার স্ত্রী সঙ্গ দিয়ে আসছেন। কখনো তিনি আমাকে হতাশ করেননি। সবসময় আমাকে সার্পোট দিয়ে থাকেন। এটি আমার জীবনের বড় প্রাপ্তি।
রাজারহাট উপজেলার উমরমজিদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো: আহসানুল কবির আদিল বলেন,তারা একই উচ্চতার। তাদের মধ্যে ভালোবাসার মধুর সম্পর্ক খুব কাছ থেকে দেখেছি। তারা সুন্দর করে জীবনযাপন করছেন। তারা ভালাবাসার কথা এখন সবার মুখে মুখরিত হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে সবসময় তাদের পাশে থাকার চেষ্টা করা হয়।