উত্তর গাজার বেইত লাহিয়া শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলার পর শিশুসহ অন্তত ৯৩ জন মারা গেছে বা নিখোঁজ হয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এক ‘ভয়াবহ’ বলে অভিহিত করেছে। এ ঘটনার পর বেইত লাহিয়ায় আক্রমণের নিন্দা করে ইসরায়েলের কাছ থেকে ব্যাখ্যা চেয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘আমেরিকা ইসরায়েলের কাছ থেকে ঘটনার বিষয়টি স্পষ্ট করতে বলেছে।
আমরা জানতে চাই. ঠিক কী হয়েছিল?’ তিনি আরো বলেন, ‘কী করে একটা আক্রমণের ফলে এতজন শিশুর মৃত্যু হতে পারে আমরা এই প্রশ্নের জবাব চেয়েছি। কিন্তু এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব পাইনি।’
উদ্ধারকারীরা জানিয়েছেন, একটি পাঁচতলা আবাসিক ভবনে আঘাত হানে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, মেঝেতে কম্বলে ঢাকা রয়েছে বহু মৃতদেহ।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলেছে, তারা বেত লাহিয়া এলাকায় আজ (মঙ্গলবার) বেসামরিক নাগরিকদের ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার খবর সম্পর্কে অবগত। ঘটনার বিস্তারিত খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) গত দুই সপ্তাহ ধরে উত্তর গাজায় বিশেষ করে জাবালিয়া, বেইট লাহিয়া এবং বেইত হানুন এলাকায় কাজ করছে।
মঙ্গলবার ভোরে বেইট লাহিয়াতে ২৫ শিশুসহ কমপক্ষে ৯৩ জন নিহত হয়েছেন।
জাতিসংঘের মধ্যপ্রাচ্য দূত বেইট লাহিয়ায় ইসরায়েলি ভয়াবহ এ হামলার নিন্দা করেছেন। টর ওয়েনেসল্যান্ড বলেছেন, ইসরায়েলের আক্রমণে তিনি হতবাক।
জাবালিয়ার নিকটবর্তী কামাল আদওয়ান হাসপাতালের পরিচালক হুসাম আবু সাফিয়া বার্তা সংস্থা এএফপিকে বলেছেন, হাসপাতালে শিশুদের চিকিত্সা করা হচ্ছে। তবে কর্মী ও ওষুধের অভাবে রোগীদের চিকিৎসা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আবু সাফিয়া বলেন, ‘সেনাবাহিনী আমাদের মেডিক্যাল টিম ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করার পর প্রাথমিক চিকিৎসার উপকরণ ছাড়া কামাল আদওয়ান হাসপাতালে আর কিছুই অবশিষ্ট নেই।
’ ইসরায়েলি বাহিনী গত সপ্তাহে হাসপাতালের বেশ কয়েকজন চিকিৎসা কর্মীকে আটক করেছে, মাত্র তিনজন চিকিৎসককে রেখে গেছে। আইডিএফ গত সপ্তাহে হাসপাতালে অভিযান চালিয়ে বলেছিল, হাসপাতালটি হামাস যোদ্ধারা ব্যবহার করছে।
স্টেট ডিপার্টমেন্টের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেছেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই ঘটনায় বেসামরিক মানুষের জীবনহানির ঘটনায় গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। এটি একটি ভয়াবহ পরিস্থিতি।’ তিনি হামলায় বহু শিশু নিহত হওয়ার খবর উল্লেখ করেছেন। মিলার বলেন, ‘সর্বশেষ হামলায় বেসামরিকরা দুঃখজনক মূল্য দিয়েছে, এ কারণেই এই যুদ্ধের সমাপ্তি দেখতে হবে।’
ইসরায়েল বলেছে, উত্তর গাজায় তাদের অভিযান হামাসকে পুনঃসংগঠিত হওয়া থেকে দূরে রাখতে নকশা করা হয়েছে। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে ইসরায়েল বলেছে, জাবালিয়ায় ৪০ জন ‘সন্ত্রাসী’ হত্যা করা হয়েছে এবং মধ্য গাজায় গত ২৪ ঘন্টায় অনেক ‘সন্ত্রাসী’কে নির্মূল করেছে।
উত্তর গাজা স্ট্রিপ গভীরতর মানবিক সংকটের মুখোমুখি। কয়েক হাজার মানুষ হতাশাজনক পরিস্থিতিতে বসবাস করছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক শুক্রবার বলেছেন, ‘ইসরায়েলি সেনাবাহিনী পুরো জনসংখ্যার ওপর বোমাবর্ষণ, অবরোধ এবং অনাহারের ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।’
সোমবার ইসরায়েল ও তাদের অধিকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে ফিলিস্তিনি শরণার্থী বিষয়ক জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএর কার্যক্রম তিন মাসের মধ্যে নিষিদ্ধ করে পার্লামেন্টে বিল পাস করেছে। এতে গাজায় ত্রাণ সরবরাহ নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। গাজায় ত্রাণ বিতরণ মারাত্মকভাবে প্রভাবিত হতে পারে বলে সতর্কতা দেওয়া হয়েছে।
গাজায় এখন পর্যন্ত ইসরায়েলি হামলায় ৪২ হাজার ৯২৪ জনের বেশি লোক নিহত হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনুসারে, ইসরায়েলি বাহিনী বেসামরিক এবং যোদ্ধাদের মধ্যে পার্থক্য করে না হামলা চালায়। এদিকে ইসরায়েল বিবিসিসহ গণমাধ্যম সংস্থার আন্তর্জাতিক সাংবাদিকদের গাজায় স্বাধীনভাবে প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না, যার ফলে ঘটনাস্থলের সত্যতা যাচাই কঠিন হয়ে পড়েছে।
সূত্র: বিবিসি, রয়টার্স