Homeজেলাবাংলাদেশে প্রথম শহীদ মিনার তৈরীর গর্বিত অংশীদার নওগাঁ জেলার সূর্যসন্তান ডাক্তার...

বাংলাদেশে প্রথম শহীদ মিনার তৈরীর গর্বিত অংশীদার নওগাঁ জেলার সূর্যসন্তান ডাক্তার মঞ্জুর হোসেন

লেখক অধ্যাপক মোঃ আব্দুর রাজজাক( রাজু)। গ্রন্থ, বরেন্দ্রভূমির বরেণ্য।

পরিচয়, ডাক্তার মনজুর হোসেন।পিতা মোঃ মোবারক আলী। মাতাঃ মোসাম্মত নুরুন্নাহার বেগম। ঠিকানাঃ নওগাঁ সদর উপজেলার পার নওগাঁ মহল্লার সুলতানপুর গ্রামে। এই দম্পতির ৮ সন্তানের মধ্যে ডাক্তার মঞ্জুর দ্বিতীয়। জন্ম ১৫ই জুন ১৯২৮ সাল। ডাক্তার মনজুরের চার ছেলে দুই মেয়ে।
১৯৪৩ সালে নওগাঁ সরকারি কে,ডি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস,এস,সি ১৯৪৫ সালে কলকাতা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট। ও ১৯৪৯ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এম, বি,বি,এস পরীক্ষায় কৃতিতে সাথে উন্নীত হন।
প্রতিবাদ শুরু’ পশ্চিম পাকিস্তানের শোষণের বিরুদ্ধে ডাক্তার মঞ্জুর প্রতিবাদ শুরু করেন। তখন তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজের শেষবর্ষের ছাত্র ছিলেন। ১৯৪৯ সালে সরকারের বিভিন্ন অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ দিবসে তিনি প্রথম সোচ্চার বক্তব্য সহ বিশেষ ভূমিকা রাখেন।
প্রথম শহীদ মিনার তৈরী। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ, ১৯৫২ সালের ২০ শে ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে গোলাম মাওলার কক্ষে ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। এতে সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটিতে মতবিরোধ দেখা দেয়। সেখানে ডাক্তার মঞ্জুর দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন ১৪৪ ধারা ভাঙবই ভাঙবো।পরেরদিন মেডিকেল ব্যারাকের এক স্বতঃস্ফূর্ত সমাবেশে প্রতিবাদী বক্তব্য দিয়েছিলেন ডাক্তার মনজুর হোসেন।
সেদিন রাতে ফজলুল হক হলের পুকুর পাড়ে ১১ জন ছাত্রনেতা ১৪৪ ধারা ভাঙ্গার সিদ্ধান্ত নিতে এক গোপন বৈঠকে বসেন। সেখানে ঢাকা মেডিকেল কলেজের একমাত্র প্রতিনিধী ছিলেন তিনি।
শহীদ মিনার তৈরির সেই মহেন্দ্রক্ষণঃ
২৩ শে ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সামনে কয়েক জন ছাত্র জনতা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে রাতে নিজেরাই ইট, সিমেন্ট ও বালু দিয়ে প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ করেন।এই প্রথম শহীদ মিনার নিজ হাতে তৈরি করার অন্যতম কারিগর ছিলেন নওগাঁ জেলার গর্বিত সন্তান আমাদের অহংকার ডা মনজুর হোসেন।
ভাষা আন্দোলনের সাহসী ও সংগ্রামী ভূমিকার জন্য সহযোদ্ধারা তাকে “বিপ্লবদা” উপাধি দিয়েছিলেন। ২৪ শে ফেব্রুয়ারি সেনাবাহিনী সকালে সর্বপ্রথম শহীদ মিনারটি ভেঙ্গে ফেলেন। ভাষা আন্দোলনের অংশ নেওয়ার জন্য ডাক্তার মনজুরকে বহুবার কারা ভোগ করতে হয়।
১৪৪ ধারা ভঙ্গকারী মিছিলের প্রথম দলের নেতৃত্বে ছিলেন হাবিবুর রহমান শেলী, ডাক্তার মনজুর হোসেন ও আকমল হোসেন।
দ্বিতীয় দলের নেতৃত্বে-ইব্রাহীম তোয়াহা, আব্দুস সামাদ আনোয়ারুল হক খান, আবুজাফর ওবায়দুল্লাহ।
ছাত্রী দলের নেতৃত্বে- সাথিয়া খাতুন, নীলিমা ইব্রাহিম, রওশন আরা বাচ্চু ও শামসুন্নাহার।
ডা মনজুর হোসেনের তৃতীয় ছেলে হাসান ইমাম তমাল বলেন বাবাকে মোট ১৭বার গ্রেফতার করা হয়।
গরিবের ডাক্তার, গরিব-দুঃখীদের চিকিৎসার জন্য তিনি অনেক আত্মত্যাগ করেন ডাক্তার মনজুর চিকিৎসা বিজ্ঞানে উচ্চতর ডিগ্রী অর্জন করেও সরকারি চাকুরী না করে নিজ জন্মস্থানে চেম্বার খুলে চিকিৎসা জীবন শুরু করে এবং আজীবন তিনি স্বল্পমূল্যে গরীব দুঃখীদের চিকিৎ সার এই পেশা অব্যাহত রাখেন।


