পরিচয়ঃ
জননেতা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী ১৮৮০ সালের ১২ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ জেলার সয়াধানগড়া পল্লীতে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা হাজী সরাফত আলী। মাতা মোসাঃ মজিরন বিবি। শরাফত আলীর তিন ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে আব্দুল হামিদ খান সবার ছোট। তার শিশুকালে পিতা ও কিছুদিন পর মহামারীতে মাতা সহ দুই সহদর ভাই মারা যান।
ইসলাম প্রচারকের কাছে ঠাঁইঃ
আব্দুল হামিদ খান চাচা ইব্রাহিমের আশ্রয়ে থাকার সময় ইরাকের বাগদাদ নগরের এক বিখ্যাত আলেম ও ধর্মপ্রচারক মাওলানা নাসির উদ্দিন বাগদাদী সিরাজগঞ্জে আসেন। আব্দুল হামিদ খান তার আশ্রয় কিছুদিন কাটান। সেখানে তিনি কোরআন ও হাদিসের প্রথম দরস গ্রহণ করেন। ১৮৯৭ সালে আব্দুল হামিদ খান তার পীর সৈয়দ নাসির উদ্দিনের সঙ্গে আসাম গমন করেন এবং সেখানে ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে প্রথম আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হন।
জমিদার বাড়ির গৃহ শিক্ষকঃ
১৮৯৩ সালে তিনি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলার জমিদার শামসুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর বাড়িতে যান। সেখানে তিনি মাদ্রাসা মোদাররেসের দায়িত্ব পালন করেন। মাদ্রাসার ছেলেমেয়েদের কোরআন হাদিস শিক্ষার পাশাপাশি তিনি জমিদারের ছেলেমেয়েদেরকেউ পড়ানোর দায়িত্ব নেন।এবং তা যথাযোগ্য ভাবে পালন করেন।
তার ওস্তাদঃ
তার প্রিয় শিক্ষক দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসার ওলামায়ে দ্বীন মাওলানা আব্দুল বারী চিসতী। এছাড়াও তিনি সাইয়েদ নাসির উদ্দিন আল বাগদাদির কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন।আব্দুল হামিদ খান দুই বছর সেখানে লেখাপড়া করে ঢাকায় ফিরে আসেন।
রাজনীতিতে যোগদানঃ
দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর ময়মনসিংহ সফরে এলে তার ভাষণ শুনে আব্দুল হামিদ খান মজলুম কৃষকদের উৎপাদিত ফসলের ন্যায় বিচার পেতে জনসেবার প্রতি অনুপ্রাণিত হন।
কারা ভোগঃ
চিত্তরঞ্জন দাশের স্বরাজ পার্টিতে যোগদান। আব্দুল হামিদ খান ১৯১৯ সালে অসহযোগ আন্দোলন করে দশ মাস কারা ভোগ করেন। ১৯২৩ সালে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাস স্বরাজ পাটি গঠন করলে ভাসানী সেই দলে যোগদান করে দলকে সংঘটিত করতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
বিয়েঃ
১৯২৫ সালে তিনি আলেমা খাতুন ভাষানীকে বিয়ে করেন। আলেমা খাতুনের পিতা শামসুদ্দিন চৌধুরী উপজেলা পাঁচবিবি জেলা জয়পুরহাট।১৯২৬ সালে তিনি হালিমা খাতুনকে নিয়ে আসাম গমন করেন এছাড়া তার অপর দুই স্ত্রী আকলিমা খাতুন ও হালিমা খাতুন।সংসদ সদস্য আবু নাসের খানসহ তার সন্তান ৮ জন।
ভাসানী উপাধি প্রাপ্তিঃ
আসামে কৃষক প্রথা আন্দোলনে তিনি দুর্বার প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ১৯২৯ সালে আসামে ধুবড়ি জেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাষানচরে প্রথম কৃষক সম্মেলন আয়োজন করে সেখানে কৃষকদের উদ্দেশ্যে জ্বালাময়ী ভাষণ দেন।ভাসান চরে ঐতিহাসিক ভাষণের কারণে তার নামের শেষে ভাসানী শব্দটি যুক্ত হয়। তিনি ১৯৩৭ সালে কংগ্রেস ত্যাগ করে মুসলিম লীগে যোগদান করেন।
জনসচেতনতায় জন সমাবেশঃ
১৯৩১ সালে টাঙ্গাইলের সন্তোসের কাগমারিতে, ১৯৩২ সালে সিরাজগঞ্জের কাউরা খোলায়, ১৯৩৩ সালে গাইবান্দা জেলায় এর পর আসামের ধুবড়ি ও গোয়াল পাড়া সহ বিভিন্ন স্থানে কৃষক সম্মেলনে ভাষণ দেন।
ঐতিহাসিক কাগমারি সম্মেলনঃ
১৯৫৭ সালে টাঙ্গাইলের কাগমারি সম্মেলনে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন ও পূর্ব পাকিস্তানের স্বাধীনতার লক্ষ্যে পশ্চিম পাকিস্তানকে সালাম দিয়ে বিদায় গ্রহণ করেন।
লাহোর সম্মেলনে যোগদানঃ
১৯৪০ সালে শেরেবাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে মুসলিম লীগের লাহোর সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৪৪ সালে আসাম প্রদেশের মুসলিম লীগের সভাপতি নির্বাচিত হন।১৯৪৭ সালে তিনি আসামে গ্রেফতার হন ১৯৪৮ সালে মুক্তি পেয়ে টাঙ্গাইলে ফিরে আসেন।
পার্লামেন্ট সদস্যঃ
১৯৩৬ থেকে ১৯৬৬ সাল পর্যন্ত আসাম বিধানসভার সদস্য ছিলেন।সংসদীয় এলাকায় ধুবড়ি দক্ষিণ।
১৯৪৮ সালে তিনি পূর্ববঙ্গ ব্যবস্থাপক সবার সদস্য নির্বাচিত হন।তখন তিনি কৃষকদের জন্য কাজ করেন।
১৯৫৪ থেকে ১৯০৫৫ সাল পর্যন্ত আব্দুল হামিদ খান পাকিস্তানের সংসদ সদস্য। মৃত্যুর পূর্বে মুহূর্তে তিনি-
১৯৭৩ সালের ৭ এপ্রিল থেকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশের সংসদ সদস্য ছিলেন।
তার লেখা বইঃ
দেশের সমস্যা ও সমাধান (১৯৬২) মাও সে তুং এর দেশে (১৯৬৩) সন। আব্দুল হামিদ খান ভাসানী তার কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ২০০২ সালে একুশে পদক লাভ করেন।
মৃত্যুঃ
১৭ নভেম্বর ১৯৭৬সনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। টাঙ্গাইল জেলার সদর উপজেলার সন্তোষে পীর শাহজামান দিঘির পার্শে তাকে সমাধিস্ত করা হয়। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়ে ছিল ৯৫ বৎসর।
লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক রাজু
গ্রন্হঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা। পর্বঃ ৭৬