এস এম আলতাফ হোসাইন সুমন, লালমনিরহাট প্রতিনিধি।।
নিয়মিত তদারকির অভাবে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো থেকে সেবা বঞ্চিত হচ্ছে নিম্ন আয়ের জনগোষ্ঠী। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নেই কোন নজরদারি, নেই কোন জবাবদিহিতা।
সরকারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী স্বাস্থ্যসেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানোর লক্ষ্যে কমিউনিটি ক্নিনিকগুলোর স্বাস্থ্য কর্মীরা গ্রাম পর্যায়ে টিকা দান, পরিবার পরিকল্পনা, জন্মনিয়ন্ত্রণ, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন পরামর্শ ও সেবা দেওয়ার কথা কিন্তু কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি) দায়িত্বে অবহেলা এবং অনিয়মিত অফিসে আসার কারণে নিন্ম আয়ের জনগোষ্ঠী স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
সরেজমিনে হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অবস্থিত কমিউনিটি ক্লিনিক ঘুরে দেখা গেছে, অধিকাংশ কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো তালাবদ্ধ। নেই কোন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী বা সেবা গ্রহীতা নারীপুরুষ। ক্লিনিক গুলোতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।
পর্যায়ক্রমে উপজেলার কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো মধ্যে গত ২৩ অক্টোবর ডাউয়াবাড়ী ইউনিয়নের পশ্চিম বিছনদই ও সিন্দুর্না ইউনিয়নের দক্ষিন সিন্দুর্ণা কমিউনিটি ক্লিনিককে সকাল ১০ টায় তালাবন্ধ অবস্থায় পাওয়া যায়। দক্ষিন সিন্দুর্ণা কমিউনিটি ক্লিনিককের কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডারদের (সিএইচসিপি)
মোছা রুমানা পারভীন বলেন। আজ পারিবারিক কারনে আসতে একটু দেরি হ
অপর দিকে ২৪ অক্টোবর সানিয়াজান ইউনিয়নের আরাজি শেখ সুন্দর কমিউনিটি ক্লিনিকে দুপুর ২টার সময় গিয়ে দেখা যায় তালাবদ্ধ। সেখানকার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) আফরোজা আক্তারের সাথে ফোনে কথা বললে তিনি বলেন অফিস টাইম সকাল ৯ থেকে দুপুর ৩টা পর্যন্ত কিন্তু প্রতিদিন আমাদের রিপোর্ট পাঠাতে হয় উপজেলা সদরে, অফিসে নেটওয়ার্ক পায় না তাই বাড়ি চলে এসেছি।
একই দিনে পশ্চিম বিছনদই কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল ৯টার সময় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় অফিস তালাবদ্ধ। তবে বেলা ১১টায় অফিসে আসেন সেখানকার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) দিদারুল রহমান এর সাথে। তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন বাহিরে কাজ ছিল তাই আজ একটু দেরি হয়ে গেছে। পশ্চিম বিছনদই গ্রামের নুর ইসলাম ও রতন নামের ২ ব্যক্তি বলেন কোন কোন দিন তারা অফিস খোলে এবং ১টার মধ্যে চলে যায়। নিয়ম নীতি বলতে কিছুই নেই।
২৭ অক্টোবর সরেজমিনে বাড়াইপাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে সকাল সাড়ে ১০ টায় গিয়ে দেখা যায় অফিসে তালা লাগানো। সেখানকার কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি) পাপিয়া আক্তারের সাথে ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন সকালে অফিস গিয়েছিলাম বাচ্চা সাথে থাকার কারনে ১২টার দিকে বাসায় চলে এসেছি। ঐ এলাকার বাসিন্দা বিকাশ চন্দ্র, নুর মোহাম্মদ ও রাকিব নামের ৩ জন ব্যক্তি বলেন পাপিয়া ম্যাডাম মাঝে মধ্যে এসে ১/২ ঘন্টার মধ্যে চলে যান।
জানা গেছে, স্বাস্থ্য বিভাগ কমিউনিটি ক্লিনিক গুলো সিবিএইচসি অপারেশন প্লানের আওতায় স্বাস্থ্য সেবা বাস্তবায়িত করছিল। তবে বর্তমান কমিউনিটি ক্লিনিক স্বাস্থ্য সহয়তা ট্রাস্টের আওতার প্রক্রিয়াধীন।
দেশের প্রতিটি ইউনিয়নে সাবেক ১টি ওয়ার্ড, বর্তমান ৩টি ওয়ার্ডের ৬ হাজারের মত জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১টি করে কমিউনিটি ক্লিনিক স্হাপন করে সরকার। প্রাথমিক চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য প্রতিটি কমিউনিটি ক্লিনিকে ১জন করে কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার, ১জন করে স্বাস্থ্য সহকারী ও ১জন করে পরিবার পরিকল্পনা সহকারী আছেন। এছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঔষধ সরবরাহ করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। কিন্তু কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের দায়িত্বে অবহেলা ও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নজরদারির অভাবে মুখ থুবড়ে পড়েছে কমিউনিটি ক্লিনিকের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা।
এবিষয়ে হাতীবান্ধা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মাসুদ পারভেজ বলেন আপনাদের তথ্যের সঠিক আমার কাছেও অনেক কমিউনিটি হেলথ প্রোভাইডারের বিরুদ্ধে অভিযোগ অনেকে করেছেন কিন্তু লিখিত কোন অভিযোগ এখন পর্যন্ত আমি পাইনি। যদি কেউ লিখিত অভিযোগ করেন। তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারব । এছাড়াও বর্তমানে অনেক কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইসিপি নেই, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে অনেকে পলাতক রয়েছেন । ছয় মাস থেকে তাদের বেতনও বন্ধ ঔষধপত্র সাপ্লাই নেই। কমিউনিটি ক্লিনিক গুলোর সুপারভিশন মনিটরিং কয়েক দিন আগে শেষ হয়েছে । কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। মিটিংএ এসব বিষয় নিয়ে আলোচনা করব যাতে তারা সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেন।