মাফি মহিউদ্দিন,কিশোরগঞ্জ, নীলফমারী প্রতিনিধি।।
নীলফামারী কিশোরগঞ্জে দিন দিন বেড়েই চলছে থাই গেম জুয়া ও ভিসা চক্রের দৌরাত্ম্য। এই চক্রের প্রতারকরা প্রবাসীদের ঠকানোর টাকায় মোটা তাজা হয়ে উঠছে। ফেসবুকে ভিডিও বুস্ট করে ইমু নম্বর দিয়ে কৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে তারা।
এদের চাল চলনে স্থানীয় সাধারনরা হতবাক হচ্ছে। এদের কর্মকান্ডে প্রশাসনেরও নজরদারী বেরেছে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে কেউ কেউ গাঁ ঢাকা দিয়েছে। গত বৃহষ্পতিবার বাহাগিলী ইউপির উত্তর দুরাকুটি গ্রাম থেকে শামসুজ্জামান (২৭), মোরসালিন ইসলাম (১৮), রাকিব শাহ্ ও হাসু ইসলাম সহ ৪ জনকে প্রতারনা করার সময় হাতে নাতে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর আগে নিতাই ছলিমের বাজারে ভিসা প্রতারনার ঘটনায় ডিবি পুলিশ রবিউল ইসলামকে গ্রেফতার করলে চক্রের সদস্যরা একজোট হয়ে তাকে ছিনিয়ে নেয়। এ ঘটনায় ১১৮ জনের নামে মামলা করে ডিবি পুলিশ।
অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতারকচক্র ডলার দিয়ে মধ্যপ্রাচ্য ও পশ্চিমা দেশের ইমু নম্বর কিনে মোবাইলে সেট আপ দেয়। ফেসবুকের ভিডিওতে কোটি টাকার থাই গেমের বিজয়ী নম্বর ও ইউরোপ কান্ট্রির ভিসা দেয়ার নান প্রলোভন দেখায়। প্রবাসীরা সেই ইমুতে যুক্ত হলে প্রতারকরা কৌশলে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেয়।
প্রথমে নিতাই ইউনিয়নের ছলিমের বাজারে এই প্রতারক চক্রটি গড়ে উঠে। স্বল্প শিক্ষিত নিম্ন আয়ের বখাটে যুবকরা এ চক্রের সদস্য। তাদের রয়েছে ৩ লাখ থেকে ৫ লাখ টাকা দামের মটরবাইক, ৫০ হাজার থেকে এক লক্ষ টাকা দামের স্মার্টফোন, ২ লক্ষ টাকা দামের ল্যাপটপ ও নির্মাণ করেছে বহুতল রাজকীয় বাড়ী। গত তিন বছরে উপজেলায় ছড়িয়ে পড়েছে এরা। মদদদাতা থাকায় তাদের দৌড়াত্ম্য দিন দিন বেড়েই চলছে। সম্প্রতি উপজেলার নিতাই ছলিমের বাজারের শরীফ, ছালাম, তাছমুন, কুসুম, ফারুক, চাঁদখানা নগরবন গ্রামের নিশাত, কাকনসহ কতিপয় প্রতারক চাঁদখানা, বাহাগিলী, পুটিমারী, কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় প্রতারনার জাল বিস্তৃত করেছে। বিশেষ করে নিতাই ও বাহাগিলীতে এদের দৌরাত্ম্য বেরেছে বেশি। অদৃশ্য গডফাদার থাকায় থাইগেম জুয়া ও ভিসা চক্রের সদস্যরা সহজ সরল মানুষ ও প্রবাসিদের টাকায় ফুলে ফেঁপে উঠেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রতারক চক্রের সদস্যরা জানান প্রবাসীরা ভিডিও দেখে থাই গেমের গোপন নম্বর ও আকামার জন্য ইমুতে যুক্ত হন। থাই সরকারের লটারী কার্যালয়ে ও ভিসার ক্ষেত্রে ইউরোপে চাকরির কথা জানানো হয়। টাকার বিনিময়ে থাইগেমে রেম্বল, ডাউন নম্বর অথবা ভিসার ক্ষেত্রে আবেদন ফরম নেন। পরে তাদের ছবি, ব্যাংক এ্যাকাউন্ট নম্বর ও কাগজ পত্র নিয়ে গেম উইন অথবা ভিসা পাওয়ার কথা জানানো হয়। বড় স্যার, ভ্যাটের খরচ, ডলার কনভার্ট, ভিসার ক্ষেত্রে বিমান ভাড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্র দেখিয়ে একাধিকবার টাকা নেয়া হয়। গেম ড্র হওয়া ও ভিসা দেয়ার তারিখের আগে তাদের ইমুতে ব্লক করে দেয়া হয়।
প্রতারনার শিকার কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, তাদের ফেসবুক ভিডিওতে কোটি টাকার থাই গেমের উইন নম্বর ও ইউরোপের ভিসা দেয়ার প্রলোভন দেখানো হয়। পরে সেই ইমুতে যুক্ত হলে প্রতারকরা কৌশলে তাদের টাকার হাতিয়ে নেয়। এতে প্রবাসীসহ তাদের পরিবারও প্রতারনার শিকার হচ্ছে। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ থানার ওসি (প্রশাসন) আশরাফুল ইসলাম বলেন, থাই গেম ও ভিসা প্রতারনার ঘটনায় সাইবার নিরাপত্তা আইনে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। মোবাইলের ডিভাইসগুলো পরিক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পরিক্ষার ফলাফল আসলে আমরা চার্জশীট কোর্টে পাঠাবো। এছাড়াও গত বৃহস্পতিবার ৪ জনকে গ্রেফতার করে জেলে হাজতে পাঠানো হয়েছে। প্রতারনার ফঁাদ কিভাবে পাততে হয় এ ধরনের একটি ভিডিও দেয়া হলো।