পরিচয়
প্রফুল্ল চাকী ১৮৮৮ সালের ১০ ডিসেম্বর বগুড়া জেলার বিহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতাঃ রাজনারায়ণ চাকী।রাজনারায়ণ চাকী ছিলেন নগর স্টেটের একজন কর্মচারী। মাতা স্বর্ণময়ী দেবী। পিতামহ প্রাণকৃষ্ণ চাকি। প্রাণকৃষ্ণ প্রথমে পাবনার চাকিয়ার বাসিন্দা ছিলেন। তাদের আদি পদবী ছিল বসু। চাকিয়ার অধিবাসী বলে তাদের চাকী বলা হতো। প্রফুল্ল চাকী ছিলেন পিতা মাতার পঞ্চম সন্তান।
লেখাপড়া
প্রফুল্ল চাকী বগুড়া সদরের নামুজা জ্ঞানদা প্রসাদ মাধ্যমিক ইংলিশ স্কুলে ভর্তির মাধ্যমে তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন। এরপর বড় ভাই প্রতাপচন্দ্র চাকীর সাথে রংপুরে যান। এবং মাধ্যমিক স্কুলে ভর্তি হন। সেখানে প্রতাপের শ্বশুর ছিলেন রংপুর অঞ্চলের একজন প্রভাবশালী ও ধনী ব্যক্তি ছিলেন।
স্কুল থেকে বহিষ্কার
ছাত্র বিক্ষোভ অংশ নেওয়ার জন্য নবম শ্রেণীতে পড়ার সময় রংপুর জেলা স্কুল থেকে বহিষ্কৃত হন। অতপর তিনি রংপুর ন্যাশনাল স্কুলে ভর্তি হয়ে পুনরায় লেখাপড়া শুরু করেন।
বিপ্লবী কার্যক্রম
রংপুর ন্যাশনাল স্কুলে লেখাপড়া করার সময় তিনি বিপ্লবীদের সংস্পর্শে আসেন এবং বিপ্লবী দর্শনের একজন আস্থাশীল ও অনুশীলনকারী হয়ে ওঠেন প্রফুল্ল। বিপ্লবী নিজেকে তুলে ধরা কোন বুদ্ধি নেই রবিন ঘোষ এর সঙ্গে কলকাতায় আসেন এবং ব্রিটিশ বিরোধী যুগান্তর বিপ্লবী দলে তালিকাভুক্ত হন।
যুদ্ধের পূর্ব প্রস্তুতি
প্রফুল চাকী ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ঘোড়ায় চড়া, সাঁতার কাটা, অস্ত্র চালানো শিখেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন একজন বিখ্যাত কুস্তিগীর ও লাঠি খেলোয়াড় ছিলেন। একজন ভালো ক্রীড়াবিদ হিসেবে এলাকায় তার সুনাম ছিল।
ব্রিটিশ কিংফোর্টকে হত্যা পরিকল্পনা
অপারেশন মুজাফফরপুর। প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরাম বসু ভারত বর্ষের বিখ্যাত এই দুই বিপ্লবী মিলে জেলা জজ ব্রিটিশ নাগরিক ডগলাস কিংসফোর্ড কে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। মুজাফফরপুরের যে গাড়িতে কিংসফোর্ড আসার কথা ছিল সেই গাড়িতে প্রফুল্ল বোমা নিক্ষেপ করেন। গাড়িতে কিংসফোর্ড না থাকায় গাড়ির যাত্রী ব্রিটিশ কংগ্রেস ম্যানের স্ত্রী ও কন্যা এই দুজন মহিলা নিহত হন।
ক্ষুদিরাম বসু গ্রেফতার
বিহারের মুজাফফরপুরে ইউরোপীয় ক্লাবের সামনে ভুল করে গাড়িতে বোমা নিক্ষেপের অপরাধে খুদিরাম বসু গ্রেপ্তার হন। কিন্তু সঙ্গী প্রফুল্ল চাকী প্রাথমিকভাবে পালিয়ে যেতে সক্ষম হোন।
প্রফুল্ল চাকির আত্মহত্যা
ক্ষুদিরাম বসুর গ্রেপ্তারের পর সঙ্গীপ্রফুল্ল চাকী ট্রেনে করে পালানোর সময় নন্দলাল বসু নামে একজন ভারতীয় বৃিটিশ পুলিশ অফিসার প্রফুল্লকে সন্দেহ করে এবং চ্যালেঞ্জ করেন। অবস্থা ব্যাগতিক দেখে প্রফুল্ল ১৯৪৮ সালের ২মে গ্রেফতার না হয়ে আত্মহত্যা করেন।
লাশ সনাক্তকরণ
প্রফুল্ল চাকির মাথা থেকে ধরকে আলাদা করে কলকাতায় নিয়ে এসে ক্ষুদিরাম বসুর দ্বারা প্রফুল্ল চাকির পরিচয় সনাক্ত করা হয়। পরে ক্ষুদিরাম বসু কে ফাঁসীতে ঝুলিয়ে হত্যা করা হয়।
প্রফুল্লচাকীর সৎকারঃ
বরেন্দ্রভূমির বীর সন্তান বগুড়া বাসীর গর্ব প্রফুল্ল চাকী ১৯০৮ সালের ২ মে মারা গেলে ভারতবর্ষের বিহার রাজ্যে তাকে সৎকার করা হয়।
মো আব্দুর রাজজাক রাজু।
(সহকারী অধ্যাপক বাংলা)
গ্রন্থঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা। পর্বঃ ৩৫