লেখকঃ অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক রাজু,গ্রন্থঃ বরেন্দ্রভূমির বরেণ্যরা।
মরমী শিল্পী আব্বাসউদ্দীন আহমেদ ১৯০১ সালে২৭ অক্টোবর তুফানগঞ্জ মহকুমার বলরামপুর গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। পিতা উকিল জাফর আলী আহমেদ।তিন সন্তানঃ বড় ছেলে বাংলাদেশের সাবেক নবম প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল।মেঝ ছেলে সুলেখক ও জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী মোস্তফা জামান আব্বাসী।একমাত্র মেয়ে বাংলাদেশের নন্দিত কন্ঠশিল্পী ও বাংলাদেশ বেতারের প্রথম কণ্ঠশিল্পী ফেরদৌসী রহমান।
স্হায়ী বসবাস দেশ বিভাজনের ডামাডোলে আব্বাস উদ্দিন আহমেদ কুচবিহার থেকে ১৯৩১সালে কলকাতায় যান।১৯৪৭ সাল পর্যন্ত কলকাতায় থাকার পর ১৯৪৮ সালে পূর্ববঙ্গের নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এই পথ চলা শুরু হয় কাজী নজরুল ইসলামের অনুরোধে ও শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের মন্ত্রিত্বের সময় তাকে রেকর্ডিং স্পার্ট হিসেবে চাকুরী দেওয়ার মাধ্যমে।
স্থায়ী চাকরি ঢাকায় এসে তিনি সরকারি প্রচার দপ্তরে এডিশনাল সং অর্গানাইজার হিসেবে চাকরি করেন।পাশাপাশি কাজী নজরুল ইসলাম ও কবি জসিম উদ্দিন এর গানগুলি একের পর এক কন্ঠ দিতে থাকেন।
দেশের প্রতিনিধী দেশের প্রতিনিধি হিসেবে ১৯৫৫ সালের ম্যনিলাই দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সংগীত সম্মেলনে যোগদান করেন।১৯৫৬ সালে জার্মানিতে আন্তর্জাতিক লোকসংগীত সম্মেলনে প্রতিনিধিত্ব করেন।১৯৫৭ সালে রেঙ্গুইনে প্রবাসী বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেন।
আরও পড়ুন:পাবিপ্রবিতে গবেষণা শেখার ওয়ার্কশপ শুরু করেছে সলভার গ্রিন।
চলচ্চিত্রে অভিনয় আব্বাস উদ্দিন আহমেদ মোট চারটি বাংলা চলচ্চিত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় অভিনয় করেন।বিষ্ণু মায়া(১৯৩২) মহানিশা (১৯৩৬)একটি কথা(১৯৪০) ঠিকাদার(১৯৪০) এছাড়াও কয়েকটি সিনেমাতে তিনি ছোটখাটো চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। প্রসঙ্গত এই সিনেমাগুলিতে তিনি গান কন্ঠ দিয়েছিলেন। তথ্যসূত্রঃ সাক্ষাৎকারে এই তথ্যগুলি বলেছিলেন কলকাতার বাংলা চলচ্চিত্রের আরেক কিংবদন্তি অভিনেত্রী বগুড়ার মেয়ে কাননবালা দেবী।
প্রথম রেকর্ডিং কাজী নজরুল ইসলামের পিড়াপিড়িতে আব্বাস উদ্দিন আহমদ কুচবিহার ছেড়ে কলকাতায় আসেন এবং কাজী নজরুলের ইসলামের সহায়তায় প্রথম গান রেকর্ডিং করেন গানটি ছিল “কোন বিরহীর নয়ন জলে বাদল ঝরলো গো” তার রেকর্ডিং করা গানের সংখ্যা ৭০০ রও উপরে।
বহুমুখী গান আব্বাস উদ্দিন আহমেদ রংপুর ও কুচবিহার অঞ্চলের ভাওয়াইয়া, চিরল, চটকা, জারি, শারি, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, বিচ্ছেদি, দেহতত্ত্ব, মর্সিয়া ও পালা গান দরদ ভরা কন্ঠে গিয়ে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন। কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দীন ও গোলাম মোস্তফা এই ত্রিরত্নের ইসলামী ভাবধরার প্রায় সব গান গেছেন তিন দশক বাংলা চলচ্চিত্রের একসপত্র ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দিন আহমেদ।
পুরস্কার প্রাইড অফ পারফরম্যান্স পুরস্কার ১৯৬০সন।
শিল্পকলা একাডেমী পুরস্কার ১৯৭৯ সন।
স্বাধীনতা পুরস্কার ১৯৮১সাল। সহ দেশি-বিদেশি বহু পুরস্কার অর্জন করেন।
মরমে কণ্ঠশিল্পী আব্বাস উদ্দিন আহমেদ দীর্ঘদিন সংগীত জগতের একচ্ছত্র আধিপত্যের পর ৩০ ডিসেম্বর ১৯৫৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
তথ্যসূত্র
সেলিনা হোসেন-
বাংলা একাডেমি চরিতাভিধান (প্রথম খন্ড)
সুভাষ চন্দ্র সেনগুপ্ত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান।(প্রথম খন্ড) বাংলাদেশ প্রতিদিন ১৪ জুলাই ২০২৬সন প্রথম আলো ২৮ অক্টোবর ২০১৯ সন।
তার গাওয়া জনপ্রিয় গানঃ
(১) ওকি গাড়িয়াল ভাই কত রবো আমি পন্হের পানে
(২) আমার গলার হার খুলে নে ওগো ললিতে আমায়। (৩) আমায় এত রাতে কেন ডাক দিলি প্রান কোকিলা।
(৪) নদীর কূল নাই কিনার নাই রে উপারে মেঘের।
(৫) আগে জানলে তোর ভাঙ্গা নৌকায় চড়তাম না।
(৬) আমার হার কারা করলাম রে দেহ কালার লাই
(৬) আমায় ভাষাইলিরে আমায় ডুবাইলিরে অকুল।
(৭) প্রেম জানে না রসিক কালাচান পেম জানেনা।
(৮) আল্লাহ মেঘ দে পানি দে ছায়া দে দেরে আল্লাহ।
(৯) ফান্দে পড়িয়া বগা কান্দেরে ফান পাতাইছে।
ইত্যাদি।