জাহিদ খান(ষ্টাফ রিপোর্টার)
কুড়িগ্রাম জেলার ফুলবাড়ি উপজেলার কাশিপুর ডিগ্রি কলেজ টি এলাকার শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিবর্গ ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠা করেন।প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ ছিলেন জনাব মেহের জামাল সাহেব। অধ্যক্ষ জনাব মেহের জামাল ২০১০ সালে অবসর গ্রহণ করেন।
অতঃপর কাশিপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে আ:বাকী খন্দকার অত্র কলেজে ২০১৩ সালে যোগদান করেন।তার যোগদান কালীন কলেজের সভাপতি ছিলেন ফুলবাড়ি উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামিলীগ এর সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার।উল্লেখ্য -আ: বাকী খন্দকার উপজেলা আওয়ামিলীগ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।যোগদানের পর থেকেই প্রতিষ্ঠান টিকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তির মত করে ব্যবহার করে কলেজ টির অর্জিত সাফল্য সর্ব ক্ষেত্রেই তলানীতে নিয়ে এসেছেন বলে এলাকার সুধীজন মন্তব্য করেন।
কলেজ টি ১৯৯৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার অল্প সময়ের মধ্যেই ফুলবাড়ি উপজেলার সেরা কলেজ হিসেবে নিজেদের অস্তিত্ব জানান দেন।কিন্তু ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ জনাব মেহের জামাল সাহেবের অবসরের পর আওয়ামিলীগ সমর্থিত ও ফুলবাড়ি আওয়ামিলীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জনাব আ: বাকী ক্ষমতার দাপটে অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন ও শুরু করেন দূর্নীতির মহা যজ্ঞ।
কলেজে প্রতিবছর এইচ এস সি তে (তিন বিভাগে) ভর্তি কোটা ৪০০ জন থাকলেও ভর্তি হয় ২২০ থেকে ২৩০ জন শিক্ষার্থী। শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে প্রতিজন শিক্ষার্থী র নিকট ভর্তির ফি বাবদ সর্বনিম্ন ১৫০০/- থেকে ২৬০০/- টাকা পর্যন্ত গ্রহন করা হয়।সে হিসেবে এইচ এস সি তে ভর্তি থেকে আয়-৩.৫ লক্ষ টাকা,একই ভাবে কারিগরি বিভাগে ৮০ আসনের ভর্তিতে আয়-১.৫ লক্ষ টাকা।ডিগ্রি পর্যায়ে ৫০ আসনের ভর্তি আয়-১ লক্ষ টাকা।এছাড়াও
শিক্ষক /এলাকাবাসী আরো জানান প্রতিবছর কলেজের সরকারি টিউশন ফি বাবদ গড়ে ২.৫ লক্ষ টাকা,শিক্ষার্থীদের ট্রান্সক্রিপ্ট ও প্রশংসা পত্র থেকে গড়ে ২ লক্ষ টাকা ও কলেজ মাঠ সংলগ্ন ৮ টি দোকান থেকে ভাড়া বাবদ ৭০ হাজার টাকা আয় করে থাকেন।
আরও পড়ুন:আপত্তিকর ছবি ছড়াতেন সাবেক স্বামী, অভিমানে মিমের আত্মহত্যা
একই ভাবে তিন শ্রেণির ই বাৎসরিক ফরম পূরণ বাবদ সম পরিমাণ আয় হয়ে থাকে বলে কলেজের শিক্ষক গণ (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান।
প্রাপ্ত হিসাব মতে কলেজের ভর্তি ও ফরম পূরণ বাবদ বোর্ডের নির্ধারিত ফি বাদ দিয়ে বাৎসরিক গড় আয়-৮ লক্ষ টাকার উপরে।এছাড়াও বিভিন্ন আভ্যন্তরীণ পরীক্ষা,সেশন ফি,মাসিক বেতন থেকেও নূন্যতম ৫ লক্ষ টাকা আয় হয় বলেও নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষক/কর্মচারী গণ জানান। কলেজের নামে থাকা তিন একর আবাদি জমির ফসলের হিসাব অধ্যক্ষ ব্যতীত কেউ জানে না বলেও জানা যায়।
কলেজ টির এতো বিশাল আয় থাকার পরও কলেজের দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন বিগত এক যুগে পরিলক্ষিত হয়নি।মাঝে কয়েক বছর সামান্য কিছু সংস্কার কাজ করা হয়েছে যার ব্যায় কোনো ভাবেই ১০ লক্ষ টাকার উপরে নয় বলেও জানা যায়।
এলাকাবাসী ও শিক্ষক / কর্মচারী গণ বলেন-সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় হলো- শিক্ষক /কর্মচারী গণ দের জন্য নেই কোনো কমনরুম। নেই বসার জন্য উপযুক্ত চেয়ার টেবিল।কলেজের ফান্ডেও নেই উল্ল্যেখ করার মতো টাকা।শিক্ষকদের জন্য মাসিক বেতন হিসেবে কলেজ ফান্ড থেকে একটি অংশ দেয়ার বিধান থাকলেও কোনো সময়ই শিক্ষকদের তা দেয়া হয়নি বলেও জানান কলেজটির শিক্ষক/কর্মচারীগণ।
