Homeবিবিধবীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত কুড়িগ্রামের তারামন বিবি

বীর প্রতীক খেতাব প্রাপ্ত কুড়িগ্রামের তারামন বিবি

পরিচয়ঃ
তারামন বিবি ১৯৫৭ সালের ১ ডিসেম্বর কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর উপজেলার শংকর মাধবপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন।পিতা আব্দুস সোবহান। মাতা কুলসুম বিবি।স্বামীর নাম আব্দুল মজিদ।তার তার দুই সন্তান।

মুক্তিযোদ্ধা অবদানঃ
১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন আবু তাহের।তারামন বিবির কুড়িগ্রাম জেলার শংকর মাধবপুর গ্রাম ছিল মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত। তারামন বিবির গ্রামের পাশের একটি ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন মুহিব হাবিলদার। তিনি তারামন বিবিকে মুক্তিযোদ্ধাদের ক্যাম্পে রান্নাবান্নার কাজের জন্য নিয়ে আসেন। তারা মনের বয়স তখন ১৪ বছর।

মুক্তি যুদ্ধে যোগদানঃ
তারামনের সাহস ও শক্তির পরিচয় পেয়ে মুহিব হাবিলদার তাকে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করেন ও প্রাথমিক অস্ত্র চালনা শিক্ষা দেন। পরে সহকর্মীদের কাছ থেকে অস্ত্র চালনার প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করে যুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তার বীরত্বভূষণ গ্যাজেট নং ৩৯৪।

যুদ্ধের এলাকাঃ
তারামন বিবি ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সৈনিকদের সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার নদীর তীরবর্তী অঞ্চল মোহনগঞ্জ, তাড়াবর, কোদাল, কাটি, গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়িতে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের সঙ্গে অংশগ্রহণ করেন।

বীর প্রতীক উপাধিঃ
বাংলাদেশে স্বাধীনতা অর্জনের পর ১৯৭৩ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতা ও বিরক্তপূর্ণ অবদানের জন্য তাকে বীর প্রতীক উপাধিতে ভূষিত করা হয়। কিন্তু তারামন বিবি বাংলাদেশের কোথায় থাকেন তখন পর্যন্ত কেউ জানতো না।

তারামন বিবিকে অনুসন্ধানঃ
১৯৯৫ সালে বেগম খালেদা জিয়ার সরকারের সময় ময়মনসিংহ আনন্দমোহন কলেজের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক বিমল কান্তি দে প্রথম তার সন্ধান পান।এই কাজে বিমল ক্লান্তি দে কে সহযোগিতা করেন কুড়িগ্রাম জেলার রাজিবপুর কলেজের অধ্যাপক আব্দুস সবুর ফারুকী। অবশেষে ১৯৯৫ সালে তারামন বিবিকে উদ্ধারের জন্য অনুসন্ধান শুরু হয়।গেজেটে তার নাম তারামন বেগম।

বীর প্রতীক খেতাব প্রদানঃ
কয়েকটি নারী অধিকার সংগঠন তারামন বিবিকে ঢাকায় নিয়ে আসেন ১৯৯৫ সালের ১৯ ডিসেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া আনুষ্ঠানিক ভাবে তারামন বিবির উপস্থিতিতে বীর প্রতীক খেতাব তার হাতে তুলে দেন।

তারামন বিবিকে নিয়ে সাহিত্যঃ
উত্তরবঙ্গের জননন্দিত কবি আনিসুল হক তারামন বিবিকে নিয়ে “বীর প্রতীক এর খোঁজে” নামে একটি বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া কবি আনিসুল হক রচিত “করিমন বেওয়া” নামক একটি বাংলা নাটকের কেন্দ্রীয় চরিত্রে ছিলেন তারামন বিবি।

মৃত্যুঃ
১ ডিসেম্বর ২০১৮ সালে নিজ বাসায় তারামন বিবি মৃত্যুবরণ করেন।মৃত্যুর পূর্বে তিনি দীর্ঘদিন অসুস্হতায় ভুগছিলেন। মৃত্যুর পর তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় রাজিপুর উপজেলার কাছারিপাড়া তালতলা কবরস্থানে সমাধিস্ত করা হয়।

লেখক, অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক রাজু।
গ্রন্থঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা।পর্ব ৭০

সর্বশেষ খবর