জাকারিয়া শেখ,ফুলবাড়ী(কুড়িগ্রাম)প্রতিনিধি
হেমন্তের বিদায় লগ্নে ভোরের হালকা কুয়াশায় নিমজ্জিত সবুজ ঘাসের ডগায় জমে থাকা শিশির বিন্দু আর ঝরে থাকা শিউলী ফুলের মিষ্টি সৌরভ যেন পৌঁছে দিচ্ছে শীতের আগমনী বার্তা।
আবহমান গ্রামবাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস ছাড়া যেন শীতের আমেজই পাওয়া যায় না। শীতের সকালে মিষ্টি রোদে বসে বসে সুস্বাদু খেজুরের রস খাওয়ার মজাই আলাদা।শীতের আগমনী বার্তায় গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে খেজুরের রস আহরণে গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার গাছিরা ।কিন্তু কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রামবাংলার খেজুরের রসের ঐতিহ্য ।
কুড়িগ্রাম জেলায় জীববৈচিত্রের সংরক্ষণ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ উন্নয়নে সংশ্লিষ্ট বন বিভাগ খেজুর গাছ সংরক্ষণে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে না পারার কারণে এই অঞ্চলে খেজুর গাছ অনেকটা বিলুপ্তির পথে। খেজুরের রস দিয়ে তৈরি করা নলের গুড়, ঝোলা গুড়, দানা গুড় ও বাটালী গুড়ের মিষ্টি গন্ধেই যেন অর্ধভোজন হয়ে যেতো। খেজুর রসের পায়েস, রসে ভেজা পিঠাসহ বিভিন্ন সুস্বাদু খাবাররতো জুড়িই ছিল না।খ্যাতি থাকলে ও কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুরের রস ও গুড়।কিছুদিন আগেও বিভিন্ন এলাকার অধিকাংশ বাড়ির পুকুর পাড়ে কিংবা রাস্তার দুই ধার দিয়ে অসংখ্য খেজুর গাছ ছিল। খেজুর গাছগুলো পরিচর্যা ছাড়াই অনেকটা প্রাকৃতিকভাবে বেড়ে উঠতো। শীত মৌসুমে রস-গুড় উৎপাদন করে কয়েক মাস স্বাচ্ছন্দ্যে জীবিকা নির্বাহ করেন জেলার অনেক পরিবার।খেজুর গাছ সংকটের কারণে প্রতি বছরের মতো এবছর চাহিদা অনুযায়ী রস ও গুড় পাওয়া যাবে না বলে আশঙ্কা করেছেন গাছিরা।
সরেজমিন ঘুরে দেখা মেলে সকালের মিষ্টি রোধে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য খেজুর রস সংগ্রহের জন্য ফুলবাড়ী উপজেলার রামরামসেন গ্রামে গাছি রিয়াজুল ইসলাম খেজুর গাছের শুভ্র বুক ছিরে রস সংগ্রহের প্রাম্ভিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন।তিনি জানায়,এখানে ৯৫টি গাছ লিজ নিয়েছি।এক সময় খেজুর রস ও গুড়ের জন্য ফুলবাড়ী উপজেলার খ্যাতি ছিল। শীতকালে শহর থেকে মানুষ দলে দলে ছুটে আসত গ্রাম বাংলার খেজুর রস এবং গুড়ের জন্য । ওই সময় সন্ধ্যাকালীন গ্রামীণ পরিবেশটা খেজুর রসে মধুর হয়ে উঠতো।গ্রামবাংলার আলোচিত ভাপা পিটার সঙ্গে খেজুরের গুড় যেন কখনও ভোলা যায় না।
আরও পড়ুন:জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকার রাজশাহীর খোদাবক্স মৃধা
উপজেলার রামরামসেন গ্রামের গাছ মালিক বক্কর মিয়া জানান,গাছিদের ৩/৪ মাসের জন্য ৪ থেকে ৫কেজি করে খেজুরের গুড় বিনিময়ে গাছগুলো আমরা ভাড়া দেই।বাপ-দাদার ঐতিহ্যকে ছেড়ে না দিয়ে অনেকটা স্মৃতি হিসাবে ধরে রেখেছি। বর্তমানে যে হারে খেজুর গাছ হারিয়ে যাচ্ছে, এক সময় আমাদের এলাকা থেকে খেজুর গাছ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা জানান, বাংলাদেশের প্রতিটি অঞ্চলেই খেজুর গাছ প্রায় বিলুপ্তির পথে। আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের জন্য ধরে রাখতে চাইলে এই কাজে আমাদের সবার এগিয়ে আসা উচিৎ।