বিগত এক যুগে অধ্যক্ষ জনাব আ: বাকী খন্দকার শুধু মাত্র কলেজের আয় থেকেই ১ কোটি টাকার উপরে তছরুপ করেছেন বলে শিক্ষক/এলাকাবাসী জানান।তারা এর প্রতিবাদ করেন নি কেনো? এ প্রশ্নের জবাবে জানান- অধ্যক্ষ সাহেব বিগত সরকারী দল আওয়ামিলীগ এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন ও কলেজের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান ও আওয়ামিলীগ এর উপজেলা সাধারণ সম্পাদক গোলাম রব্বানী সরকার, পরে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামিলীগ এর সভাপতি জনাব জাফর আলী সাহেব একাধারে ১২[এক যুগ] বছর দায়িত্ব পালন করায় তার দাপটে কেউ মুখ খোলার সাহস করেনি।
কলেজটি নিজ দলীয় নেতাকর্মী দ্বারা নামে মাত্র গঠিত ম্যানেজিং কমিটি দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় অধ্যক্ষ তার একক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছেন বলেও এলাকা বাসীর অভিযোগ।
উল্ল্যেখ্য- অধ্যক্ষ আ: বাকী খন্দকার প্রায় ২কোটি ২০ লাখ টাকার ও বেশী আয় করেন কলেজে বিশাল সংখ্যার নিয়োগ বানিজ্য করে।
কলেজের বর্তমান শিক্ষক কর্মচারী সংখ্যা- ৪২ জন।যার মধ্যে এম পি ও ভূক্ত ২৯ জন শিক্ষক/কর্মচারী ও নন- এম পি ও শিক্ষক কর্মচারীর সংখ্যা ১২ জন শিক্ষক ও ১ জন করণীক।নন- এম পি ও শিক্ষক /কর্মচারী দের সংগে কথা বলে জানা যায়,অধ্যক্ষ সাহেব জনবল কাঠামো অনুসরণ না করেই টাকার লোভে অতিরিক্ত শিক্ষক/কর্মচারী নিয়োগ দেয়ার ফলে তারা দীর্ঘদিন থেকে নিয়োগ পেয়েও এম পি ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।আদৌ তারা এম পি ও ভুক্তি হতে পারবেন কিনা সে বিষয়েও অনিশ্চয়তার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন১৩ জন শিক্ষক কর্মচারী।
এই বিশাল শিক্ষক কর্মচারীর মধ্যে অধ্যক্ষ আ: বাকী খন্দকার একাই নিয়োগ দেন মোট ২১ জন শিক্ষক/কর্মচারী। এই বিশাল নিয়োগ বানিজ্যর বিষয়ে খোজ নিয়ে জানা যায় প্রতিজন প্রভাষক নিয়োগ দিতে তিনি একদর ৫ লক্ষ টাকা করে ১১ জনের নিকট ৫৫ লক্ষ টাকা,অফিস সহকারী ৩ জন প্রতিজনের নিকট ২৫ লক্ষ করে ৭৫ লক্ষ টাকা,অফিস সহায়ক ৩ জন, প্রতিজন ১০ লক্ষ টাকা করে ৩০ লক্ষ টাকা,ল্যাব এসিস্ট্যান্ট ৪ জন প্রতিজন ১৫ লক্ষ টাকা করে ৬০ লক্ষ টাকা মোট-২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা গ্রহন করেন।এই বিশাল নিয়োগ বানিজ্যের টাকায় প্রতিষ্ঠানে উপরে উল্লেখিত সংস্কার কাজের ১০ লক্ষ টাকা (আনুমানিক) ব্যয় করেন বলে জানা যায়।বাকী সমূদয় টাকা অধ্যক্ষ আ: বাকী খন্দকার একাই তছরুপ করেন বলে জানা যায়।
এলাকাবাসী জানান,দীর্ঘদিন অধ্যক্ষ সাহেব প্রতিষ্ঠান টিকে নিজের পৈত্রিক সম্পত্তির মতো করে ব্যবহার করার কারন তিনি একাধারে অধ্যক্ষ,সাবেক সরকার দলীয় নেতা ও মনগড়া উপায়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন সহ সভাপতি নিজ দলের নেতৃবৃন্দ কে রাখা।কেউ তাকে কিছু বললেই তার উপর দলীয় চাপ,গুন্ডা বাহিনী লেলিয়ে দেয়া সহ নানাবিধ হয়রানির শিকার হতেন।বিধায়নকেউ তাকে কিছু বলার সাহস পেতো না।
কাশিপুর ইউনিয়ন বি এন পি র সাধারণ সম্পাদক জনাব আলমগীর হোসেন (মাষ্টার) জানান তিনি বিভিন্ন সময় তার অপকর্মের প্রতিবাদ জানিয়েছেন।কিন্তু ক্ষমতার দাপটে তিনি তা তোয়াক্কা না করে উলটো হুমকি ধামকি প্রদান করতেন।৫ আগষ্টের পর থেকে অধ্যক্ষ কলেজেও নিয়মিত নন।তিনি যথাযথ কতৃপক্ষের নিকট তদন্ত স্বাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান।
উল্ল্যেখ্য- অত্র কলেজের অধ্যক্ষ সাহেবের দূর্ণীতি র প্রতিকার চেয়ে এলাকার অভিভাবক মো: কামাল হোসেন (তোতা) একটি মামলা দায়ের করেছিলেন।যা বিচারাধীন।
বর্তমান অন্তরবর্তীকালীন সরকার দূর্ণীতি বিরোধী অভিযান চালানোয় এলাকাবাসী আস্বস্ত হচ্ছেন এই ভেবে যে,এখন হয়ত তার কৃত দূর্ণীতি যথাযথ কতৃপক্ষ দ্রুত তদন্ত করে তাকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনবেন।যাতে আগামী দিন গুলিতে অত্র কলেজের কেউ আর দূর্ণীতি না করতে পারেন।পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী কাশিপুর ডিগ্রী কলেজ যেনো তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পায়।
এ বিষয়ে কাশিপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ জনাব আ: বাকী খন্দকার এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তাকে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ জানানো হলে তা এক বাক্যে অস্বীকার করেন