নাজমুস সাকিব, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বেথুলি গ্রামের প্রাচীন বটগাছটি দেশের অন্যতম আকর্ষণীয় পর্যটন স্পট হতে পারতো, তবে অবহেলা এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তা এখন বিপদের সম্মুখীন। সামাজিক বন বিভাগ কর্তৃক এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম ও প্রাচীন বটগাছ হিসেবে চিহ্নিত এই গাছটি ২০০৯ সাল থেকে সংরক্ষণের জন্য দায়িত্বে রয়েছে, কিন্তু কার্যত তেমন কোনো উন্নতি হয়নি।
বেথুলির বটগাছটির উচ্চতা আনুমানিক ৩০০ ফুট এবং বিস্তৃত এলাকা প্রায় ১১ একর। এর শিকড় ও ডালপালার বিস্তার এতটাই যে, মূল গাছ কোনটি তা এখন আর চেনা যায় না। গাছটির বয়স সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়দের মতে, এর বয়স ৪০০ বছরেরও বেশি হবে। গাছটির আশেপাশে বাংলা ১৩৬০ সালে প্রথম বাজার বসে, যা আজ একটি বড় বাজারে পরিণত হয়েছে। বাজারটির সাথে গাছটি বৃদ্ধির প্রক্রিয়া চলতে থাকে, এবং বর্তমানে সেখানে ৫৫-৬০টি দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
১৯৮২ সালে বিবিসির জরিপে এ গাছটি এশিয়ার সবচেয়ে বড় বটগাছ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। পরবর্তী সময়ে, ১৯৯০ সালে, গাছটির চারপাশে ১১ একর জমির উপর সীমানা প্রাচীর নির্মিত হয় এবং প্রায় ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি রেস্ট হাউজও স্থাপন করা হয়। তবে, রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব উন্নয়ন কাজ তেমন কোনো ফলপ্রসূ হয়নি। গাছটির সঙ্গে সম্পর্কিত জমি মল্লিকপুর গ্রামের কুন্টি বিবি ১৯৯০ সালে ঝিনাইদহ জেলা পরিষদের নামে দান করেন।
আরও পড়ুন:গীতিকার আবু হেনা মোস্তফা কামাল শিক্ষাবিদ কবি ও লেখক, বহুমাত্রিক প্রতিভার এক অনন্য মিছেল।
গাছটির দেখভালের দায়িত্বে থাকা একমাত্র ব্যক্তি আব্দুল খালেক জানান, গত চার বছরে তিনি সম্মানী হিসেবে মাত্র ১ হাজার ৮০০ টাকা পেয়ে আসছেন। পুরো ১১ একর জমি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং গাছটির সংরক্ষণে অত্যন্ত কঠোর পরিশ্রম করতে হলেও প্রয়োজনীয় সহায়তা নেই।
ঝিনাইদহের সুইতলা মল্লিকপুরের ৭০ বছরের বৃদ্ধ আবুল হাসেম বলেন, ‘এটি হতে পারতো দেশের অন্যতম পর্যটন স্পট বা অর্থনৈতিক অঞ্চল, কিন্তু আজ তা নিঃশেষ হওয়ার পথে।’
জামাল উদ্দিন বলেন, ‘একসময় গাছটির দুই হাজার ঝুরি ছিল, এখন তা কমে কয়েক শ’তে নেমে এসেছে। পর্যটকদের সুবিধার্থে রেস্ট হাউজ নির্মিত হলেও তা এখন পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।’
চুয়াডাঙ্গা থেকে আসা দর্শনার্থী আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘দেশে এত সুন্দর প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, যা না দেখলে বিশ্বাস করা যেত না।’
গাছটি দেখতে আসা রাকিন হাসান বলেন, ‘বিভিন্ন উৎস থেকে গাছটির গল্প শুনে এটি দেখতে এসেছি।’
কোলা বাজার এলাকা থেকে আসা আতিয়ার রহমান বলেন, ‘বাড়িতে নতুন আত্মীয় আসায় তাদের নিয়ে গাছটি দেখতে এসেছি।’
বটগাছটির সংরক্ষণ এবং পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেদারুল ইসলাম জানান, ‘সম্প্রতি আমি সেখানে গিয়েছিলাম। অনেক গাছ মরে গেছে এবং জায়গাটি বনে পরিণত হয়েছে। শীঘ্রই তা পরিষ্কার করা হবে এবং গাছটির সংরক্ষণের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে।
এশিয়ার বৃহত্তম বটগাছটি যদি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা হতো, তবে এটি দেশের অন্যতম পর্যটন স্পটে পরিণত হতে পারতো এবং অর্থনৈতিকভাবে এলাকার উন্নতিও ঘটাতে পারতো। তবে, এখন দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে এই প্রাকৃতিক সম্পদটি হারানোর ঝুঁকি রয়েছে।