আরও পড়ুন:প্রভাবশালীদের হাতে আটকা ব্যাংকের ৭৬ হাজার কোটি টাকা!


সংস্কৃতি কর্মী,
১৯৬৭ সালে ডিসেম্বর মাসে নওজোয়ান মাঠে মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নেতৃত্বে কৃষক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। রাতে সংস্কৃতি অনুষ্ঠানে গোঁড়া পন্থীদের দ্বারা বাধাএলে সংস্কৃতি কর্মী কামাল লোহানির নেতৃত্বে ৪০ জন যুবকের একটি প্রতিরোধ বাহিনীর গঠন করা হয়।এতে বরেণ্য সুরকার আলতাফ মাহমুদ, ডাক্তার মঞ্জুর হোসেন, আমানুল হক, শিল্পী অজিত রায়, নিজামুল হক,সংঙ্গীতগুরু মমিনুল হকভূটি, পাকিস্হান পন্থিদের প্রতিরোধের লক্ষ্যে অংশগ্রহণ করেন।
(সূত্রঃ আমানুল হক- নওগাঁ)।
চিকিৎসা পেশার পাশাপাশি ডাক্তার মঞ্জুর সাংবাদিক তার সঙ্গে জড়িত ছিলেন।তার পিতা,মো মোবারক আলীর উদ্যোগে ও সম্পাদনায় প্রকাশিত সাপ্তাহিক “দেশেরবাণী” পাঠক কুলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। ১৯৬০সালে ডাক্তার মঞ্জুর পত্রিকাটির সম্পাদনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন।
অন্যান পত্রিকায় মানুষের জীবিকার অধিকার, মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার, চাকুরীর অধিকার,সমপর্যায়ের জীবন মানের অধিকার, এই সকল সত্য প্রকাশ করতে গিয়ে তাকে বিভিন্ন সময় কারাদণ্ডসহ নানা মানসিক নির্যাতন সহ্য, করতে হয়েছে। সংস্কৃতিমনা এই মানুষটি সম্পাদনা ছাড়াও আবৃতি সংগীত চর্চা ও লেখালেখি করতেন। (মোস্তফা আল মেহমুদ পৃষ্ঠা ৪৭)।
১৯৬৮ সালের ৪ ডিসেম্বর ডাঃ মন্জুর মাত্র ৪০ বৎসর বয়সে নওগাঁয় ইন্তেকাল করেন।

সর্বশেষ খবর